তাপসী রাবেয়া ২০১৯ সালে উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন
বাংলাদেশ উন্নয়নের পরিকল্পনায় সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সমান তালে। সমসংখ্যক নারী তেমন যাত্রাপথের অনন্য অংশীদার। উন্নয়ন মহাযোগে বাংলাদেশের সমসংখ্যক নারীর দৃষ্টিনন্দনভাবে এগিয়ে চলা সময়ের ন্যায্যতা। সেখানে শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকখানি। এক সময় নারী শিক্ষা তেমন অবারিত আর স্বাচ্ছন্দ্য ছিলো না। উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলায় নারী শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয় ১৯৮৫ সালে বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।
তার আগে মিশনারী বিদ্যালয়গুলোতে ভদ্র ঘরের বালিকারা পড়তে যেত না। তাই এমন জমাটবদ্ধ সমাজ ব্যবস্থায় নারী শিক্ষায় যার নাম সবার আগে উঠে আসে তিনি ঈশ^রচন্দ্র বিদ্যাসাগর। নিজ উদ্যোগে বহু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে মেয়েদের জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করছেন তা শুধু ইতিহাস নয়, আজ অবধি নজির। তার পর থেকে গুটি গুটি পায়ে অবিভক্ত বাংলায় নারী শিক্ষার যে দরজা খুলে গেল সেখানে আজ তারা হাতে গোনার অবস্থানে নেই। বর্তমান সময়ে নারীরা শিক্ষায় অনেক এগিয়ে আছে। গ্রাম থেকে শহরে সবখানে নারীদের জয়জয়কার। নারীরা কৃতকর্মের মাধ্যমে সমাজে তাদের অবস্থান তৈরি করেছেন।
গ্রামবাংলার নারীরা শুধু গৃহকর্মে সীমাবদ্ধ নেই। গৃহকর্মের বাইরে বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হয়ে কর্মদক্ষতায় প্রশংসীয় হচ্ছে। নারীরা বিভিন্ন পেশার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন এর মধ্যে অধিক সংখ্যক নারী শিক্ষকতা পেশার প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। শিক্ষাখাতে নারীরা অগ্রণী ভূমিকাও রাখছে। নারীরা শিক্ষকতার মাধ্যমে সমাজকে নিরক্ষরমুক্ত করার চেষ্টা করছেন। শিক্ষকতা মহান পেশা এবং তা অধিক সম্মানের বলেই নারীরা শিক্ষকতায় বেশি এগোচ্ছে। তেমনি এক নারী তাপসী রাবেয়া বসরী। তিনি একজন অদম্য শিক্ষিকা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন।
শিক্ষকতায় সম্মান খ্যাতি সবই অর্জন করেছেন। শিক্ষার্থীদের কাছে হয়েছেন প্রিয় শিক্ষিকা। তাপসী রাবেয়া বসরী সরকারি আকবর আলী কলেজের সুপরিচিত প্রফেসর তোফাজ্জল হোসেন ও জাহানারা বেগম দম্পত্তির কনিষ্ঠা কন্যা। ১৯৯৪ সালে তিনি স্বনামধন্য পাগলা বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তারকা চিহ্ন পেয়ে এসএসসি, ১৯৯৬ সালে এইচএসসি, ১৯৯৯ সালে বিএ (সম্মান) এবং পাবনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএড ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষা জীবন থেকে তাপসী রাবেয়া বসরী অতি মেধাবী ছিলেন।
কলেজে পড়াকালীন সময় থেকে তিনি বিনামূল্যে গ্রামের নিরক্ষর ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। এছাড়া তিনি অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে টিউশনি করান ফলে কলেজ জীবন থেকেই শিক্ষক হিসেবে এলাকায় তিনি পরিচিতি লাভ করেন। বাবা শিক্ষক হওয়ার সুবাদে কাছ থেকে একজন শিক্ষকের জীবনযাপন ও শিক্ষকের আত্মসম্পর্কে তিনি ধারণা পান। বাবার অনুপ্রেরণায় তিনি শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহী হন। ২০০৪ সালে তাপসী রাবেয়া বসরী সলপের নলসোন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
এরপর থেকে শুরু হয় তার শিক্ষকতার জীবন। অল্প দিনে তিনি সেখানে সুনাম অর্জন করেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি যেখানে পড়ালেখা করেছেন সেই পাগলা বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পাগলা বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে তাপসী রাবেয়া বসরী তার মেধা মনন দিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। আন্তরিক, মিষ্টভাষী, বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে খুব কম সময়ের মধ্যে তিনি শিক্ষক হিসেবে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে অতি পরিচিত হয়ে ওঠেন। ন্যায়পরায়ণ, সততা ও আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে জাগিয়ে তোলেন।
২০১৯ সালে তিনি উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন এবং টিসিজি প্রশিক্ষণের মাষ্ঠার ট্রেইনার নির্বাচিত হয়ে টানা তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় পাগলা বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়কে তিনি উপজেলার চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে নির্বাচিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে একুশে বই মেলায় পাগলা বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের স্টল ও শিক্ষার্থীদের দিয়ে ডিসপ্লে উপস্থাপনের মাধমে এই উপজেলা জুড়ে বিদ্যালয়ের সুনাম অর্জন করেছেন।
শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে পুরস্কার অর্জনও করেছেন। তবে একটা বিষয় খুব উৎফুল্লের সঙ্গে উচ্চারণ করলেন মাতৃত্বের মহিমায় মা-সন্তানের নিবিড় সম্পর্ক। সেখানে কন্যা আর জননীর অচ্ছেদ্য বাধন মধুময়, সুখাচ্ছন্ন। একমাত্র সন্তানও তার কাছে তেমন আদরের আর মাধুর্যের।
সাংস্কৃতিক দ্যোতনায় নিজেকে উজাড় করে দিতে ভালো বাসেন সেই ছোট বেলা থেকেই। গান কবিতা আবৃত্তি চিত্রাংকন তার বেশি প্রিয়। সংতকারণে কবিতা লেখা আর আবৃত্তি করার তাড়না সবসময় বয়ে বেড়ান। বই প্রকাশ না হলেও তিনি লিখে যাচ্ছেন অবিরত। মিলে মিশে আনন্দ করে সবার সঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন তিনি। সব মিলে তাপসী রাবেয়া বসরী অদম্য একজন শিক্ষকা। যে কিনা তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দীক্ষায় আলোকিত করার চেষ্টা করছেন। তার আগামীর জীবন যেন আরও এগিয়ে নিতে পারেন এমন শুভকামনা বরাবরই সঙ্গে থাকবে।