.
ভ্রমণ, কর্মস্থল বা আড্ডা যেখানেই যাবেন পোশাকের পাশাপাশি যে বিষয়টি সবার আগে ভাবতে হয় তা হলো জুতা বা শু নিয়ে। যেভাবেই নিজেকে পরিপাটি করুন না কেন পায়ের জুতা জোড়া মানানসই না হলে সবটাই হয়ে যায় মলিন। তাছাড়া আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাকের সঙ্গে পরিবর্তন আনতে হয় জুতায়ও। হাল ফ্যাশনে কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের আগমন উপলক্ষে উষ্ণতার খোঁজে অনেকেই বেছে নিচ্ছে স্নিকারস শু। এটি টিনএজ ও তরুণীদের ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। বিশেষত বন্ধুদের সঙ্গে যে কোনো জায়গায় ঘুরতে গেলেও এই জুতা হতে পারে উপযুক্ত ফ্যাশনসঙ্গী। শীত এলেই মেয়েদের পায়ে শোভা পায় রং-বেরঙের স্নিকার্স, লোফার ও কেডস। তবে স্নিকার্সের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। স্নিকার্সের মধ্যে ফ্লাট সোল যেমন আছে, তেমনি বুট স্টাইলের হাইনেকও আছে। মেয়েদের জন্য এসব স্নিকার্স আলাদাভাবে তৈরি করা। উপকরণ ম্যাটেরিয়াল হিসেবে লেদার, আর্টিফিশিয়াল লেদার, রেক্সিন, কনভার্স ও ডেনিমের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। রঙের ক্ষেত্রে গাঢ় ও হাল্কা দুটোই আছে। আরও আছে প্রিন্টের স্নিকার্স। নকশা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গ্লিটার, অ্যাম্ব্রয়ডারি, কারচুপি। ওয়েস্টার্ন পোশাকের পাশাপাশি টপ, সালোয়ার-কামিজ এমনকি শাড়ির সঙ্গেও দুর্দান্ত ম্যাচিং হয় এসব স্নিকার্স।
টি-শার্ট ও জিনসের সঙ্গে জুতার শখ্য তো বহু আগের, কিন্তু শাড়ির সঙ্গে স্নিকার্স ফ্যাশনে ভিন্ন আবেদন নিয়ে এসেছে। শোরুম ঘুরে দেখা গেল, ছেলেরা তিন ধরনের স্নিকার্স বেশি কিনছে। স্নিকার্স হাইনেক, স্নিকার্স স্পোর্টস ও স্নিকার্স ওয়াশঅ্যাবল। তরুণদের কাছে সাদার পাশাপাশি কালারফুল হাইকাট স্নিকার্সের চাহিদাও বেশি।
শীতে ভোরের আলো কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে। স্বল্প দূরত্বের জিনিসগুলোও লাগে অস্পষ্ট। এক অপরূপ স্নিগ্ধ প্রকৃতিতে প্রাণ ভরে যায়। শীতের হিমশীতল অনুভূতি সবারই ভালো লাগে। তবে এ সময়ে ঠান্ডাজনিত নানা রোগও যায় বেড়ে। এ জন্য চলাফেরায় বাড়তি সতর্কতার জন্যই অনেকেই বেছে নিচ্ছেন স্নিকার্স। স্নিকার্স স্পোর্টসওয়্যার হিসেবেও পরিচিত। এ সময়ে স্নিকার্স আরাম এবং স্টাইল দুটোই যোগ করবে। নিত্য ব্যবহার থেকে শুরু করে জমকালো অনুষ্ঠানেও পরতে পারেন। এখন প্রতি সপ্তাহেই নিত্যনতুন ব্র্যান্ডের নানা ডিজাইনের স্নিকার্স আসছে বাজারে। তাই আপনার পুরনো স্নিকার্সটি ধুয়ে মুছে শুকিয়ে পরার পাশাপাশি চোখ বুলিয়ে নিন এ বছরের ফ্যাশনে নতুন কোনো স্নিকার্স যুক্ত হচ্ছে কিনা! আপনার জন্য মানানসই এবং আরামদায়ক কি না সেটাও যাচাই করে নিন। আমাদের দেশেই তৈরি হচ্ছে রং-বেরঙের স্নিকার্স। ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ ও সাভার ইপিজেডে বেশ কিছু স্নিকার্স জুতার কারখানা গড়ে উঠেছে। স্নিকার্স তৈরির উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করে এখানেই মেনুফ্যাকচারিং করা হয়। যার ফলে দাম অপেক্ষাকৃত কম হয়। আর নিত্যনতুন ডিজাইনেরও পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্নিকার্স চায়না ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি হয়েও আসে। ব্র্যান্ড ও ননব্র্যান্ড দুই ধরনের স্নিকার্সই পাওয়া যায় অভিজাত জুতার আউটলেটগুলোতে। ফুটপাতের স্নিকার্স বেচাকেনাও থাকে এ সময়ে বেশ জমজমাট।
দর-দাম : দেশে তৈরি স্নিকার্সের দাম পড়বে হাজারের ওপরে। ফিতাসহ ও ফিতা ছাড়া দুটোই আছে। দাওয়াত বা অনুষ্ঠানে পরতে পারেন এমন ফ্যাশনেবল স্নিকার্সের দাম হবে দুই হাজার থেকে তিন হাজারের মধ্যে। বর্তমানে হাল্কা রং, সাদা, নেভি ব্লু, রেড, সি গ্রিন বেশি দেখা যাচ্ছে। স্নিকার্সের হোয়াইট সোলে রয়েছে নানা রঙের বৈচিত্র্য। স্নিকার্স হিসেবে অ্যাডিডাসের ক্ল্যাসিক ডিজাইন, লোগো, স্ট্রাইপ সবার পছন্দের তালিকায় আছে। ব্র্যান্ডের জুতা কিনতে চাইলে লোটো, বাটা, অ্যাপেক্স, বে, অরিয়ন, ক্রিসেন্ট ইত্যাদি ব্র্যান্ডের যে কোনো শাখায় যেতে পারেন। এ ছাড়া ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, উত্তরা বা মিরপুরের বিভিন্ন দোকানে মিলবে নন-ব্র্যান্ডের ক্যাজুয়াল জুতা ও স্নিকার্স। এগুলোর দাম নির্ভর করে উপাদানের মান ও ব্র্যান্ডের ওপর।
দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায় : প্রিয় যে কোনো জিনিসই যতেœ রাখা প্রয়োজন। তা পোশাক হোক বা জুতা। জেনে নেওয়া যাক কনভার্স বা স্নিকার্স কীভাবে বেশি দিন টিকবে। এক্ষেত্রে এই জুতা হাতের সাহায্যে পরিষ্কার করাই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। ব্রাশের সাহায্যে স্নিকার্সের ধুলাবালি ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। এবারে এক কাপ গরম পানিতে এক টেবিল চামচ ডিশ ওয়াশার মিশিয়ে এতে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে ভেজা কাপড়ের সাহায্যে জুতার বাইরের অংশ পরিষ্কার করে নিন। জুতার ফিতা সাবান পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে ধুয়ে নিন। এবারে জুতা দুটিকে পেপার টাওয়েল দিয়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে রেখে দিতে হবে কিছুক্ষণের জন্য। এতে করে জুতার বাড়তি পানি পেপার টাওয়েল শোষণ করে নেবে। এরপর জুতাগুলো ঘরোয়া তাপমাত্রায় ও বাতাসে রাখতে হবে শুকানোর জন্য। রোদে কিংবা চুলার পাশে রেখে শুকানো যাবে না। এতে করে জুতার রং ও আকার দুটিই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।