ক্যাপ্টেন তাসমিন দোজা
একটা সময় ছিল যখন মেয়েরা গাড়ি চালাচ্ছে দেখলে চোখ কপালে উঠত। যেন সপ্তম আশ্চর্যের একটি। পাশের বাসার সঙ্গীতা আপু গাড়ি চালাচ্ছেন শুনে আমরা দল বেঁধে ছুটে গিয়েছিলাম তাকে দেখতে। বাসায় এসে মাকে গল্প করেছিলাম- ওমা জানো, সঙ্গীতা আপাকে আজ দেখলাম গাড়ি চালাচ্ছে। মা মিটিমিটি হাসছিলেন। সেই সময়টায়ই হঠাৎ একদিন শুনলাম একজন মহিলা পাইলট প্লেন ক্রাশে মারা গেছেন।
মেয়ে পাইলট, মানে প্লেন চালায়! তিনি ছিলেন খুবই দুঃসাহসী এবং বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পাইলট কানিজ ফাতেমা রোকসানা। খুব ছোট ছিলাম তখন। বড়দের কথা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে শোনা ছাড়া কিছু বলার ছিল না। তবে ঘটনাটা মনে দাগ কেটেছিল খুব। তাই সেই অবুঝকালে শোনা নামটা আজও মন থেকে মুছে যায়নি।
সময় পাল্টেছে। মেয়েরা এখন অবাধে গাড়ি চালাচ্ছে। পথে বের হলেই সাইকেল, স্কুটি চালিয়েও যেতে দেখা যাচ্ছে। তবে আমার হিসাবে এখনো সেই সংখ্যা খুবই কম। তাই এত বছর পরও মেয়েদের গাড়ি, স্কুটি বা সাইকেল চালাতে দেখলে আমরা তাকিয়ে থাকি। তবে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছেÑ এখন দেখি মুগ্ধ হয়ে।
কানিজ ফাতেমা রোকসানা তার ক্ষুদ্র জীবনে রচনা করে গেছেন নতুন ইতিহাস। উড়তে শিখিয়ে গেছেন পরের প্রজন্মের নারীদের। এখন বিমানের আছে ১৫ জন অভিজ্ঞ নারী পাইলট, যা পুরুষের তুলনায় আন্তর্জাতিক গড় সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। ৩৪৫ জন প্রশিক্ষিত ও দক্ষ নারী কেবিন ক্রুও আছেন।
সম্প্রতি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ক্যাপ্টেন তাসমিন দোজা। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম নারী পরিচালক তিনি। ১৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ এক অফিস আদেশে তাকে চিফ অব ট্রেনিং থেকে ফ্লাইট অপারেশন্স পরিদপ্তরের পরিচালক করা হয়েছে। ক্যাপ্টেন তাসমিন ১৯৬৮ সালের ২২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করেন ক্যাপ্টেন তাসমিন দোজা। তিনি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি থেকে পিএ-৩৮ মডেলের উড়োজাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৯৩ সালে বিমানের ক্যাডেট পাইলট হিসেবে নিয়োগ পান।
ক্যাপ্টেন তাসমিন দোজার পাইলট এবং কো-পাইলট হিসেবে প্রায় ১২,৬৪৩ ঘণ্টা এবং প্রশিক্ষক হিসেবে ফকার এফ-২৮ এবং বোয়িং-৭৩৭ মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার ঘণ্টা উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সর্বশেষ বিমানের ফ্লাইট পরিচালন বিভাগের চিফ অব ট্রেনিং বা প্রধান প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ছিলেন তাসমিন দোজা। জানা গেছে, বিমানের মোট ৪ জন পাইলট এই পদের জন্য আবেদন করলেও সিভিল এভিয়েশনের পরীক্ষায় পাস করেছেন একমাত্র ক্যাপ্টেন তাসমিন দোজা। যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে- সত্যি তাই। মেয়েরা আজ সমানতালে সংসার, সন্তান, চাকরি, ব্যবসা সবই করছে। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন তো এখন হাতের মুঠোয়। শুধু চাই পারিবারিক সহযোগিতা।