ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১

বিয়ের কথা শুনলেই ভয় লাগে? আপনি গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ননতো?

প্রকাশিত: ১৫:৩৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিয়ের কথা শুনলেই ভয় লাগে? আপনি গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ননতো?

ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্য করে দেখুন, প্রায় প্রতিদিনই আপনার পরিচিত কিংবা আশপাশের কারো না কারো বিয়ে হচ্ছে। আবার এমনও চোখে পড়বে যিনি বা যারা বিয়ে করতে ভয় পান। অর্থাৎ নানাবিধ কারণে তিনি বা তারা অন্য কারোর সঙ্গে সারাজীবন কাটানোর মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, বিয়ে করতে ভয় পাওয়া সাধারণ কোনো বিষয় নয়। রোগবিদ্যা বলছে এটি অসুখ; এর নাম গ্যামোফোবিয়া।

বিয়ে করতে ভয় পাওয়া গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষের মাঝে বিবাহিত জীবন নিয়ে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে চিন্তায় মগ্ন থাকেন এই ধরনের ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষেরা। যাদের গ্যামোফোবিয়া হয়, তারা সাধারণত সম্পর্কের ব্যাপারে বেশ উদাসীন থাকেন। বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো আলোচনা তারা অপছন্দ করেন। তারা মনে করেন সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়াটা হয়ত ভুল সিদ্ধান্ত হবে। ডিজএ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশনের মনোবিজ্ঞানী এবং প্রকল্প সমন্বয়কারী নাঈমা ইসলাম অন্তরা জানান, গ্যামোফোবিয়া হলো প্রতিশ্রুতির ভয়, বিশেষ করে সম্পর্ক এবং বিয়ের ক্ষেত্রে। এই ফোবিয়া দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি বা বিয়ের ধারণার সাথে সম্পর্কিত। যারা এ ফোবিয়ায় আক্রান্ত তারা অমূলক ও অযৌক্তিক ভয়ে ভীত হয়ে পড়েন।  

গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য 

১. দীর্ঘমেয়াদি ঘনিষ্ঠ রোমান্টিক সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারা।
২. হাসিখুশি যুগলকে দেখলে দুশ্চিন্তা অনুভব করা। 
৩. হঠাৎ করে সম্পর্কে বিচ্ছেদ টানা।
৪. কেউ কাছে আসতে চাইলে তাকে দূরে চলে যেতে বলেন। 
৫. যেকোনো রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তাবোধ করেন এবং সব সময় ভীত হয়ে ভাবতে থাকেন, এই সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে।

কেন হয় গ্যামোফোবিয়া?

গ্যামোফোবিয়ার পেছনে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ রয়েছে। কী সেগুলো? চলুন দেখে নেওয়া যাক।

১. অতীতের ট্রমা

বিশ্বব্যাপী গ্যামোফোবিয়ার সবচেয়ে বড় কারণ অতীতের ট্রমা। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা। অনেক সময় একটা সম্পর্কে প্রতারিত হয়ে ব্যক্তির ভেতর আবারও নতুন করে সম্পর্কে প্রতারিত হবার ভয় ঢুকে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে মা–বাবার বিচ্ছেদের কষ্ট বা বিষাক্ত সম্পর্ক দেখে সম্পর্কের প্রতি একধরনের নেতিবাচকতা বা ভয়ের অনুভূতি তৈরি হয়। এমনও হয়, সে হয়তো কাছ থেকে কোনো বন্ধু বা আত্মীয়কে সম্পর্কে জড়িয়ে ভুগতে দেখেছে। সেও একই অনুভূতির ভেতর দিয়ে যেতে চায় না। একই কারণে অনেকে একবার বিচ্ছেদের পর নতুন করে বিয়ে করতে চান না।

২. সম্পর্কে নিরাপত্তাহীনতা

 সম্পর্কে অস্থিরতার অনুভূতি যেন বর্তমান সময়ের তরুণরা অতীতের যেকোনো সময় থেকে আরও বেশি করে অনুভব করছেন। এর অন্যতম প্রধান কারণ যোগাযোগের সহজলভ্যতা। এর ফলে তৈরি হয়েছে ‘সিচুয়েশনশিপ’, ‘ডাবলিং’, ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’, ‘ঘোস্টিং’, ‘বেঞ্চিং’, ‘ব্রেডক্রাম্বিং’ আরও কত কী! একটা সম্পর্কে অনিরাপদ বোধ করা বা অনিশ্চয়তার অনুভূতি থেকে অনেকের ভেতর তৈরি হয় গ্যামোফোবিয়া।

৩. পরিবারের সঙ্গে বন্ধনহীনতা

সমীক্ষায় দেখা গেছে, গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই পারিবারিক বন্ধন ততটা দৃঢ় নয়। যাঁরা নিজেরা পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ নন, তাঁদের পারিবারিক বন্ধনে আবন্ধ হওয়ার বিষয়ে একধরনের উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, ভয়, নেতিবাচকতা কাজ করে।

৪. জিনগত কারণ

বিভিন্ন ধরনের ফোবিয়ার পেছনে জিনগত কারণও রয়েছে। হয়তো তাঁর মা–বাবা পরিবারের কাছের কেই গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত ছিল। সেটি–ই জিনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পরবর্তী প্রজন্মে।

৫. সামাজিক চাপ

আমাদের সমাজে একটা সম্পর্ক ভাঙাকে স্বাভাবিক চোখে দেখা হয় না। এর ফলে অনেকে সম্পর্ক ভেঙে গেলে কী করবেন, কীভাবে সেই পরিস্থিতি সামাল দেবেন, লোকে কী বলবে—এমন সব চিন্তা থেকেও সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দিতে বা বিয়ে করতে ভয় পান।

কীভাবে সেরে উঠবেন?

গ্যামোফোবিয়া থেকে মুক্তি পেতে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। বিশেষজ্ঞ ছাড়া পাড়া-প্রতিবেশি কিংবা বন্ধুদের কাউন্সেলিং নিলে যথেষ্ট হবে না। বিশেষজ্ঞরা কগনিটিভ-বিহেভিয়ারাল থেরাপি বা সিবিটি দিয়ে থাকেন। এছাড়াও আপনার রোগের তীব্রতা বুঝে চিকিৎসা দেবেন। এর পাশাপাশি মেডিটেশন, ব্যায়াম ইত্যাদি চালিয়ে যেতে পারেন। গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্তদের কোনো গ্রুপ থাকলে সেখানে যুক্ত হতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেখানে একই ধরনের ভয়ের কথা অনেকে শেয়ার করেন, পাশাপাশি ভয় কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ পাওয়া যায়, সেখান থেকে উপকার পাওয়া যেতে পারে। সঙ্গী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভয় ও উদ্বেগ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন? 

১. প্যানিক অ্যাটাক হলে।
২. প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় অস্থির হলে। যা প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ড বা ঘুমে প্রভাব বিস্তার করলে।  
৩. বিচ্ছিন্নতায় ভুগলে। 
৪. মদ বা মাদকের আশ্রয় নিলে।  

দিবা

×