ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

মায়ের পুষ্টিতে শিশুর স্বাস্থ্য

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ১৮:১৭, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

মায়ের পুষ্টিতে শিশুর স্বাস্থ্য

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় ক্রিয়াশীল তাতে নানামাত্রিক অসমতাও দৃষ্টিকটু। সমাজের সমসংখ্যক নারীর জীবন ও স্বাস্থ্য সন্তানের স্বাচ্ছন্দ্যময় এগিয়ে চলার নিয়ামক শক্তি। বিশ^ সৃষ্টির ঊষা লগ্ন থেকেই জন্মদাত্রী মায়ের পরিচয় ছিল আদিম বন্য দশার এক অভাবনীয় এগিয়ে চলা। অবাধ স্বেচ্ছাচার আর দলগত বিয়েতে পিতৃ পরিচয়ের সুযোগই ছিল না। মায়ের জঠর থেকে সন্তানের ভূমিষ্ঠ ইতিহাসের আর এক গৌরবোজ্জ্বল পালাক্রম তো বটেই। তাই পারিবারিক বলয় শুরু হওয়ার প্রারম্ভিক পর্যায় ছিল কাদের নিয়ে আদিম বন্য মানুষেরা পরিবার গঠন করবে। বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো ছিটানো আদিম গোষ্ঠী যখন পরিবার নামক সমাজ সংগঠনেরও ভিত্তি তৈরি করে সেখানে সবার আগে সামনে এসে যায় মাতৃত্বের অপার মহিমা। শুধু কি তাই? মায়ের গর্ভ থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়াও ছিল আর এক অরুণোদয়ের অনন্য দীপ্তি। পিতৃ পরিচয় তখন অবধি সুদূর পরাহত। দলগতভাবে যে পরিবার আদিম সমাজে সংহতি তৈরি করে তা ছিল কিন্তু মাতৃতান্ত্রিক আবহ। আগেই উল্লেখ করা হয় সন্তানের জন্মদাত্রী চিহ্নিত হলেও পিতার পরিচয় জানতে মানবগোষ্ঠী আরও অপেক্ষমাণ থাকতে হয়েছে। কোনো এক সময় একক বিবাহে মানবজাতি সংগঠিত হলে পিতার পরিচয়ও চলে আসে প্রশ্নাতীতভাবে। তাতে কি মায়ের মহিমার ক্ষুণ্ন্ন হয় কখনো? সেই আদি সমাজ থেকে আজ অবধি জঠরে ধারণ করে সন্তানকে লালন করা। কোনো এক শুভ মুহূর্তে পৃথিবীর আলো দেখানো মাতৃত্বের চিরস্থায়ী রূপ শৌর্যের আজ অবধি কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু সভ্যতার চরম উৎকর্ষে বিজ্ঞান যখন বিশ^কে নতুন আলোর কিরণছটা ছড়িয়ে দিচ্ছে তখন থেকে সমসংখ্যক নারীর জীবন অসমতা, বৈষম্য এবং নির্যাতনের চরম আকালে পরিণত হওয়াও সভ্যতা সূর্যের কালো দাগ। কিন্তু নারীর যে সফল ও মহিমান্বিত রূপ মাতৃত্বে তাতে সামান্যতম স্খলন না হওয়াও আধুনিক প্রযুক্তির আলোকিত পরিবেশের পরম নির্মাল্য। কিন্তু হরেক অসমতা আর দৃষ্টিকটু বিভাজনে নারীর যে অনাকাক্সিক্ষত পিছু হটা তাও সমাজ সভ্যতার অধোগতি। আধুনিকতার নতুন সময়েও বলা হচ্ছে সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তানের জন্য মায়ের বিকল্প অন্য কিছুই নয়। তা কিন্তু জঠরে লালন পালন করা থেকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা এক পর্যায়ক্রমিক এগিয়ে চলা। