সম্প্রতি পালিত হলো জাতীয় কন্যা শিশু দিবস
সম্প্রতি পালিত হলো জাতীয় কন্যা শিশু দিবস। ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল কন্যা শিশুদের জন্য এক অনন্য দিন। যেখানে কন্যা শিশুর সামগ্রিক জীবনাচরণ নিয়ে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসাও দিবসটির ন্যায্যতা। স্বাস্থ্যই সকল সুখের চাবিকাঠি। সেটাই সামনে এনে কন্যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতাকে বিবেচনায় আনা হয়। শিশু থেকে কিশোরীর স্পর্শকাতর পরিবর্তনের সময় শরীর-মনের যে দোলাচল তাই বয়ঃসন্ধিকাল হিসেবে চিহ্নিত।
বয়ঃসন্ধিকালের তেমন হরেক মন মাতানো রূপ-রস উদীয়মান কিশোরীদের শিহরিত আর বিচলিত হওয়ার এক অনন্য সময়। মাসিক ঋতু¯্রাবের সঙ্গে পরিচিত হওয়াই নয় ভালো-মন্দের কাঁপানো অসময়টায় সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বিশেষ করে জন্মদাত্রী জননীই ভাবতে বসেন এমন নতুন সময়ের আগমন তাকে কি মাত্রায় উদ্বেলিত করেছিল। সঙ্গতকারণে মাতৃ¯েœহে সব কিছুর অনুভব-অনুভূতি মা-ই তার শিশু কন্যাটিকে আগলে রেখে যাবতীয় ব্যবস্থাপনা উপহার দিয়ে থাকেন।
সেখানে সর্বংসহা ধরিত্রীর মতো মাতৃশৌর্যের যে অভাবনীয় সম্পৃক্ততা তাও এক অবারিত বলয়। স্বাস্থ্য সচেতনতায় বিশেষভাবে নজর দেওয়া সেখানে শারিরীক যে নতুন সময়ের অবগাহন সেটাই যে সর্বাধিক গুরুত্বের বিষয়। এ ছাড়াও আছে মানসিক দোদুল্যমান। ভালো-মন্দের ফারাক ধোঁয়াশে কিংবা অপসৃত হওয়ার অনেকটাই দুঃসময়। তাই সচেতন সাবধানতায় বিশেষ নজরদারি মা কিংবা অভিভাবককে পারিবারিক আলয়ে অবারিত করা সময়ের প্রাসঙ্গিকতা।
এবারের কন্যা দিবসের বিশেষ দিনটিতে আলাপ-আলোচনা এবং কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টির ওপর আলোকপাত করা হয়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে দৃশ্যমান হয়েছে ১৫ থেকে ১৯ বছরের কিশোরী কিংবা তরুণীদের পুষ্টিগত খাবারে বিশেষ ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। পারিবারিক নাকি নিজের গাফিলতি তাও বিবেচনা সাপেক্ষ। সেখানে শুধু পরিবার নয় সার্বিক সমাজ ব্যবস্থাও নিয়ামক ভূমিকা রাখছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ হরেক বিভাজনের আবর্তে নাকাল অবস্থায়। সেখানে ধনী-দরিদ্র, গ্রাম-শহর, নারী-পুরুষ আর সমাজ কর্তৃক আরোপিত হরেক বিধি-বিধানও প্রযোজ্য। যে তারতম্যে সমাজের কম-বেশি সবাইকে ফারাকের পর্যায়ে নিয়ে আসে।
গ্রামনির্ভর আমাদের শস্য শ্যামল সবুজ বাংলা। দেশের সিংহ ভাগ মানুষের বসতি গ্রামগঞ্জের নিভৃত পল্লীতে। যেখানে অনেকেই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আর শারীরিকভাবে কোমল আর অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া নারীদের অবস্থা শোচনীয়ই বলা চলে। শ্রেণি বিভক্ত সমাজে শুধু মানুষে মানুষে নয় লিঙ্গ বৈষম্য কি মাত্রায় মাথাচাড়া দেয় তা আড়ালে আবডালে থাকেও না। আর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে সমসংখ্যকের দুরবস্থা নিত্য সংবাদমাধ্যমের খবর হতে দেরি লাগে না। এমন দিন নেই যেখানে নারী নির্যাতনের কোনো না কোনো সংবাদ উঠে আসে না। নিপীড়ন আবার বহুমাত্রিক। সমতার আবরণ সুদূর পরাহত।
ছোট্ট পারিবারিক আলয় থেকে বৃহত্তর সামাজিক প্রতিবেশে নারী নিগ্রহ সত্যিই প্রচলিত, অলিখিত এক নিত্য জীবনের চরম দুর্ভোগ। আপন দুই ভাই-বোনের মধ্যে পুত্র সন্তানটি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার মাত্রায় সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে এগিয়েই থাকে। খাবার টেবিল থেকে শুরু করে নিত্য জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যে ছেলের প্রতি অনেকটা পক্ষপাতিত্ব দৃশ্যমানও হয়। তবে আধুনিক নতুন সময়ে কন্যারাই এগিয়ে আসছে স্বতোপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের অধিকার, স্বাধীনতাকে অর্জনই শুধু নয় যোগ্য নাগরিক হিসেবে তৈরি হতেও আর পেছনে তাকাচ্ছে না।
নিজেকে যথার্থ মানুষ ভাবার অভাবনীয় স্বপ্ন আজ কন্যা শিশু থেকে তরুণী, যুবতী সবাইকে যুগের অগ্রগামী চিন্তায় সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। যদিও সংখ্যায় তারা এখনো কম। তেমন সমতা যদি বিস্তৃত হয় তা হলে আগামীর কিশোরীরা আরও অগ্রগামীর ভূমিকায় নিজেদের প্রমাণ করতে খুব বেশি বেগ পাবে না। তাই দিবসটিকে নির্দিষ্ট সময়ে আটকে না রেখে বরং প্রতিদিনের চর্চায় নিজের মৌলিক অধিকার নিয়ে ভাবাই কন্যা শিশু থেকে তরুণী-যুবতীদের নিতান্ত আবশ্যক। দিবসটির যথার্থ তাৎপর্যে সেটা যেন হয় আগামীর কন্যাদের জন্য সুনির্দিষ্ট যাত্রা পথ। যা সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে মূল নিয়ামক শক্তি হিসেবে নির্দেশিত হতে পারে।
সমাজের কিংবা দেশের যে কোনো অংশ পিছিয়ে পড়লে টেকসই ও সার্বিক উন্নয়ন গতি ব্যাহতই শুধু নয় অধরার পর্যায়ে চলে যেতে পারে। তাই শিশু কন্যা নয় তাদের মর্যাদা দিতে হবে যথার্থ শিশুর কল্যাণে যেখানে কোনো ধরনের বৈষম্যপীড়িত ব্যবস্থাপনা সামনে আসতে বিভিন্নভাবে পিছু হটতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের অভিগামিতায় হরেক মহাপ্রকল্পের নিত্য-নতুন যোগসাজশে। সেখানে ন্যূনতম তারতম্য কিংবা বিভাজন সার্বিক যাত্রাপথকে বিঘিœত ও পেছনে নিয়ে যাবে। তাই কন্যা শিশু দিবসের প্রতিপাদ্যে সামনে চলে আসুক মানুষের মর্যাদায় নিজের অধিকার স্বাধীনতাকে যথার্থভাবে অর্জনে শামিল হয়ে সমতার আদলে দেশটাকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া।