ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

স্বাপ্নিক শিক্ষার্থী ও দেশপ্রেম 

রাজু মোস্তাফিজ

প্রকাশিত: ০১:১০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্বাপ্নিক শিক্ষার্থী ও দেশপ্রেম 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্মটার প্রয়োজন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্মটার প্রয়োজন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর শেষ হয়ে গেছে। নতুন সরকার এক মাস পার করেছে। বিগত সরকারের পতনের পর দেশে ছিল না কোনো আইনের শাসন। পুলিশ থানা ছেড়ে গিয়েছিল আত্মগোপনে। সরকারের রাজনৈতিক নেতৃবর্গ তাদের কর্মীরা এখনো পালিয়ে আছে। কয়েকদিন দেশে ছিল না কোনো আইনের শাসন। তখন সারাদেশে এলাকাভিত্তিক শিক্ষার্থীরা ‘সহিংসতা প্রতিরোধ টিম’ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ঘুষ-দুর্নীতি প্রতিরোধ টিম তৈরি করেছিল।

সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিলে মিশে ছাত্রছাত্রীরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এ কাজ করেছিল স্কুল-কলেজের ছাত্ররাই শুধু এ কাজ করেনি ছাত্রীরাও রাস্তায় নেমে কাজ করেছিল। অমানসিক পরিশ্রম করেছিল তারা। কোনো ক্লান্তি ছিল না তাদের। কারও কাছে কোনো পারিশ্রমিক দাবি করেনি কেউ। দেশের প্রতি এমন ভালেবাাসা না দেখলে বিশ^াস করা যাবে না। তারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নির্মাণের কাজ করেছিল।

এখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় ফিরে এসেছে। নিয়মিত স্কুল ও কলেজে ক্লাস করছে। যদিও অধিকাংশ বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে এখনো ক্লাস শুরু হয়নি। শিক্ষার্থীরা এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে মনোযোগ দিচ্ছে। তারা বলছে প্রয়োজনে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে সহায়তা করবে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে। 
কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সোমাইয়া আকতার, উম্মে কুলসুম, মারিয়া আকতার জানান নতুন করে এই স্বাধীন দেশে আমরা বাক স্বাধীনতা পেয়েছি। এখন আমরা মনের ভাবটা তুলে ধরতে পারি। সামাজিক যে অন্যায়গুলো এখনো দূর করার চেষ্টা করছি। এক মাস থেকে নিয়মিত ক্লাস করছি । তবে এটুকু বলতে পারি আমরা দেশের প্রয়োজনে আবারও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। মানবিক বিভাগের জিন্নাত আরা, বিজ্ঞান বিভাগের মেঘলা রায় জানান সাম্প্রতিককালে সারাদেশে ছাত্রছাত্রীর শিক্ষকদের সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার এবং অপমান করেছে এটা খুবই অন্যায়। তারা আমাদের শিক্ষাগুরু তাদের কোনো ত্রুটি থাকলে আইনের আওতায় এনে তার বিচার হবে। আমরা তার বিচারের দায়িত্ব নিতে পারি না।

ওইসব শিক্ষার্থীর বিচার চাই। তারা আরও বলেন আমরা যদি আমাদের পরিবার এবং অভিভাবকদের আগে নানা অনিয়মের মুক্তির জন্য অনুরোধ করব তার পরে মানুষের অনিয়মের কথা বলব। প্রথম বর্ষের ছাত্রী নূর ইয়াসমিন বলেন সকলে মিলে মিশে থাকব। আমরা কলেজের সমস্যা এবং  ছাত্রীদের সমস্যা নিয়ে কাজ করব। কোনো ছাত্রী যেন বঞ্চনার স্বীকার না হয়। তারা আরও বলেন কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ।

প্রায় ৫ বছর থেকে দিনাজপুর বোর্ডে শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও কলেজের শিক্ষক স্বল্পতা, অনার্সের ডিপার্টমেন্ট কম। এগুলো নিয়ে আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করব। সরকারি মহিলা কলেজের একাধিক ছাত্রী জানান মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে আমাদের একটি গর্বের বিষয়। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি। তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তবে ক্ষোভের জায়গা একটি কিছু অসৎ মানুষ তারা মুক্তিযোদ্ধাদের পুঁজি করে সব সুযোগ নিয়েছে। এমনকি মিথ্যা সার্টিফিকেট নিয়ে বিভিন্ন কাজ করছে।

সরকার যেন ওইসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট বাতিল করে শাস্তি দেয়। তারা আরও বলেন বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা। তিনি আছেন এবং থাকবেন। গণআন্দোলনের সময় তার ভাস্কর্যকে ভেঙে ফেলার সময় নানাভাবে অসম্মান করা এগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীর কাজ নয়। এগুলো বিকৃত মানসিকতার কিছু মানুষের কাজ। জাতীর পিতার প্রতি আমরা আপোসহীন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ এই গান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। আমাদের মনেপ্রাণে সব কিছুতেই জাতীয় সংগীত আছে এবং থাকবে।

জাতীয় সংগীত বদলানো বা অন্য কোনো চিন্তা করলে ছাত্র সমাজ আবারও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। কারণ এটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখে আমাদের দেশ হবে আরও উন্নত। প্রজন্মের পর প্রজন্ম আরও সুন্দর করে এগিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের প্রাণের মাতৃভূমিকে। যেখানে থাকবে না কোনো দুর্নীতি আর বৈষম্য। নতুন সরকারের কাছে এই প্রত্যাশা সবার মতো শিক্ষার্থীদেরও।

×