ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

ঝরঝরে ভাত রাঁধতে যা করবেন

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঝরঝরে ভাত রাঁধতে যা করবেন

বাঙালির ভাত খাওয়া আটকায়, এমন সাধ্যি কার।

মাছ-ভাতেই বাঙালির নাম! তবে কে, কী বলল, কেন বলল- এ সব শুনিয়ে বাঙালির ভাত খাওয়া আটকায়, এমন সাধ্যি কার। বাঙালি ঠিকই ডাল-ভাত নাকেমুখে গুঁজে স্কুল-কলেজ-অফিস অভিমুখে রওনা হবে। বাড়ি ফিরে ধীরেসুস্থে আবার সেই ভাতেই সব্যঞ্জনে করবে উদরপূর্তি। শুধু কি তাই? সৃষ্টি কর্তার কাছেও বাঙালি তার সন্তানের জন্য ‘দুধে ভাতে’ থাকারই আর্জি পেশ করে। 

এখানে শেষ হলেও না হয় হতো। কিন্তু ভাত হতে হবে ঝরঝরে। তবে গিয়ে স্বাদ খুলবে ইলিশ কিংবা নিরামিষ চচ্চড়ির। ভাত রান্না মোটেও সহজ নয়। সামান্য ভুলেই ভেস্তে যায়। বাঙালির ভাতে তো কেবল জুঁইফুলের মতো ভুরভুরে গন্ধ হলে চলে না, তা ঝরঝরেও হতে হয়। তবে আবার ঝুরঝুরে হলে হবে না।

ভাত রাঁধা সহজ নয়। অনেকেই কথায় কথায় বলেন, জলভাত। ভাত কিন্তু অত সহজ বিষয় নয়। ভাত রান্না শিখতে হয়। ঠিক-ভুল জানতে হয়। এমনই বলে থাকেন মা-কাকিমারা। কিন্তু মায়েদেরও তো ভুল হয়। কী সেই ভুল, যা একেবারে ভেস্তে দিতে পারে সব?

১. ভাত যতই বাঙালি জীবনের অঙ্গ হোক না কেন, রোজ সুসিদ্ধ অথচ ঝরঝরে ভাত রাঁধতে পারা ‘সিদ্ধিলাভ’-এর চেয়ে কম কিছু নয়। ভাত বানানোটা অঙ্কের মতো। আর সেই অঙ্ক মেনে প্রতি দিনই ঝরঝরে ভাত হয়। যে পাত্রে ভাত রাঁধা হয়, তার থেকে আঙুলের দু’গাঁট কম পানি নিতে নেয় কেউ কেউ। আর পাত্রের মুখ ঢাকনা দেয় না। ফুটে গেলে আঁচ কমিয়ে দেয়া হয়। এ ভাবে ঠিক ৩০-৩৫ মিনিটের মধ্যে ভাত ঝরঝরে সিদ্ধ হয়ে যায়।

২. কেউ কেউ আবার মনে করেন ভাত রান্নাকে ওই রকম অঙ্ক দিয়ে মাপা যায় না। ভাত রাঁধার  বাঁধাধরা নিয়ম থাকতে পারে না। ফলে ভুল হওয়ারও কোনো নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম নেই। ভাত দাঁড়িয়ে দেখে করতে হবে। কারণ, গোটাটাই নির্ভর করছে চালের উপর। আর সব চাল তো সমান হতে পারে না। কোনো চাল তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়। কোনোটা দেরিতে। 

৩. অনেকেই বাড়িতে গলা ভাত খেতে পারেন না। কিন্তু নিজে যখন রাঁধতে যায়, কিছুতেই ঝরঝরে ভাব আনতে পারেন না। অগত্যা যা হয়, তাই খান। অনেকেই পাত্রের মুখে চাপা নিতে বলেন। মাঝেমধ্যে অন্য কোনো কারণে ভাত গললেও, তাড়াহুড়োর জীবনে ওই সামান্য টোটকায় মোটামুটি নিজের জন্য ঝরঝরে ভাত বানিয়ে ফেলতে পারেন। অর্থাৎ, বাঙালি হয়েও ভাত রান্নায় ‘সিদ্ধি’ লাভ না করাটা লজ্জার নয়। এমন হামেশাই ঘটে আসছে। 

রাঁধুনিরা বলছেন, ভাত বানানোর ব্যাপারে এত রকম পরামর্শ আর টোটকা চালু আছে যে, সে সব শুনে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়াই স্বাভাবিক! চাল কতটা ধোবেন? কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখা হবে? পানি কতখানি দিতে হবে? হাঁড়ির ঢাকনা খোলা যাবে কি না! ভাত রান্না নিয়ে যেমন প্রশ্নের শেষ নেই, তেমনই শেষ নেই নানা ধরনের উত্তরের।

পাকা রাঁধুনিরা যদিও বলছেন, ভাতে বাড়ুক বা না বাড়ুক, পুরনো চালের ক্ষেত্রে জলের মাপে সামান্য হেরফের হলে ভাত হঠাৎ করে গলে যায় না। কিন্তু নতুন চালের ক্ষেত্রে জল নিয়ে অনেকটাই সাবধান হতে হবে। কারণ, নতুন চাল যেহেতু অনেক বেশি নরম, তাতে ‘স্টার্চ’-এর পরিমাণও বেশি। সামান্য বেশি জলেই তাই গলে যেতে পারে ভাত। তবে বাঙালি হেঁশেলের চাবি যাদের আঁচলের খুঁটে বাঁধা, তাদের পরামর্শ নিলে দেখা যাচ্ছে। ভাত রান্নায় একটি ভুল এড়িয়ে চলেন অনেকেই। তা হল পাত্রের মুখে চাপা দেওয়া। চাল কেমন হবে, তা হাতে নেই। কিন্তু পাত্রের উপর ঢাকা দেবেন কি না দেবেন, তা নিজের হাতেই। হাঁড়ি যদি রান্নার সময়ে খোলা থাকে, তবে ভাত গলে যাওয়ার আশঙ্কা কম। তাই ওই একটি ভুল এড়ালেই ভেতো বাঙালি সুখে থাকবে মাছ আর ঝরঝরে ভাতে।

এম হাসান

×