ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১

ফ্যাশনে প্রযুক্তির ছোঁয়া

তানজিনা আলম

প্রকাশিত: ০০:৫৭, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

ফ্যাশনে প্রযুক্তির ছোঁয়া

.

সময় দেখা হোক কিংবা ফ্যাশন অনুষঙ্গে, ঘড়ির কদর কখনোই কমেনি। কিন্তু ঘড়ির ডিজাইনে এসেছে পরিবর্তন। ফ্যাশনেবল ক্ল্যাসিক ক্যাটাগরির ঘড়ির কদর যেমন বাড়ছে তেমনি তরুণদের আগ্রহের কেন্দ্রে জায়গা করে নিচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির স্মার্টওয়াচ। এটি একটি পরিধানযোগ্য কম্পিউটিং ডিভাইস, যা সাধারণ ঘড়ির থেকে অধিক কার্যকরী। স্মার্টফোনের সঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে স্মার্টওয়াচ সময় দেয়ার পাশাপাশি, হার্ট রেট পরিমাপ করা, ক্রনোমিটার সুবিধাসহ দূরত্ব পরিমাপ বা ই-মেইল পড়ারও সুযোগ দেয়। স্মার্টওয়াচ একটি ফিটনেস ডিভাইস হিসেবেও কাজ করতে পারে। ভ্রমণ দূরত্ব ট্র্যাক করার সুযোগ আছে স্মার্টওয়াচগুলোর। কোনো নির্দিষ্ট ব্যায়ামে কতটুকু সময় লেগেছে, পদক্ষেপের সংখ্যা এবং এমনকি ক্যালোরিও পরিমাপ করা যায়।
ওজন কমানোর পরিকল্পনা যুক্ত করা যায় স্মার্টওয়াচে। খাবারের মাধ্যমে গৃহীত এবং ব্যবহৃত ক্যালোরির হিসাব দিতে পারে। এ ছাড়া অনেক স্মার্টওয়াচ দীর্ঘক্ষণ নড়াচড়া টের না পেলে গ্রাহককে নোটিফিকেশন পাঠায়। মেডিক্যাল মনিটরিংয়ে বিশেষত কিছু স্মার্টওয়াচ রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করে। বয়স্ক ব্যক্তি যারা হার্ট বা ডায়াবেটিসের সমস্যায় আছেন তাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। চিনির মাত্রার অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করতে এবং ব্যবহারকারীকে সতর্ক করতে সক্ষম। রক্তে অক্সিজেন সংবেদনশীলতার অবস্থাও জানাতে পারে। স্মার্ট কম্পাসের ব্যবহার করা যায় বিশেষত নতুন জায়গায় এবং ভ্রমণে। পরিধানযোগ্য বলে হাত ও মুক্তভাবে কাজে লাগানো যায়। নতুন জায়গায় খেতে বা কেনাকাটা করতে গেলে রিভিউ জানাতে অন দ্য স্পট রেটিং ফাংশন ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। ভয়েস সার্ভিসের মাধ্যমে মৌখিক নির্দেশও গ্রহণ করতে পারে। কখনো কখনো স্মার্টওয়াচ দিয়েই স্মার্টফোন, গাড়ি কিংবা চাবি শনাক্ত করা যায়। জরুরি কল করতে এবং রিসিভ করতে ব্যবহার করা যায়।

মূল্য পরিসীমা
আকার, আকৃতি, রঙ এবং কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে বাজারে বিভিন্ন ধরনের অপশন রয়েছে। যেহেতু স্মার্টওয়াচ বারবার কেনার প্রয়োজন হয় না, তাই সময় নিয়ে, চিন্তা করে বাজেট এবং জীবনধারার সঙ্গে মানানসই সেরাটি বেছে নিতে হবে। বাজেট সাশ্রয়ী হলে, চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তৈরি অনেক ব্র্যান্ডের স্মার্টওয়াচ বাজারে পাওয়া যাবে। বাজেট মাঝারি ধরনের হলে ফিটবিট, ফসিলের কিংবা প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের স্মার্টওয়াচের জন্য অ্যাপল, স্যামসাংসহ প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্র্যান্ডের স্মার্টওয়াচ পাওয়া যায়। মোটামুটি ভালোমানের স্মার্টওয়াচের জন্য গুনতে হতে পারে ৩৫০০ থেকে ৪২৯৯৯ টাকা পর্যন্ত।

মনে রাখতে হবে
- যারা অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন, তারা অ্যাপল ওয়াচ কিনলে পুরোপুরি কার্যকারিতা পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ অ্যাপল ওয়াচ আইফোনের সঙ্গে কাজ করে। এতে থাকে ওয়াচওএস। অন্যদিকে স্যামসাং গ্যালাক্সি স্মার্টওয়াচগুলো চলে টাইজেন ওএসে। তবে ফিটবিটের স্মার্টওয়াচ অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন ব্যবহারকারীরা চাইলেই নিতে পারেন।
- সাধারণত বেশির ভাগ স্মার্টওয়াচেই এমোলেড বা এলসিডি ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়। তবে কম পুরুত্বের ডিজাইনের জন্য এলসিডির বদলে ওএলইডি ডিসপ্লে বাছাই করতে হবে।
- ফিটনেস এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ফিচার বেশি এমন স্মার্টওয়াচই বেশি ব্যবহার করতে চান সবাই। সে ক্ষেত্রে হৃদকম্পন, এসপিওটু মনিটর করতে পারে এবং জিপিএস ট্র্যাক করতে পারে- এমন বাছাই করতে হবে। নিতে পারেন ফিটবিট চার্জ ৫, গারমিন ফোররানার ২৪৫, গারমিন ফোররানার ৩৫ কিংবা ফিটবিট ইনস্পায়ার ২ এমন কিছু।
- পার্সোনালাইজ ঘড়ির জন্য অ্যাপল ওয়াচ বা ফসিলের স্মার্টওয়াচ পছন্দ করা যেতে পারে। এগুলো ব্যান্ড কালার, উপাদান, ফিনিশিং এবং সাইজ বাছাই করার অপশন দেয়।
- অধিক অ্যাপ প্রাধান্য পায় এমন স্মার্টওয়াচ বাছাই করলে এবং বেশি ব্যবহৃত বা গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপগুলো স্মার্টওয়াচের হোম স্ক্রিনে রাখলে, গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় মিস করে যাওয়ার সুযোগ নেই।
- যেকোনো গ্যাজেটের ব্যাটারি সক্ষমতার দিকেই নজর দিতে হয় বেশি। শাওমির মি এবং অনার ওয়াচ জিএস প্রো-তে ৫০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার আওয়ারের বেশি ব্যাটারি পাওয়ার পাওয়া যায়, যেখানে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৬-এর ব্যাটারি পাওয়ার ৩০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার আওয়ার হয়ে থাকে। অন্যান্য ফিটনেস ব্র্যান্ডগুলোর মতো স্মার্টওয়াচে দীর্ঘসময় চার্জ ব্যাকআপ পাওয়া কষ্টকর।
স্মার্টওয়াচকে ধরা যায় স্মার্টফোনেরই বর্ধিত অংশ। এই স্মার্টওয়াচের কার্যকারিতা গ্রাহকের সামগ্রিক অভিজ্ঞতায় পরিবর্তন আনতে পারে। একইসঙ্গে সহজে বহনযোগ্য, কার্যকরী আর পরিধানযোগ্য বলে ফিটনেসে এবং ফ্যাশনেও প্রযুক্তির ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে স্মার্টওয়াচ।

×