মানুষ নিজের দুর্বলতা বুঝতে খুব একটা পারদর্শী নয়। আমরা অন্যদের অহংকার বা নির্বুদ্ধিতা নিয়ে অভিযোগ করি, কিন্তু নিজেদের চরিত্রে থাকা ত্রুটিগুলো সচরাচর ভাবনায় আনি না।
আমাদের বন্ধুত্বেও এই বিষয়টি কাজ করে। কখনো কখনো আমরা না বুঝেই আমাদের প্রিয় মানুষদের কষ্ট দিই। ইচ্ছাকৃত নয় বরং অসতর্ক আচরণের কারণেই এই ক্ষতিগুলো তৈরি হয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘The Laws of Connection’ বইতে ডেভিড রবসন বলেছেন, ‘ambivalent relationships’ (যেখানে সম্পর্ক কখনো ভালো আবার কখনো খারাপ হয়) আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য আরও ক্ষতিকর হতে পারে। তবে কিছু ছোট্ট পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। নিচে এমন ৫টি কৌশল আলোচনা করা হলো, যেগুলো বিষাক্ত বন্ধু হয়ে ওঠা এড়াতে সহায়তা করবে।
১. স্থির ও নির্ভরযোগ্য হোন
কেউ অনিশ্চয়তায় থাকতে পছন্দ করে না। যেমন শারীরিক যন্ত্রণার ক্ষেত্রে মানুষ নিশ্চিত হলে মানসিক চাপ কম অনুভব করে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, বন্ধুত্বে অনিশ্চয়তা মানুষের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। যখন আমরা আমাদের মনের খারাপ অবস্থা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিই, তখন তা বন্ধুর মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। তাই যতটা সম্ভব নির্ভরযোগ্য ও স্থির থাকা উচিত।
২. ভুল ধারণা এড়ান
আমরা প্রায়ই ভাবি অন্যরা আমাদের অনুভূতি বুঝতে পারে। কিন্তু বাস্তবে আমাদের মনের অবস্থা অন্যরা সবসময় বুঝতে পারে না।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কৃতজ্ঞতার কথা প্রকাশ করলে মানুষ যেমন বিস্মিত হয়, তেমনই ভালো অনুভব করে। তাই শরীরী ভাষার ওপর নির্ভর না করে স্পষ্টভাবে আপনার অনুভূতি প্রকাশ করুন।
৩. অন্যের অনুভূতি সম্মান করুন (তবে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়তা করুন)
বন্ধুর সমস্যাগুলো শুনুন, তবে শুধু সহানুভূতি জানানো নয়, তাদের সমস্যার সমাধানে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেখানোর চেষ্টা করুন।
গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ভেন্ট করানোর চেয়ে (অভিযোগ শোনার চেয়ে) কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করার নতুন দিক দেখানো বন্ধুর মানসিক চাপ কমাতে বেশি কার্যকর।
৪. সাফল্য উদযাপন করুন (এবং খুশি ভাগাভাগি করুন)
বন্ধুত্বে যেমন সহানুভূতি গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সাফল্যের সময় একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করাও প্রয়োজন।
গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকেই অন্যদের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন না করে বা উদাসীনভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে এমন আচরণ এড়ানো উচিত।
একইভাবে নিজের সাফল্যও বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভয় পাবেন না। গোপন রাখলে তা সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে পারে।
৫. সবার আগে ক্ষমা চেয়ে নিন
ভুল করা মানুষের স্বভাব, তবে ক্ষমা না চাইলে সম্পর্কের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়।সঠিকভাবে ক্ষমা চাইতে হলে, ভুল স্বীকার করুন, দুঃখ প্রকাশ করুন, সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিন এবং একই ভুল ভবিষ্যতে এড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিন।
প্রতিটি সম্পর্কেই উত্থান-পতন থাকে। তবে এই ৫টি সহজ কৌশল প্রয়োগ করে আপনি আপনার বন্ধুত্ব আরও মজবুত করতে পারেন এবং এমন বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন, যাকে সবাই চাইবে।
নাহিদা