মরিচ, হলুদ, আদা—এ ধরনের মসলা আমাদের খাদ্যাভ্যাসের অংশ হয়ে উঠেছে শত শত বছর ধরে। এগুলোর স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আমাদের মধ্যে নানা প্রচলিত ধারা রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ মসলা ব্যবহার করে আসছে, যা কখনো কখনো দৈনন্দিন খাদ্যের চেয়ে স্বাস্থ্যরক্ষায় ‘সুপারফুড’ হিসেবে প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি মসলা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে?
উল্লেখ্য, মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ২০১৬ সালের প্রচারণাকালে প্রতিদিন একটি করে মরিচ খেতেন, যা তার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক বলে দাবি করা হয়েছিল। তেমনিভাবে, হলুদও এশিয়ায় প্রচলিত একটি বহুল ব্যবহৃত মসলা, যা গত কয়েক বছরে বিশেষ করে মহামারিকালে ‘ইমিউনিটি বুস্টার’ বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে প্রচারিত হয়েছিল। আবার বিখ্যাত পপ তারকা বিয়ন্সের ২০১৩ সালের বিতর্কিত ‘বিয়ন্স ডায়েট’ ছিল মরিচ, ম্যাপল সিরাপ, লেবুর মিশ্রণ; যা মূলত ওজন কমানোর জন্য ব্যবহৃত হতো।
এখন প্রশ্ন হলো, মসলা আসলেই আমাদের খাদ্যে স্বাস্থ্য উপকারিতা যোগ করতে পারে কিনা, কিংবা এটি রোগ প্রতিরোধে কতটুকু সহায়ক? একাধিক গবেষণায় মসলার উপকারিতা এবং ক্ষতিকর প্রভাব দুই-ই উঠে এসেছে।
মরিচের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও ঝুঁকি
মরিচের সক্রিয় উপাদান হলো ক্যাপসাইসিন। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মরিচ খাওয়া দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য উপকারিতা দিতে পারে। ইতালিতে ২০১৯ সালে করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা সপ্তাহে অন্তত চারদিন মরিচ খান তাদের মৃত্যুঝুঁকি অন্যদের তুলনায় কম। একই ধরনের গবেষণা চীনের ৫ লাখ মানুষের উপর চালানো হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন মরিচ খাওয়া ব্যক্তিদের মৃত্যুঝুঁকি ১৪% কম দেখা গেছে। বিশেষ করে ক্যানসার, হার্টের রোগ ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগের ঝুঁকি কমানোর বিষয়টি উঠে এসেছে।
তবে এর মানে এই নয় যে, মরিচ খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্যগত উপকার পাওয়া যাবে। চীনা গবেষণায় দেখা গেছে, মরিচের উপকারিতা দীর্ঘমেয়াদী অভ্যাসে গড়ে ওঠে। গবেষকরা আরও বলেন, মরিচের ক্যাপসাইসিন উপাদান রক্তে কোলেস্টেরল এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
মসলার বিপরীত প্রভাব
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. জুমিন শি মরিচ খাওয়ার সাথে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক সম্পর্ক খুঁজে পেলেও স্মৃতিশক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব দেখেছেন। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিদিন ৫০ গ্রাম বা এর বেশি মরিচ খেলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ মসলায় থাকা স্বাদ ও গন্ধদানকারী উপাদানগুলি ক্ষতিকর নয়, তবে অতিরিক্ত গ্রহণে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অ্যাস্টন মেডিক্যাল স্কুলের ডায়েটিশিয়ান ডুয়েন মেলর বলেন, “যদিও অনেক মসলার উপাদান তিক্ত বা মৃদু বিষাক্ত হলেও আমরা সহনশীল হয়ে উঠেছি এবং খাদ্যে নিরাপদ মাত্রায় তা গ্রহণ করছি।”
তবে বিশেষজ্ঞরা এও মনে করেন, আমাদের নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে মসলার উপকারিতা যতই প্রচলিত থাক, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা স্বাস্থ্য বাড়াতে বড় কোনো প্রভাব ফেলতে সক্ষম নয়।
নাহিদা