ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

ভালো থেক কন্যা

আলম মাহফুজ

প্রকাশিত: ০১:২০, ১১ অক্টোবর ২০২৪

ভালো থেক কন্যা

প্রতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে জাতীয় কন্যা-শিশু দিবস পালিত হয়

প্রতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে জাতীয় কন্যা-শিশু দিবস পালিত হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘কন্যাশিশুর স্বপ্নে গড়ি আগামীর বাংলাদেশ’।
সারা বিশ্বেই নানা কারণে কন্যা-শিশুরা বেশ অবহেলিত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মর্যাদা, ভালোবাসাÑ সব দিক থেকেই বলতে গেলে তারা বঞ্চিত। শুধু যে আমাদের দেশের চিত্র এমন তা কিন্তু নয়। সারা বিশ্বেই কোনো না কোনো জায়গায় প্রতি মুহূর্তে অবহেলার শিকার হচ্ছে কন্যা-শিশু। পরিবার ছাড়াও সামাজিকভাবেও তারা হচ্ছে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত। সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্রসহ সমস্ত স্থানে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ দূরীকরণ হলো কন্যা-শিশু দিবস অন্যতম উদ্দেশ্য। 
বিশ্বজুড়ে নারী ও কন্যা-শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও নৃশংসতার ঘটনা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশু, যাদের বয়স আঠারো বছরের কম। আর শিশুদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ কন্যা-শিশু যাদের পিছনে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কন্যা-জায়া-জননীর বাইরেও কন্যা-শিশুর বৃহৎ জগত রয়েছে। স্বাধীনভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করা ছাড়াও পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকা-ে নারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন করা সম্ভব। এজন্য কন্যা-শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তাসহ বেড়ে ওঠার সব অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। 
কন্যা-শিশু সুরক্ষা পেলে সব বৈষম্য দূর হবে। কন্যা-শিশুদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করেছে। বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে নেওয়া হয়েছে কঠোর আইন। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে। অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হতে হবে কন্যা-শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। কন্যা-শিশুর অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে পুরুষকে।

শিক্ষার্থী ও সংগঠক তানজিয়া শিশির বলেন, আমার মতে সব দিক থেকে আমাদের দেশের কন্যা-শিশুরা ভালো নেই। কিছু কিছু দিক থেকে তারা ভালো আছে। আর সবদিক থেকে ভালো থাকাটাও সম্ভব না। আমাদের দেশে আগে কোনো পরিবারে কন্যা সন্তান হলে খুশি না হওয়ার একটা ব্যাপার ছিল সেটা আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। আগের মতো এখন আর সেই আক্রোশগুলো নেই যেটা আগে কন্যা সন্তান হলে দেখা যেত। তবে এখন দেখা যাচ্ছে একটা কন্যা সন্তান হলে বাবা মা যতটা খুশি হয়, তো পরবর্তীতে তারা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক প্রেক্ষাপটে তারা অনেক বেশি কোণঠাসা হয়। সামাজিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়, নির্যাতনের শিকার হয় ও অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তো সেইদিক থেকে এখনো কন্যা-শিশুরা পিছিয়ে আছে। আমাদের সমাজে এখনো কন্যা সন্তানকে বোঝা মনে করা হয়।  
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুরাইয়া ইসলাম বলেন, আমার মনে হয় না কন্যা দিবসকে কোনো একটা নির্দিষ্ট দিনে বেঁধে দেওয়া যায়। আমার মনে হয় প্রতিটা দিবসই কন্যা দিবস। কারণ কন্যারা যদি না থাকত তাহলে আমাদের সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যেত। নারীরা শুধু কারও মা, বোন, স্ত্রীই নয় বরং ধৈর্য, সাহস, সংগ্রাম ইত্যাদি বিশেষণের অন্যরুপ। তাদের হাত ধরেই গড়ে উঠেছে আমাদের সভ্যতা। কিন্তু আমাদের সমাজব্যবস্থায় তার উল্টো চিত্র দেখা যায়।

সৃষ্টিলগ্ন থেকেই এ সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য বিরাজমান। নারীদের ও পুরুষদের মতোই বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। সমাজে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। নারীরা শিকার হচ্ছে যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, ইত্যাদি ঘৃণ্য অপরাধের। কিছু ক্ষেত্রে বিচার হলেও বেশিরভাগ অপরাধীই আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায়।

×