ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

সানাইয়ের সুর  বাজে

জলি রহমান

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

সানাইয়ের সুর  বাজে

প্রকৃতিতে আপন মহিমায় ফিরে এসেছে হেমন্ত ঋতু

প্রকৃতিতে আপন মহিমায় ফিরে এসেছে হেমন্ত ঋতু। সকালের সোনাঝরা রোদ আর বিকেলের হিমেল হাওয়া  হৃদয়কে করে আন্দোলিত। হালকা কুয়াশার এক অপরূপ স্নিগ্ধতা ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে প্রকৃতিতে। প্রতি বছরের এ সময়ে নানা দিক থেকে প্রায়ই ভেসে আসে বিয়ের সানাইয়ের সুর। যেকোনো উৎসবের জন্য এ সময়টা সকলেরই বেশ পছন্দের। এজন্যই কার্তিক-অগ্রহায়ণে শুরু হয় উৎসবমুখর নানা আয়োজন। যার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে বিয়ে। বাঙালিরা যেকোনো উৎসব পেলেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করে নির্ধিদ্বায়। ভেদাভেদ ভুলে উৎসবকে সম্পন্ন করতে ব্যস্ত থাকেন। 
দুটি প্রাণের মেলবন্ধন হয় বিয়ের মাধ্যমে। আর এই পরিণয়ে সবার আগ্রহ থাকে বর-কনের দিকে। কেমন হবে বর-কনের সাজপোশাক? এ নিয়ে আপনজনদেরও থাকে নানা জল্পনা-কল্পনা। একটা সময়ে কনের সাজ ঘরের মধ্যেই সম্পন্ন হতো। এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিয়ের সাজও করা হয় বিউটি পার্লারে। রাজধানী ছাড়াও ঢাকার আশপাশের শহরে ও ঢাকার বাইরে গড়ে উঠেছে অজস্র বিউটি সেলুন। এসব বিউটি সেলুন আবহাওয়া এবং অনুষ্ঠান উপযোগী নান্দনিক সাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে কনেকে। বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে কয়েক স্তরে বউকে নানা আঙ্গিকে সাজানো হয়। পরিণয়ের প্রথম পর্ব আকদ। প্রথমেই জানা যাক আকদের সাজ সম্পর্কে-
আকদের অনুষ্ঠান অধিকাংশ পরিবার ঘরেই করে। তবে অনেকেই আবার ঝামেলা এড়াতে কমিউনিটি সেন্টার বা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ছোট পরিসরে আয়োজন করেন। তাই কোথায় এই অনুষ্ঠান করা হবে তার ওপর নির্ভর করে সাজ-পোশাক। আকদের সাজ হলুদ, বিয়ে কিংবা বৌভাত থেকে হালকা হয়। এক্ষেত্রে ত্বক বুঝে ফাউন্ডেশন দিয়ে হালকা বেজ করে তার ওপর পাউডার লাগিয়ে নেওয়া যায়। চোখে কাজল এবং চিকন করে আইলাইনার লাগানো যেতে পারে। পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে হালকা শ্যাডো লাগাতে পারেন চোখের পাতায়। ঠোঁটে ন্যুড লিপস্টিক দিলেই বেশ মানিয়ে যাবে।

চুল একটু খোলা কিংবা কার্লি করা যেতে পারে। প্রথম দর্শনেই যেনো ভালো লাগে একে অপরের। যেহেতু আংটি বদল হয় আকদের দিনে। তাই মুখের সঙ্গে মানানসই হাতের মেকাপও প্রয়োজন এ দিনে। একটা সময় দেখা যেত শুধু কনে সেজেগুজে বসে আছে। আর বরের কোনো পরিবর্তন নেই। এখন সময় পাল্টেছে ছেলেরা নিজেদের পারফেক্ট করতে ছুটছে জেন্টস পার্লারে। নিজেকে সুদর্শন রূপে তৈরি করছেন। তবে আকদের দিনে বর স্যুট-বুট টাই পরে নিজেকে নান্দনিক রূপে সাজাতে পারেন। 
হলুদ ছোঁয়া : যখন আকদের মাধ্যমে বিয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়, তখনই শুরু হয় হলুদের আয়োজন। কালের পরিক্রমায় এ আয়োজনেও এসেছে নানা বিবর্তন। আধুনিকতা মানুষের জীবনকে যেমন ব্যস্ত করেছে তেমনি কাজগুলোও করেছে সংক্ষিপ্ত। আগে হলুদের অনুষ্ঠান বর-কনের বাড়িতে আলাদাভাবে করা হতো। এখন বিভিন্ন সেন্টারে দুই পক্ষ  মিলে হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে দেখা যায় প্রায়ই। বিয়ের আয়োজনের সকল আনন্দই যেন থাকে হলুদের অনুষ্ঠানে। বর-কনে ছাড়া ছোট থেকে বড় সকলের পোশাকে থাকে একই রং। এজন্য সবার সাজও থাকে অনেকটা একইরকম। চেহারার গড়ন অনুযায়ী চুল ও চোখের সাজে পরিবর্তন হয়।

কেমন হওয়া উচিত হলুদের সাজ-পোশাক? এ নিয়ে ভাবনার কোনো শেষ নেই। এক্ষেত্রে কনে একটু ভারী মেকাপ করলেই ভালো লাগবে। এছাড়া অনেকেই হলুদের ছোঁয়া দেয়। তাই কোনোভাবে যেন মেকাপ নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এজন্য ওয়াটার প্রুফ মেকাপ করতে হবে। কোনো সামান্য কারণে যেন মেকাপ না উঠে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একটু হালকা কাজের জামদানি শাড়ি বা সুতি কাপড়ের পোশাক হলে ভালো হয়। আজকাল হলুদের অনুষ্ঠানে নাচ-গানের আয়োজন করা হয়। তাই হলুদের অনুষ্ঠানে যারা অংশগ্রহণ করছেন সবারই পোশাকের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

