সংগৃহীত ছবি।
চিনিযুক্ত খাবার শিশুদের খুব পছন্দের। সাধারণত মায়ের দুধের পর শিশুরা অন্য খাবার খাওয়া শুরু করলে, তখন থেকেই তাদের চিনিযুক্ত খাবারের প্রতি আকর্ষণ শুরু হয়। এটি সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে, এবং দিনে দিনে চিনি খাওয়ার পরিমাণও বাড়তে থাকে।
কিন্তু শিশুর জীবনের প্রথম এক হাজার দিন বা তিন বছর যদি চিনিমুক্ত রাখা যায়, তাহলে তা ভবিষ্যতে অনেক রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সম্ভাবনা বাড়ায়। নতুন একটি গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণাটি অনুসারে, প্রথম জীবনে চিনি না খাওয়ার ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি ২০ শতাংশ কমে যায়। গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে- সায়েন্স জার্নাল এ, এবং এটি পরিচালনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক। এই গবেষণার অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যে ১৯৫৩ সালের আগে ও পরে জন্ম নেয়া শিশুদের নিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাজ্যে চিনিসহ বিভিন্ন খাবারের কেনার পরিমাণ সীমিত ছিল। সে সময় সরকার একটি অস্থায়ী আইন প্রণয়ন করেছিল, যার ফলে মানুষ নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি চিনি কিনতে পারত না। কিন্তু ১৯৫৩ সালে এ আইন উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং এরপর চিনি খাওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে। এর প্রভাব প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক চিনির ব্যবহারেও স্পষ্টভাবে দেখা যায়, যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
এই গবেষণাটি করা হয় - ইউকে বায়োব্যাংক এর স্বাস্থ্য তথ্যের ভিত্তিতে। এটি একটি বৃহৎ বায়োমেডিকেল ডেটাবেইস, যা স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা পরিচালনা করে। ১৯৫১ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৫৬ সালের মার্চের মধ্যে জন্ম নেয়া প্রায় ৬০,১৮৩ জনের উপর ছয় বছর ধরে গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, যেসব শিশুদের জন্মের সময় চিনি কেনার পরিমাণ সীমিত ছিল, তাদের মধ্যে স্থূলতার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কম ছিল। অন্যদিকে, যেসব শিশু জন্মের পর থেকে চিনি খাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে, তাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এই গবেষণা শিশুদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য চিনির পরিমাণ কমানোর গুরুত্ব আরও একবার প্রমাণিত করেছে। বিশেষ করে প্রথম ৩ বছর চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা হলে ভবিষ্যতে তাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
নুসরাত