প্রতীকী ছবি
যান্ত্রিক ও কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা প্রতিনিয়তই ছুটছি। রুটিনে বাঁধা ব্যস্ততায় প্রায়ই নিজের যত্ন নিতে ভুলে যাই অনেকে। কিন্তু শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে সময় দিয়ে, কিছুটা সময় ‘আমার আমিতে’ হারিয়ে গিয়ে নিজেকে প্রতিবার নতুন করে আবিষ্কার করাটাও আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খানিকটা সময় নিজেকে সঙ্গ দেওয়া আমাদের ব্যক্তিগত বিকাশ ও মানসিক পরিবর্ধনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
একাকিত্বের অনুভূতি বড়ই জটিল একটি বিষয়। অনেক মানুষের মধ্যে থাকলেই একজন মানুষ একাকী অনুভব করবে না- এমনটি নয়। একাকিত্ব এমন একটি অনুভূতি, যা ভিড়ের মধ্যে থাকলেও অনুভূত হতে পারে।
জীবনে সফলতার পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করতে নিয়মিত নির্জনে একাকী কিছু সময় কাটানো ও মাঝেমধ্যে একা থাকা উচিত বলে মনে করেন মানসিক বিশেষজ্ঞরা।
নতুন কিছু করতে চেষ্টা করুন: নিজের গণ্ডি থেকে বের হয়ে প্রতিদিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে রাস্তায় একা হাঁটুন, চাইলে কোনো ক্যাফেতে বসে কফি পান করুন, বই পড়ুন। আবার যেকোনো পার্কে গাছের ছায়ায় বই নিয়ে বসা যায়। সঙ্গে এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না। নতুন কিছু শেখা যায় এ সময়। হতে পারে তা ছবি আঁকা, নতুন কোনো ভাষা শেখা। একা একা একান্ত নিজের পছন্দমতো মুভি বা নাটক দেখতে যাওয়া যায়। একাকী সময় উপভোগে আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এতে জীবন উপভোগ করতে সব সময় অন্যের সঙ্গের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় না।
পছন্দের কাজ করুন: একাকিত্বের সময়টুকু আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে প্রতিমুহূর্তে নিজের জন্য কিছু না কিছু করুন। নিজের যত্ন নিন, পছন্দের বইটি পড়ুন, প্রিয় গান শুনুন, একটু বাইরে হাঁটতে বের হোন, নতুন ধরনের খাবার খান। জমে থাকা যে কাজগুলো সময়ের অভাবে করা হয়ে উঠছিল না, সেগুলো শেষ করে ফেলুন। নিজের ক্যারিয়ার, মানসিক অবস্থা, স্বাস্থ্য—সবকিছু নিয়েই আলাদা করে একটু ভাবুন। কীভাবে স্বাস্থ্যগত ও মানসিকভাবে আপনি আরও ভালো থাকতে পারেন, সেগুলো নিয়ে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন সময় নিয়ে।
আত্মনিয়ন্ত্রণ করা শিখুন: দৈনন্দিন জীবনের কোলাহল ও নানা রকম চাপ সামলে আমাদের প্রত্যেকেরই দিন শেষে উদ্যম ফিরে পেতে নিজেকে রিচার্জ করে নিতে হয়। একাকী সময় কাটানোর মাধ্যমেই একমাত্র এটি সম্ভব। একাকী থাকার সময় আপনি যে শান্তি, নীরবতা ও মানসিক স্থিতি অনুভব করেন, তা আপনাকে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার ধকল থেকে মুক্ত করতে সহায়ক হবে।
মননশীলতার চর্চা করুন: জীবনের লক্ষ্য ও কর্মস্পৃহা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত মননশীলতার চর্চা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মননশীলতার চর্চায় আমাদের আত্মা বা মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধ্যান বা মেডিটেশন করা খুব উপকারী একটি বিষয়। যেকোনো নেতিবাচক ভাবনা আমাদের মানসিক দৃঢ়তা কমিয়ে দেয়। নেতিবাচক চিন্তা আমাদের কর্মস্পৃহাও হ্রাস করে ফেলতে পারে। তাই মনকে শান্ত ও দৃঢ় রাখতে নিয়মিত মেডিটেশনের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
সহজ জীবনবোধে বিশ্বাসী হোন: একাকিত্ব ও নির্জনতা জীবনকে সহজ করে। সারা দিন কী কী করলেন, আপনার দিনের পরিকল্পনা কতটুকু সফল হলো, কতটুকু অসম্পূর্ণ থাকল, সফল হতে আর কী করা যেতে পারে, তা ভাবার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একাকী সময় একটি ভালো সুযোগ। এসব ছাড়াও সম্পর্কের জটিলতা ও সমস্যাগুলো সমাধানের পথ খুঁজে পেতেও গুরুত্বপূর্ণ এ সময়।
এম হাসান