যাই পরুন না কেন, ভালোভাবে আটসাট করে নিতে হবে। হলুদের অনুষ্ঠানে সাধারণত নারীরা শাড়ি এবং পুরুষরা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অনেক সময় যারা অনুষ্ঠান আয়োজন করে তারাই সবাইকে একই রকম পোশাক উপহার দেয় অনুষ্ঠানটি সুন্দর করতে। এতগুলো পোশাক একসঙ্গে দোকানের সংগ্রহে নাও থাকতে পারে। এজন্য আগেই অর্ডার দিতে হবে। এখন যেহেতু হিম হিম ঠান্ডা তাই যে পোশাকই পরা হোক না কেন তা যেন একদম পাতলা না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আর হলুদের অনুষ্ঠান সাধারণত রাতেই হয়ে থাকে তাই সঙ্গে শাল বা সোয়েটার রাখতে পারেন।

বিয়ের সাজ পোশাক : হলুদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলে আসে বহুল প্রতীক্ষিত বিয়ের অনুষ্ঠান। দুটি মানুষকে একত্র করার মূল আয়োজন। যত অনুষ্ঠান আছে তার মধ্যে বিয়ে উপলক্ষে কনে ছাড়াও যেন প্রত্যেকেরই সাজ-পোশাক নিয়ে থাকে নানা ব্যস্ততা। একজনের তুলনায় একজন সুন্দর। প্রতিটি মানুষ হাজির হয় আলাদা আলাদা সৌন্দর্য নিয়ে। অনুষ্ঠানে মুগ্ধতা ছড়াতে যেন কেউ কারও থেকে কম না। বিয়ে উপলক্ষে কেউ ছোটে পার্লারে। কেউবা যায় শপিং মলে নামি-দামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী কিনতে। আজকাল কনেরা শাড়ি ছাড়াও ল্যাহেঙ্গা বা শারারা জাতীয় পোশাক পরছেন। এক্ষেত্রে নেট বেইসের ওপর চুমকি পুতির সিকোয়েন্সের কাজ কনের পোশাকে এনে দেবে গর্জিয়াস লুক।
বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় ও পোশাকের ধরনের ওপর নির্ভর করে সাজ। সাধারণত রাতেই এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। আর রাতের সাজ গর্জিয়াস করা যায়। শাড়ি বা লেহেঙ্গা যাই পরুন না কেন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে চোখের সাজ আর ঠোঁটের সাজে ফোকাস দিতে হবে। চোখে স্মোকি আইজ করলে সব থেকে সুন্দর হয়। তবে অনেকের চোখেই স্মোকি মেকআপ মানায় না। সেক্ষেত্রে ডার্ক শেডের আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন আর তার সঙ্গে গ্লিটার।

যেহেতু মেকআপ একটু গাঢ় হবে তাই ঠোঁটে ব্যবহার করুন মেরুন, রেড ওয়াইন, ডার্ক কফির মতো শেডগুলো। এছাড়াও হাইলাইটারের ব্যবহারেও হতে হবে সতর্ক। আপনার স্কিনটোন যদি একটু ডার্ক শেডের হয়ে থাকে তাহলে গোল্ডেন কালারের হাইলাইটার বেছে নিন। অপরদিকে, আপনার স্কিনটোন যদি লাইট শেডের হয়ে থাকে তাহলে শিমারি কালার বেছে নিতে পারেন।
এছাড়াও বিয়ের সাজে স্নিগ্ধতা আনতে নজর দিতে হবে বেস মেকআপের দিকে। তাই উন্নতমানের মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করুন। লিকুইড বেসড মেকআপ দিন-রাত যেকোনো সময়ের জন্য দারুণ কার্যকর। বিয়েতে গর্জিয়াস লুক পেতে চুলের সাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চুলের সাজ কিভাবে করবেন তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে থাকেন। তবে পোশাকের ধরন আর মুখের গড়নের সঙ্গে মিল রেখে যদি চুলের সাজ নির্বাচন করতে পারেন তাহলে আপনিই হয়ে উঠবেন অনন্যা। পোশাকের ধরণ অনুযায়ী বাছাই করতে হবে গয়নাও। আজকাল ছেলেরাও পিছিয়ে নেই সাজগোজে।

বরের সাজের জন্য রয়েছে জেন্টস পার্লার। বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে ফেসিয়াল এবং চুলের কাট সেরে ফেলুন। এরপরে অনুষ্ঠানের দিন জেন্টস বিউটি সেলুন থেকে পরিপাটি হয়ে আসুন। কেননা অনুষ্ঠানের মধ্যমণি বর-কনে দুজনেই। এজন্য দুজনকেই আকর্ষণীয় হওয়া প্রয়োজন।
ঢাকার নিউমার্কেট বিয়ের কেনাকাটায় জন্য সাশ্রয়ী জায়গার মধ্যে অন্যতম। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের জন্য একটি জনপ্রিয় জায়গা হলো বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স। এছাড়াও রয়েছে চাঁদনী চক মার্কেট, গাউসিয়া মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, রাপা প্লাজা, সীমান্ত স্কয়ার। এসব মার্কেট থেকে আপনি বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো অনুষ্ঠানের কেনাকাটা করতে পারবেন সাশ্রয়ী মূল্যে।

×