বাংলাদেশ বিভিন্ন কর্মযোগের যান্ত্রিক কলাকৌশল
আধুনিক ও প্রযুক্তির বাংলাদেশ বিভিন্ন কর্মযোগের যান্ত্রিক কলাকৌশলের অভিগমন সময়ের বিশেষ চাহিদা। শুধু বাংলাদেশ কেন আধুনিক বিশ্বায়নের দুরন্ত যাত্রাপথেও শিল্প প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের মধ্যে কর্মোদ্দীপনা থেকে সময়ের বিবেচনায় যে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে তাও কাজের দক্ষতা-সক্ষমতার যেন নির্ণায়ক। সমসংখ্যক নারীও তেমন প্রযুক্তি সহায়তায় সম্পৃক্ত হতে জোর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে।
গ্রামনির্ভর বাংলাদেশ ও উন্নত যন্ত্র ব্যবহার থেকে কিছুমাত্র দূরে থাকছে না। সেখানে সমান ভাবে নারীর অংশগ্রহণ সত্যিই চমক দেওয়ার মতো। বিশেষ করে গ্রামীণ নারী নিরক্ষর কিংবা সামান্য লেখাপড়া জানার কারণে মুঠোফোন ব্যবহারে এক সময় অভ্যস্ত হয়ে যায়। ছোট যন্ত্রটির বিভিন্ন কলাকৌশল আয়ত্বেও নিয়ে আসে। বর্তমানে তা আরও ব্যাপক হারে গ্রামীণ নারীদের মধ্যে কর্ম আর নিত্য জীবনের ব্যবহারে উপযোগী হয়ে উঠছে। এখন শুধু ফোনের মাধ্যমে কারোর সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও দৈনন্দিন অনেক দরকারও মেটাতে পারদর্শী হচ্ছেন। সেখানে দৃশ্যমান হচ্ছে ছোট মুঠোফোনে তথ্য-উপাত্ত খোঁজা ছাড়াও ভিডিও দেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে, যা তাদের অনেক বেশি সক্ষমও করে তুলছে।
পল্লিবালার বঙ্গরমণীরা একা নয় সম্মিলিতভাবে বৈঠকে বসে প্রযুক্তি সহায়তাকে অবারিত আর নিজেদের প্রয়োজনে কাজে লাগাচ্ছেন। আর এটা মূলত করা হচ্ছে গ্রামীণফোনের ছোট্ট প্রযুক্তির সাহায্যে। কাজ করতে গিয়ে গ্রামের মহিলারা অবাক বিস্ময়ে চমকপ্রদ হওয়ার অবস্থা। সমস্বরে আওয়াজ উঠে আসছে ক্ষুদ্র এই মুঠো যন্ত্রটি কিভাবে যেন আমাদের হরেক কাজে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। শিখে সক্ষমতা অর্জন করলে তথ্য-উপাত্ত বের করা সহজসাধ্য বলেও বক্তব্য প্রকাশ করছে। আগে যা স্বপ্নে-কল্পনাতেও আসেনি। যা আজ বাস্তবসম্মত কাজে তাদের নিত্য সহায়তা করে যাচ্ছে।
আগে অতি অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ফোনের ব্যবহারে প্রাসঙ্গিক কলাকৌশলও রপ্ত করতে হয়েছে। শিক্ষা পদ্ধতি আর অভিজ্ঞতার মিলন দ্যোতনায় সমৃদ্ধ হয়ে প্রযুক্তি হাতে মুঠোয় আনা বিশ্বসভায় নিজের সরব উপস্থিতি যেন জানান দেওয়া। প্রযুক্তি মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের কত প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম তাও গ্রামীণ নারীদের কাছে এক অজান বিস্ময়। তথ্য-প্রযুক্তির সম্দ্ধৃ বলয় সারা দুনিয়াকে আজ হাতের নাগালে এনে দিয়ে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। তেমন অবারিত আঙিনা আজ বিশ্বায়নকেও যেন সর্বমানুষের দরজায় কড়া নাড়িয়ে দিচ্ছে।
অতি আবশ্যক এক মাধ্যম যা কি না সময় অপচয় রোধ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে দুনিয়া জোড়া সংবাদের নিকটবর্তী করতে মানুষকে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত করে যাচ্ছে নির্বিঘেœ নির্দ্বিধায়। আর গ্রামীণ নারীদের জন্য তা যেন এক পরম আশীর্বাদ। কারও স্বামী বিদেশে থাকেন। অনেকের সন্তান নিভৃত পল্লীর এলাকা ছেড়ে শহরের স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করছে। প্রতিদিন ছোট্ট এক ফোনের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কোনো ভাবনাতেই আর পড়তে হচ্ছে না।
