ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

সকাল বেলার সেরা নাস্তা

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ১২ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৩:৫৪, ১২ নভেম্বর ২০২৪

সকাল বেলার সেরা নাস্তা

সংগৃহীত ছবি।

পুরান ঢাকার রাস্তাগুলোর একেকটি কোণে লুকিয়ে আছে নানা ঐতিহ্য, স্বাদ আর ইতিহাস। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল লালবাগের মদিনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, যা বিশেষ করে সকালে আসা মানুষের জন্য এক আদর্শ নাস্তার জায়গা। ঢাকা শহরের নানা এলাকা থেকে নানা বয়সী গ্রাহক আসেন পুরান ঢাকার লালবাগের মদিনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। আয়তনে খুব বেশি বড় না হলেও পুরান ঢাকার বুকে এর মতো আর কোনো জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে একেবারে হাতে তৈরি মিষ্টির স্বাদ নিতে পারেন, সেই সঙ্গে বিখ্যাত কিছু নাস্তা দিয়ে দিন শুরু করতে পারেন আপনার সকাল।

গতানুগতিক হোটেলের বাইরে কাঠের বেঞ্চ আর টি-টেবিল দিয়ে বৈঠক খানার আদলে সাজানো ছোট্ট খাবারের জায়গা। একজন বেঞ্চ থেকে উঠতে না উঠতেই ফের দখল হয়ে যায় বসার জায়গা। প্রায়ই জায়গার জন্য অপেক্ষা করতে হয় দাঁড়িয়ে। নিয়মিত গ্রাহকের পাশাপাশি প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ আসেন নানাজনের কাছ থেকে এখানকার মিষ্টির গল্প শুনে। লালবাগ কেল্লার কাছেই রহমতুল্লাহ বয়েজ হাইস্কুলের সামনে অবস্থিত দোকানটি।

মদিনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের ইতিহাস:

১৯৭৬ সালের কথা, যখন অনেক তরুণই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে শুরু করেন, তখন লালবাগের অধিবাসী এবং মেট্রিক পরীক্ষার্থী ওয়াজির আহাম্মদ তার পরিবারের অমতেই শুরু করেছিলেন মদিনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। ১৯৭০-এর দশকে পুরান ঢাকার রাস্তায় মিষ্টির ছোট একটি দোকান শুরু করা ছিলো তার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। 

সকালে কি কি নাস্তা পাওয়া যায় এখানে?

মদিনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সকাল শুরু হয় সুস্বাদু নাস্তায়, যা খেতে খুবই দারুন। ৫২ বছর আগে মদিনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অল্প সময়েই গ্রাহকের মন জয় করে নিয়েছিল এখানের নাস্তার স্পেশাল সবজি ভাজি। বাঁধাকপি-আলু আর নানা ধরনের সবজি দিয়ে বানানো হয় এই মিক্সড ভাজি। শুরুতে হোটেলের জনপ্রিয়তা বাড়ার পেছনে এই ভাজির অবদান অনেক। সকালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় এটা। প্রায়ই কাস্টমাররা এসে নাস্তায় ভাজি না পেলে বকাবকি শুরু করে দেয় দোকানীদের! কেন বেশি করে ভাজি বানায় না তা নিয়ে চলে অভিযোগ।

এখানে আরও যা পাওয়া যায়:

  • কাশ্মীরি হালুয়া: ঘিয়ে ভাজা মালাই-এর সাথে রঙবেরঙের জেলি দিয়ে সাজানো হয় শাহী কাশ্মীরি হালুয়া। 
  • জাফরান ভোগ: ঘন দুধের রসে জাফরান ভিজিয়ে বানানো হয় ছানার মিষ্টি জাফরান ভোগ।
  • বাদাম সর: সর আর বাদামের মিশ্রণে বানানো হয় বাদাম সর।
  • সিঙ্গারা ও সমুচা: মিহি ময়দার সাথে সঠিক পরিমাণ মশলা এবং মাংস বা আলুর ভরপুর মিশ্রণ, যা একেবারে খাস্তা এবং মুচমুচে হয়ে থাকে।
  • লুচি ও আলুর দম: ভাজা লুচির সাথে মসলা মাখানো আলুর দম, যা খেতে খুবই দারুণ।
  • চপ: সোনালি বাদামী রঙের চপ, যা মাংস বা আলু দিয়ে তৈরি করা হয়।
  • হালুয়া: গাজরের হালুয়া বা মুগ ডালের হালুয়া, যা মিষ্টি স্বাদে পুরোপুরি পূর্ণ এবং মুখে দিলেই সাথে সাথে গলে যায়।
  • খাস্তা পরোটা ও দই: মদিনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের খাস্তা পরোটা এবং টক দই এর জনপ্রিয়তা অনেক। সকালে খাওয়া এই বিশেষ নাস্তায় সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক। খাস্তা পরোটা আর দই স্বাদে একদম অতুলনীয়।

জাফরান ভোগ, মালাই চপ, বাদাম সরের মতো জনপ্রিয় মিষ্টিগুলো প্রতি পিস ৬০-১০০ টাকায় পাওয়া যায়।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্য এবং স্বাদপ্রেমীদের মাঝে মদিনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এক বিশেষ জায়গা তৈরি করেছে। এখানে একদিকে যেমন নানান রকমের মিষ্টি পাওয়া যায়, তেমনি অন্যদিকে নাস্তার নানান আয়োজন রয়েছে। এটি শুধু খাওয়ার জায়গা নয়, বরং একটি ঐতিহ্য। এখানে আসলেই পুরান ঢাকার সেই ঐতিহ্যবাহী স্বাদ খুঁজে পাওয়া যায়, যা আজকাল খুব কম-ই দেখা যায়।

নুসরাত

×