ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ভাত খেয়েও কি ওজন কমানো যায়?

প্রকাশিত: ২২:০০, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ভাত খেয়েও কি ওজন কমানো যায়?

ছবি: সংগৃহীত।

বাঙালির পাতে ভাত থাকবে না এটা ভাবাই যায় না। দেখা যায় ওজন কমানোর জন্য অনেকেই ভাত খাওয়া থেকে বিরত থাকেন ও প্রথমেই ডায়েট থেকে ভাত বাদ দিয়ে দেয়। এতে দেখা যায় অনেকেই দুর্বল হয়ে পড়ে, আবার অনেকে ভাত পুরোপুরি ছাড়তেও পারে না। কিন্তু আপনি জানেন কি ভাত খেয়েও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়? ভারতীয় গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী পুষ্টিবিদদের মতে, ভাত খেলে মোটা হয়ে যেতে হবে—প্রথমে এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এমন ভুল ধারণা পুষে রাখার কোনো মানেই নেই।

পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, সুষম খাদ্যের সঙ্গে অল্প পরিমাণে ভাত খাওয়া সম্ভব এবং এতে মোটা হয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কাও নেই। এমনকি ফ্যানা ভাত খেলেও ওজন বেড়ে যায় না। বরং ভাত খেলে উচ্চ রক্তচাপসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেক্ষেত্রে, দিনে ১৫০ গ্রাম ভাত খাওয়া যেতে পারে, যা সাধারণত ৫০০ ক্যালোরির বেশি শরীরে ঢোকে না। যদি ভাতের সাথে কম তেলে রান্না করা ডাল, সবজি, মাছ, ডিম- এসব খাওয়া যায়, তাহলে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূর্ণ হয়, তেমনি ক্যালোরির পরিমাণও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

এমন কিছু পদ্ধতি রয়েছে যার মাধ্যমে ভাত খেয়েও ওজন কমানো সম্ভব। আজকের এই ফিচারে আমরা জানবো কীভাবে ভাত খেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমানো যেতে পারে।

ওজন কমানো বা বাড়ানো নির্ভর করে আমাদের দৈনন্দিন ক্যালোরি গ্রহণ এবং খরচের ওপর। সাধারণত ভাত হলো এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট যা শরীরে শক্তি যোগায়। তবে, এটি অতিরিক্ত খেলে ক্যালোরি অতিরিক্ত হয় এবং ওজন বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু, আপনি যদি সঠিক পরিমাণে ভাত খান এবং সঠিক খাবারের সঙ্গে ভারসাম্য রাখেন, তবে ভাত খেয়েও ওজন কমানো সম্ভব।

১. ভাতের পরিমাণ কমান
ওজন কমানোর প্রথম ধাপ হলো খাদ্যের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা। ভাত কম পরিমাণে খেলে তা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করবে, কিন্তু অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করবে না। সাধারণত, এক বাটি ভাত (যা প্রায় ১৫০-২০০ গ্রাম) ২০০-২৫০ ক্যালোরি যোগ করতে পারে। তবে, যদি আপনি ভাতের পরিমাণ কমান এবং অন্য পুষ্টিকর খাবার যেমন শাক-সবজি, সালাদ, প্রোটিন যুক্ত খাবার খান, তবে সেটি আপনার ওজন কমাতে সহায়ক হবে।

২. ভাতের ধরন নির্বাচন করুন
যদি আপনি ভাত খেতে চান এবং ওজন কমাতে চান, তবে সাদা ভাতের পরিবর্তে ব্রাউন রাইস বেছে নেওয়া ভালো। ব্রাউন রাইসে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে, যা হজমের সহায়তা করে এবং দীর্ঘসময় পেটে ভরা ভাব রাখতে সাহায্য করে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

৩. ভাতের সঙ্গে সঠিক খাদ্য মিলিয়ে খান
শুধু ভাত খেলে তা তেমন উপকারী হবে না, কারণ এতে প্রোটিন বা স্বাস্থ্যকর গুনাগুন নেই। তাই, ভাত খাওয়ার সময় প্রোটিন যেমন ডাল, মুরগির মাংস, মাছ, অথবা পনির যুক্ত খাবার খান। সাথে প্রচুর পরিমানে শাক-সবজি এবং সালাদ যোগ করুন। এই খাবারগুলো পেটকে সঠিকভাবে ভরে রাখতে এবং আপনাকে অপ্রয়োজনীয় খাওয়ার প্রবণতা থেকে দূরে রাখবে।

৪. নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম
ভাত খেয়েও যদি ওজন কমাতে চান, তবে নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা জিমে গেলে আপনার ক্যালোরি বার্ন হবে এবং আপনার মেটাবলিজমও উন্নত হবে।

৫. পানির গুরুত্ব
ওজন কমানোর জন্য শুধু খাবারের ওপর নির্ভরশীল হলে হবে না, পর্যাপ্ত পানি পান করাও গুরুত্বপূর্ণ। পানি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। ফলে, খাবারের সঙ্গে সঠিক পরিমাণ পানি পান করুন।


সুতরাং, ভাত খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব, তবে এর জন্য আপনাকে ভাতের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, স্বাস্থ্যকর খাদ্য বেছে নিতে হবে এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। ভাত একা কোনো সমস্যা নয়, যদি আপনি সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনায় এটি খান। তবে মনে রাখবেন, এক দিনের বদলে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এবং এতটুকু বলতে পারি, ভাত খাওয়ার সঠিক উপায় এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তন আপনাকে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

নুসরাত

×