তা ছাড়া গ্রামীণ নারীদের ভিন্ন মাত্রার আর এক আগ্রহ রন্ধন শিল্পে বাহারি খাবারের আয়োজন। বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবার সেখানে কেকের প্রাধান্য বেশি। জন্মদিন, বিয়ে বার্ষিকীর নিয়মিত আনন্দ জৌলুস তো থাকেই। যেখানে আলপনা করা মিষ্টি কেকের যে বর্ণাঢ্য আয়োজন তাও ইউটিউব চ্যানেল থেকে অতি সহজেই আয়ত্তে এনে সরবরাহ করা ও গ্রামীণ নারীদের ব্যবসা বাণিজ্যের অভিনব যোগসাজশ বলাই যায়। এক দিকে আর্থিক সাফল্য, অন্যদিকে প্রযুক্তির আঙিনায় নিজেদের সম্পৃক্ত করে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কম বড় বিষয় নয় কিন্তু।
পালা করে বিভিন্ন সময় যে কোনো উঠানে এমন বৈঠকে গ্রামীণ নারীরা এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে শুধু যে প্রযুক্তির আঙিনায় বিচরণ করেছে তা কিন্তু নয়। বরং পারিবারিক অনেক বিষয়আশয় কলহ বিবাদ থেকে সালিশীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এই উঠান আলোচনা সভায়। অংশগ্রহণ করা নারীরা এমন বৈঠককে স্বাগত জানিয়ে তাকে আরও সম্প্রসারিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে তথ্যভিত্তিক ভিডিও যেমন আনন্দদায়ক দৃষ্টিনন্দন পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন খবর, ভিন্ন মাত্রার সংগীত পরিবেশন এবং নারী সংক্রান্ত হরেক সংবাদ পাওয়া অন্য রকম পরিবেশ।
যা এক সঙ্গে বসে নারীরা উপভোগ করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যই বোধ করেন। পল্লিবালার নিভৃত সবুজ সমারোহে নিজেদের সম্পৃক্ত করা গ্রামবাংলার নারী সমাজ আজ শহর, নগর এবং সারা দুনিয়ার খবরের সঙ্গে পরিচয় হতে পেরে উৎফুল্ল, খুশিতে ভরপুর। প্রযুক্তির আঙিনায় সার্চ অপশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে গ্রামীণ নারীদের পরিচয়, সংযুক্ত হওয়া আধুনিক বাংলাদেশকে যেন বিশ্ব দরবারে হাজির করে দিচ্ছে। আগে মুঠোফোনে কথা বলা কিংবা সার্চ করতে পারা এক অবাক অজানা বিষয় ছিল।
সার্চ অপশনে গিয়ে কত কিছু যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে নারীরা বিস্মিত, আনন্দিত। আগে স্বামী-সন্তানের ওপর নির্ভর করতে হতো মোবাইল ফোন চালানোর সময়। কত সময় বিরক্ত বোধ করতেন তারা। আবার মাঝে মাঝে এখন না পরে বলে ধমক দিতেও কসুর করেননি। এখন অবশ্য তেমন কোনো সমস্যাই নেই। নিজের সময়মতো দূরে থাকা স্বামী-সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন রাখতে স্ত্রী-মাদের আর কারোর কাছে যেতে হয় না।
নিজেরাই দক্ষ আর পারদর্শী হয়ে প্রযুক্তির বলয়ে এখন স্বাচ্ছন্দ্য আর অবারিত। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সময় গ্রামীণ নারীরা শিক্ষকদের প্রশ্নের উত্তর সার্চ করে ইউটিউব থেকে দেওয়ার চেষ্টা করে যা তাদের আয়ত্বে ইতোমধ্যে এসে গেছে। এমন সব শিক্ষা-প্রশিক্ষণে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলে শুধু সক্ষমতা প্রদর্শন নয় পুরস্কার অর্জনও অভাবনীয় সফলতা। এভাবেই প্রযুক্তির সেবায় গ্রামীণ নারীরা বিশ্বকে হাতের নাগালে নিয়ে আসছে।
অপরাজিতা প্রতিবেদক