ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

উদ্যোক্তা মিন্নি

তাহমিন হক ববী

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ৪ অক্টোবর ২০২৪

উদ্যোক্তা মিন্নি

মাত্র বাইশ বছরে মিন্নি নারী উদ্যোক্তা হয়েছেন

মিন্নি আকতার মিথুন। মাত্র বাইশ বছরে মিন্নি নারী উদ্যোক্তা হয়েছেন। এলাকার মানুষজন তাকে পাপড়ি চোখের মেয়ে বলেই চেনেন। উপাধি দেওয়া এই নামের পেছনে রয়েছে মিন্নির পাপড়ি তৈরির কারখানা ঘিরেই। অথচ মিন্নি এক সময় একটি শিল্প-কারখানার নারী শ্রমিক ছিলেন। 
নারী সৌন্দর্যের অন্যতম অনুষঙ্গ চোখের পাপড়ি বা আইল্যাশ। আধুনিক নারীদের কাছে এর চাহিদা আকাশছোঁয়া। আর এই চোখের কৃত্রিম পাপড়ি তৈরি হচ্ছে উত্তরের জনপদ নীলফামারীর সৈয়দপুরে। নারী উদ্যোক্তা মিন্নি আকতার মিথুন তার মিন্নি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এসব পাপড়ি তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করছেন। এতে করে কারখানায় যেমন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, তেমনি আসছে বৈদেশিক মুদ্রাও।

সৈয়দপুর শহরের নিমবাগান এলাকার  এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে মিন্নি। এক সময় নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের টিএইচটি-স্পেস ইলেক্ট্রিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করতেন মিন্নি। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সৈয়দপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এক সহকর্মীর বিয়ের অনুষ্ঠানে একই কোম্পানিতে টেকনিশিয়ান চীনের গুয়ানডং শহরের চিশুয়ী টাউনের লীন সিংকের ছেলে লীন ঝানরুই নামের এক যুবকের সঙ্গে মিন্নির পরিচয় হয়। সেই পরিচয় থেকে ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর লীন ঝানরুই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম রাখেন লাবিব। স্বামী-স্ত্রী মিলে গড়ে তোলেন এই পাপড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান।

 মিন্নি বলেন, চাইনিজ টিকটক দেখে এ কাজে উদ্বুদ্ধ হই। স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করে গড়ে তুলি এই চোখের কৃত্রিম পাপড়ির কারখানাটি। প্রতিদিন এই কারখানা থেকে ৫০০ থেকে ১ হাজার চোখের পাপড়ি তৈরি হচ্ছে। যা পরবর্তীতে চীনে পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের অনেকে চোখের পাপড়ি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 
সৈয়দপুর শহরের উপকণ্ঠে ওয়াপদা মোড়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মিন্নি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। সেখানে বর্তমানে ৫০ জন কাজ করছে। পরিধি বৃদ্ধি করে সেখানে ৩০০ জন কাজ করবে। প্রতিদিন কাজ করে শ্রমিকরা পাচ্ছেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এতে করে সংসারে সহযোগিতা করতে পারছেন নারীরা।  
মিন্নি  বলেন, আমরা চাচ্ছি এই আইল্যাশ প্রস্তুতের মাধ্যমে আমরা সৈয়দপুরের বেকার নিরসন করব। সেই কারণে ছোট পরিসরে কোম্পানি চালু করেছি। যেখানে ৫০ জনের মতো কাজ করছে। আমরা চাই এই ক্ষুদ্র পরিসরটা আগামীতে বৃহৎ আকার ধারণ করবে। নতুন নতুন শ্রমিককে আমরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ গড়ে তুলব। এ মাসে আমাদের পাঁচ হাজার পিস প্রোডাকশন হয়েছে যেটা নতুন অবস্থায় কোনো অংশে কম নয়। আশা করছি আগামী মাসে আমরা ৫০ হাজার পিস উৎপাদন করতে পারব এবং আমাদের প্রোডাক্ট সরাসরি চীনে যাচ্ছে। তাই দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা আমার। মিন্নি মনে করেন বৃহত্তর পরিসরে এর ব্যাপ্তি ঘটাতে পারলে ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে এই সেক্টরে।
মিন্নির স্বামী চীনা নাগরিক লীন ঝানরুই  বলেন, আপাতত জায়গাটা ভাড়া নিয়ে প্রোডাকশন চালু করেছি। আমরা চোখের পাপড়ি বানাই। আমাদের কাঁচামাল পুরোটাই চীন থেকে আসে। আমাদের আগামীতে পরিকল্পনা রয়েছে, এখানে ৩০০ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ করব। এ কারখানার শ্রমিক তাসমিন আক্তার (২৫), লামিয়া (২০), নায়না (২৪), আইরিন (২১) ও মুশকান (২৪) জানান, এখানে কাজ করে আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারছি। আগে সবাই প্রশিক্ষণ নিয়েছি, তারপর এ কাজে যোগদান করেছি। এখানে নিরাপত্তার মাধ্যমে আমাদের কাজ করানো হচ্ছে।

×