পুঠিয়া রাজবাড়ী
স্কুল জীবনের বন্ধুত্ব এক অন্য রকম মধুর। শৈশবকালের বন্ধুদের সঙ্গে যেভাবে মেশা যায় পরবর্তী জীবনে তা আর হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বন্ধুত্বের ধরনটাও অনেকটা বদলে যায়। তাই স্কুল জীবনের সেই সুন্দর বন্ধুত্বের স্মৃতি সারাজীবন মনে থাকে। তবে শৈশবের বন্ধুদের সাথে মেশার সুযোগ তখন কমই হয়। সবাই বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকে। তবে গ্রামের কোন বিশেষ উৎসব বা ঈদ-পূজার সময় স্কুলের বন্ধুদের কাছে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়।
তেমনি গত ঈদের সময় সুযোগ হয়েছিল স্কুলের সব বন্ধুদের সাথে মিলিত হওয়ার। হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত হলো পুঠিয়ার ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীতে ঘুরতে যাওয়ার। ঈদের পরদিনই রওনা হলাম। সকালবেলা। সূর্যের সোনালি কিরণ ছড়িয়ে পড়ছে প্রকৃতির মায়াবি মুখে। সকাল ৮টায় গাড়ি ছাড়ল। গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে চলছে গাড়ি। জানালা দিয়ে চোখে পড়ছিল গ্রামের মাটির বাড়ি, পুকুরঘাট, বাজার, আরো কত কী!
গন্তব্যে পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে আসলো। গাড়ি থেকে নামতেই চোখে পড়ল পুরাতন সেই রাজবাড়ি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ৩০ টাকায় টিকিট কেটে ঢুকতে হলো ভিতরে।
রাজবাড়িটির সেই প্রভাব প্রতিপত্তি ও জৌলুস না থাকলেও এর নান্দনিক সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের বিমোহিত করছে এখনও। এর মূল আকর্ষণ আয়তাকার দ্বিতল ভবনটি। ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত হয়েছিল এই রাজবাড়িটি। ভবনের সামনের স্তম্ভে অলংকরণ, কাঠের কাজ, দেয়ালে ও দরজার উপর ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম সত্যিই আকর্ষণীয়।
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই চোখে পড়ল সেই সময়ে রাজাদের ব্যবহৃত সিন্দুক, চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় আসবাবপত্র। চারপাশ অনেকটাই খোলামেলা। তিনটি কক্ষ জাদুঘরের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কক্ষগুলো অনেক বড়। রাজশাহীসহ আশপাশের জেলা থেকে কষ্টিপাথরসহ অন্য সামগ্রী দিয়ে নির্মিত দেব-দেবীর মূর্তির পুরোনো নিদর্শনগুলো নিয়ে এসে রাখা হয়েছে এখানে। রয়েছে মধ্যযুগের ধাতব এবং মাটির তৈরি অনেক ব্যবহার্য সামগ্রী। সাথে কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনার ছবিসহ তথ্য লিখে রাখা হয়েছে।
সামনেই রয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতির কারুকাজখচিত জোড়া থাম ও ঝুলবারান্দা। বারান্দার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে রেলিংয়ের কারুকার্য। তবে জরাজীর্ণ এই রাজপ্রাসাদের সবকিছুই প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বারান্দা ও সিঁড়িতে গ্রুপ ছবি উঠানো হল সবাই মিলে।
রাজবাড়িটির পাশেই রয়েছে একটি মন্দির। এর আকর্ষণীয় কারুকার্যও দৃষ্টি কাড়লো। রাজবাড়ির আশেপাশে রয়েছে ছয়টি দিঘী রয়েছে। পুঠিয়ার রাজাদের স্মৃতি বিজড়িত বড় গোবিন্দ মন্দির, ছোট গোবিন্দ মন্দির, বড় শিবমন্দির, ছোট শিবমন্দির, বড় আহ্নিক মন্দির, ছোট আহ্নিক মন্দির, জগদ্ধাত্রী মন্দির, দোল মন্দির, রথ মন্দির, গোপাল মন্দির, সালামের মঠ, খিতিশচন্দ্রের মঠ, কেষ্ট খেপার মঠ, হাওয়া খানাসহ প্রায় ১৫টি প্রাচীন পুরাকীর্তি রয়েছে এখানে। পোড়ামাটির মাধ্যমে পৌরাণিক কাহিনীর চিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনায়।
সব মিলিয়ে এই রাজবাড়িতে পুরো সকাল বা বিকালের সময়টাই ঘুরে বেড়ানো সম্ভব।
এসআর