রাজনীতিতে নারী
রাজনীতি সার্বিক সমাজ কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান। রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমেরও এক অবধারিত অঙ্গ সংগঠন। সমসংখ্যক নারীরও সেখানে অংশগ্রহণ দেশ ও জাতির অনন্য যাত্রাপথ তো বটেই। সঙ্গত কারণে তাদের পিছিয়ে পড়া কাক্সিক্ষত কিংবা ন্যায্যতা পায় না। বরাবরই এমন প্রশ্ন উঠতে থাকে রাজনীতিতে নারীর এগিয়ে চলা সেভাবে সন্তোষজনক নয়। সেটা গত শতাব্দীর ক্রান্তিলগ্ন থেকে একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকেও।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতদ্বৈততা, হরেক বিতর্কিত পর্যায় থাকা সত্ত্বেও সেই ১৯৯১ সাল থেকে ২০২৪ অবধি প্রায়ই দুই যুগেরও অধিক সময় নারী নেতৃত্ব দেশের শাসন পরিচালনায় মূল পদে অধিষ্ঠিত থাকা ও জাতির জন্য কম পাওয়া নয়। কিন্তু সাধারণ নারীরা কেমন যেন রাজনীতির প্রতি উদাসীন, অনীহাই শুধু নয় বিচ্ছেদের পাহাড়ও তৈরি করতে থাকেন। যা সমসংখ্যককে গুরুত্বপূর্ণ চেতনা থেকে পিছু হটতে বাধ্য করে। তবে সাংবিধানিক নিয়ম মোতাবেক দেশের ৩৩ শতাংশ নারীর রাজনৈতিতে অংশগ্রহণ আবশ্যক। সেখানেও নারীর ক্রমাগত পিছু হটা চেতনাগত উপলব্ধিতে কিছুটা ফারাক তো থেকেই যায়।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে দৃশ্যমান হয়ে দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতেও নারী নেতৃত্বের সংকট বিদ্যমান। যার কারণে রাজনীতিতে আওয়ামী নারী নেতৃত্ব ১৮ শতাংশ আর সেখানে বিএনপিতে নারীরা থাকছেন মাত্র ১৫ শতাংশ। সংখ্যার দিক থেকে মোটেও সুখকর নয়। নারী নেতৃত্বে অংশ নেওয়ার কিছু যৌক্তির পারদর্শিতা অত্যাবশ্যক। সেখানে সুস্থ, সচেতন পারিবারিক আবহ, নারী শিক্ষা, সামাজিক অনুকূল প্রতিকূলতা থেকে যোগ্যতম বিচারে সবই নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করে যায়।
আর সেই বিবেচনায় উঠে আসে রাজনীতিতে নারীর যথাযথ অংশগ্রহণে বাধাবিপত্তি। রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং সরাসরিভাবে জড়িত জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তারও পক্ষ-বিপক্ষ প্রতিক্রিয়ায় নারীর কিছু যাত্রা পথ থমকে যাওয়া পরিস্থিতিকে অনেকটা সামলে নেওয়া। সংশ্লিষ্ট দলীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা নেতাকর্মীদের জন্য আবশ্যকীয় পূর্ব শর্ত। সেখানেও নারী নেতৃত্বের বিষয়ে কিছু ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সামনে যখন জাতীয় নির্বাচন মোকাবিলা করতে হয় সেখানে বৈষম্য নানামাত্রিকে দৃশ্যমান থাকে। ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের স্থান অপূরণ থেকে যাচ্ছে বরাবরই নারীকে মূল সোপানে নিয়ে আসতে।
বিভিন্নভাবে এমন আপত্তিও উঠছে নারী নেতৃত্বকে সংসদ নির্বাচনে অনেকটা পিছিয়ে রাখা ও সমানভাবে দায়বদ্ধ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন। নারী নেতৃত্বের অবমূল্যায়নই এর জন্য দায়বদ্ধ বলে অভিযোগও উঠছে। সমাধান হিসেবে বিপরীত কার্যক্রমই যথার্থ বলে সুপারিশ আসছে বিজ্ঞজনদের কাছ থেকে। অর্থাৎ নারী নেত্রীদের যথাযথ মূল্যায়ন করে তার রাজনৈতিক অধিকার, সাংবিধানিক দায়-দায়িত্ব নেওয়ার স্বাধীন মতামতও জরুরি। এর ব্যত্যয় সমস্যার যে গভীরতা সেই তিমির থেকে যাওয়ার আশঙ্কা। প্রচলিত আইন বাস্তবায়নও জরুরি। তা ছাড়া আরও বলা হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবও বর্জন করা নিতান্ত আবশ্যক।
সংশ্লিষ্ট রাজনেতিক দলই সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে নারী নেতৃত্বের অধিকার, স্বাধীনতা যাতে বিন্দুমাত্র খর্বিত না হয়। সেখানে দৃষ্টি দেওয়াও অতি আবশ্যক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ভাবছেন নারীকে তার যথার্থ অধিকার দিতে মান্ধাতা আমলের মানসিকতাকে পরিহার করে নতুন সময়ের জন্য আধুনিক চিন্তা ও জরুরি। কারণ সমসংখ্যক যদি দেশের কোনো একটি মূল উপাদান থেকে বিচ্যুত কিংবা বিচ্ছিন্ন থাকে তা হলে সামগ্রিক উন্নয়ন অধরা থেকেই যাবে। নজির হিসেবে এখন বারবার উঠে আসছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফল পরিণতি।
অসাম্য-বৈষম্য ভাঙতে গিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন জাতির জন্য এক বিরাট মাইলফলক। বৈষম্য শুধু সরকার আর জনগণের মধ্যে নয় বরং সমাজ, সভ্যতা, সংস্কারের বিভিন্ন স্থানে। সেখানেই ধাক্কা খাচ্ছেন শারীরিকভাবে নরম মানসিকভাবে কোমল নারী সমাজ। তাই সর্বত্র সমতা ফিরিয়ে আনতে গেলে নারী নেতৃত্বের বিকল্পও অন্য কিছু নয়। সুধীজনরা বলছেন শিক্ষিত, যোগ্য, ত্যাগী, জনবান্ধব ও পরিক্ষীত নারীদের যথার্থ মূল্যায়ন করতে হবে সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে।
সেখানে নারী সমাজ ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থাকেন। যারা অপরিচিত ও অচেনা নন। তাদের খুঁজে বের করে যথোপযুক্ত স্থানে নিয়ে আসাও সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা। যা ছোট-বড় সব রাজনৈতিক সংগঠনকে সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তবে সবার আগে জরুরি নারীর মধ্যেই রাজনৈতিক সচেতনতা এবং নেতৃত্বে উপযোগী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন। ভুলে গেলে চলবে না যোগ্যতাই সামনে চলার পথের মৌলিক পাথেয়। নারীদের যোগ্যতম ও উপযোগী বিবেচনায় সমাজের সর্বত্র জোয়ার আসাও পরিস্থিতির ন্যায্যতা, যা অর্জন করার দায়িত্ব নারীরই।