ছবি: সংগৃহীত।
বর্তমান যুগে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং দীর্ঘ জীবনের প্রাপ্তি আমাদের জীবনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য শুধু সঠিক খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়ামই যথেষ্ট নয়; কিছু সহজ অভ্যাসও আপনাকে দীর্ঘায়ু এবং সুস্থ জীবন দিতে পারে। সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় এমন কিছু অভ্যাসের খোঁজ পাওয়া গেছে, যা আপনার জীবনের আয়ু অন্তত পাঁচ বছর বাড়িয়ে দিতে পারে। চলুন জেনে নেই সেই অভ্যাসগুলো:
সঠিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা গভীরভাবে এবং সচেতনভাবে শ্বাস নেন, তারা মানসিক চাপ কমাতে সক্ষম হন, যা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। ফলে তাদের আয়ু বৃদ্ধি পায়।
মনোযোগী হওয়া
আজকাল অনেকেই তাদের জীবনযাপন নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন, তবে গবেষণায় বলা হচ্ছে, যারা নিজেকে মুহূর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ মনোযোগী রাখতে পারেন, তাদের শরীর এবং মন সুস্থ থাকে। "মাইন্ডফুলনেস" বা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করলে জীবনের গুণগত মান উন্নত হয় এবং দীর্ঘায়ু লাভের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
বিভিন্ন গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, নিয়মিত শরীরচর্চা করা মানুষের শরীরের সাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ৩০ মিনিটের দৈনন্দিন হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটা আপনাকে একটি শক্তিশালী হার্ট এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করতে পারে, যা আপনার আয়ু বৃদ্ধি করে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস
খাদ্যাভ্যাসের সাথে জড়িত অভ্যাসও জীবনের আয়ু বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, ফলমূল, শাকসবজি, কম তেল-মশলার খাবার, এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার ও শর্করা কম খাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা
এমন একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, যারা সামাজিক সম্পর্ক শক্তিশালী রাখেন, তাদের আয়ু বেড়ে যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করা মানসিক শান্তি এনে দেয়, যা শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যাদের ভালো সামাজিক সুসম্পর্ক রয়েছে, তারা দীর্ঘদিন সুস্থ থাকে।
পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুমের অভাব শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। ঘুমের মধ্যে শরীর পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া চালায়, ফলে দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, যারা নিয়মিত গভীর এবং পর্যাপ্ত ঘুম নেন, তাদের হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
চর্বি কমানো
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা তাদের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সক্ষম হন, তাদের আয়ু বেড়ে যায়। স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের মেদ কমানো, দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা
এছাড়া মানসিক চাপের উপর বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মনোযোগী থাকলে এবং চাপ কমানোর উপায় অনুসরণ করলে আপনি নিজেকে সুস্থ রাখতে পারবেন।
গবেষণাগুলো থেকে পরিস্কার, আপনার দৈনন্দিন অভ্যাস এবং জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে আপনার আয়ু বাড়তে পারে। সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাস, ব্যায়াম, সুষম খাদ্য, সামাজিক সম্পর্ক এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করার মাধ্যমে আপনি অন্তত পাঁচ বছর বেশি বাঁচতে পারেন। আপনার জীবনে এই ছোটখাটো পরিবর্তনগুলো এনে আপনি সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারেন।
নুসরাত