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মায়ের নিবিড়তম ছোঁয়া ছাড়াও স্বাস্থ্যগত অবস্থারও পরম নিশানা। বলা হচ্ছে একজন সুস্থ মাই জাতিকে শ্রেষ্ঠ সন্তান উপহার দিয়ে পুরো গঠন প্রক্রিয়ায় যে অবারিত ভূমিকার দায়িত্ব পালন করে যায় তাও এক অমূল্য সম্পদ দেশের জন্য। সঙ্গত কারণে মাতৃস্বাস্থ্য ও নতুন সময়ের যুগ পরিক্রমায় এক অতি আবশ্যক সম্ভার, সম্বল তো বটেই। তবে দুর্বল ও রুগ্ন মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে যেমন নিজে ঝুঁকির মধ্যে পড়েন তার চেয়ে বেশি সংকটাপন্ন হতে থাকে নতুন প্রজন্মের বিপন্ন শিশুটি। তাই মায়ের স্বাস্থ্যগত সচেতনতা আগামী প্রজন্মের নতুন জীবন গড়ার সবচেয়ে নিয়ামক শক্তি। সঙ্গত কারণে বৈষম্যহীন নতুন সরকার গঠন কার্যক্রমে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও নজরদারিতে থাকা সময়ও পরিস্থিতির অনিবার্যতা। নারী সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা সময়ের যোদ্ধারা বলছেন নারী স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ সচেতনতা একান্ত জরুরিই শুধু নয় নবজাতকের প্রতি দায়বদ্ধতাও বটে। নারীর অপুষ্টিকে দূর করতে নতুন নীতিমালা ও কর্মসূচি অত্যাবশ্যক। যার জন্য পুরো ব্যবস্থাপনার নীতি ও কৌশল আধুনিক সময়ের প্রাপ্যতা। নারী নেত্রীরা আপত্তি তুলছেন এখনো সমাজের বৈষম্যমূলক পুরনো অপসংস্কারে সমসংখ্যক ভুক্তভোগী। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের সন্তানসম্ভবা মায়েদের অর্ধেকই রক্ত স্বল্পতায় আক্রান্ত। যা শিশু জন্ম থেকে আরম্ভ করে সার্বিক জীবনের এক করুণ অধ্যায়। আর এমন দুর্বিপাকের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে স্বাধীনতাহীনতা আর অধিকার আদায়ে ক্রমান্বয়ে পিছু হটা। আমরা এখনো সেই পারিবারিক বলয়ের চিরস্থায়ী সামাজিক সংগঠনের মধ্যে মিলে মিশে বাস করি। পরিবার এখনো সমাজের আদি ও অকৃত্রিম প্রতিষ্ঠান। তাই মাতৃস্বাস্থ্যের সার্বিক দেখভালও ছোট্ট সংগঠন পরিবার থেকে শুরু করা বাঞ্ছনীয় এবং ন্যায্যতা। দেশের এখনো সিংহভাগ এলাকা গ্রামীণ পরিবেশে টিকে আছে। তাই পরিবার থেকেই নারী স্বাস্থ্যের বিশেষ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সার্বক্ষণিক কর্মযোগ অব্যাহত রাখাও জরুরি। একান্নবর্তী পরিবার হলে অন্যান্য সদস্যের দায়বদ্ধতা এসে যায়। গর্ভবতী মায়ের সেবা-যত্ন পুষ্টিকর খাদ্য পরিবেশন সবই। গাফিলতিটা হয় কিন্তু সেখানেই। আর একক পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর যে বন্ধন সেখানে স্বামী যদি সচেতন থাকেন অন্য কোনো ঝুঁকি কিংবা ঝামেলা অবকাশই থাকে না।
গৃহিণী মায়েদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের আয়োজন তো বটেই। কর্মজীবী অন্তঃসত্ত্বা মায়ের জন্যও জরুরি সব ধরনের প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থাপনার। পুষ্টিকর খাবার মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য এক অপরিহার্য বিষয় সেখানে গর্ভবতী মাকেও তার স্বাস্থ্য আর সন্তানের বিশেষ যত্ন আত্তির পালন করাও প্রতিদিনের অতি আবশ্যক কর্তব্য। সেখানে কোনো গাফিলতি কিংবা ঘাটতি মা ও আগত শিশুর স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা বিচলিত হওয়ারই মতো। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ও নৈমিত্তিক এবং প্রাসঙ্গিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে একজন স্বাস্থ্যকর মাই একটি সুন্দর ও পরিচ্ছিন্ন জাতি উপহার দিয়ে দেশ ও জনগণকে সমৃদ্ধির পথে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিত করতে পারেন।

×