ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১

স্বাভাবিক প্রসবে দৃষ্টান্ত কমিউনিটি ক্লিনিক

তাহমিন হক ববী

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ১৬ আগস্ট ২০২৪

স্বাভাবিক প্রসবে দৃষ্টান্ত কমিউনিটি ক্লিনিক

নীলফামারী জেলা সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৪৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক

নীলফামারী জেলা সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৪৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিধি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। গ্রামীণ জীবনে স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি গ্রামীণ অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূদের স্বাভাবিক প্রসবেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর সফল উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এ জন্য নীলফামারী সদর উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্প (ইউজিডিপি) কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ডেলিভারি কক্ষ নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।

ইতোমধ্যে আটটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ডেলিভারি কক্ষ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। আরও আটটিতে এই কক্ষ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ধাপে ধাপে জেলা সদরের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নরমাল ডেলিভারি কক্ষ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নীলফামারী সদর উপজেলা পরিচালন কমিটি। নবনির্মিত ডেলিভারি কক্ষের সেবায় গ্রামীণ গৃহবধূরা সন্তান প্রসব করছে তাদের হাতে পুরস্কারও তুলে দিচ্ছেন সদর উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ ও নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার।

নীলফামারী সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানালেন গর্ভবতী নারীদের সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়া থেকে ফিরিয়ে আনতে স্বাভাবিক প্রসবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। জেলা সদরের বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকে গত বছর থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ৪৯ জন গ্রামীণ গৃহবধূরা স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসব।

তিনি জানান, নীলফামারী সদর উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্প (ইউজিডিপি) কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ডেলিভারি কক্ষ নির্মাণ করে দিয়েছেন। ফলে  এমন স্বাস্থ্য সেবায় ক্লিনিকের পরিধি বাড়ছে। রোগী তার নিজের প্রসবের ধরন নিজেই পছন্দ করে নেন। কিন্তু এটা উচিত নয়। তিনি বলেন, নরমাল সবকিছুই ভালো, এটা প্রকৃতির নিয়ম। আমরা যখন প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে সিজার করি সেটা অনিয়ম।

নিয়ম মতো চলার অনেক উপকার রয়েছে। এটা মা ও বাচ্চা উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক। সুবিধার মধ্যে রয়েছে মা ও বাচ্চার। প্রদাহ কম হয়। খরচ নেই। জরায়ুতে কোনোরূপ দাগ হয় না। বাচ্চা জন্মের পরে শ্বাসকষ্ট কম হয়। মায়ের বুকের দুধ ভালোভাবে খেতে পারে নবজাতক। তাই যে এলাকার গৃহবধূরা গর্ভবতী তাদের তালিকা করা হয় কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে। পাশাপাশি জন্য প্রতিনিয়ত কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা গর্ভবতী মায়েদের সচেতন করে যাচ্ছে। 
জেলা সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের বর্ম্মতল গ্রামের নায়িম হোসেনের স্ত্রী রিয়ামনি আক্তার (২০) জানান, আমার বিবাহিত জীবনের প্রথম ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছি। ২২ জুলাই কচুকাটা বানিয়াপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের ডেলিভারি কক্ষে আমার স্বাভাবিক সন্তান প্রসব হয়। এ জন্য আমাকে ও আমার নবজাতক সন্তানকে উপজেলা চেয়ারমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপহার দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রথম সন্তানে ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু এই কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত চেপআপ করি। ফলে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। 
আরেক গৃহবধূ ইসমত আরা বললেন আমার স্বামী ফেরদৌস আলম দালালদের খপ্পরে পড়ে আমার প্রথম সন্তানের প্রসবে সিজার করিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তান প্রসবে আমি আর সিজার করাইনি। কমিউনিটি ক্লিনিকের নতুন ডেলিভারি কক্ষে আমার স্বাভাবিক ভাবে দ্বিতীয় সন্তান প্রসব হয়। 
নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবেও আলোচিত। জাতিসংঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্যোগকে বিপ্লব হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তিনি জানান, গ্রামীণ জনগণের অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসাসেবা বিতরণে প্রথম স্তর কমিউনিটি ক্লিনিক।

তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুসারে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। এখানে কর্মরত কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার, স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে।

নারী কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার, স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীরা ক্লিনিকে আগত সেবা গ্রহণকারীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটেশন, সুষম খাদ্যাভ্যাস, টিকার সাহায্যে রোগ প্রতিরোধ, কৃমি প্রতিরোধ, বুকের দুধের সুফল, ডায়রিয়া প্রতিরোধ এবং পুষ্টি সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।

নীলফামারী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ বলেনÑ সদর উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্প (ইউজিডিপি) কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ডেলিভারি কক্ষ নির্মাণ করে দিচ্ছে। এইখানে জাইকার প্রতিনিধি বিভা রানী রায়ের সহযোগিতায় আমরা ইতোমধ্যে ৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব কক্ষ নির্মাণ করে দিয়েছি। আরও আটটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

ধাপে ধাপে সদর উপজেলার ৪৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব কক্ষ নির্মাণ করে দেওয়া হয়। জাইকা প্রতিনিধি বিভা রানী রায় জানান, প্রতিটি গ্রামে জরিপ পরিচালনা করে দেওয়া যায়। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কক্ষগুলো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিশেষ করে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য পৃথক কক্ষ প্রয়োজন।

তাই  জাইকার মাধ্যমে সদর উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্প (ইউজিডিপি) জেলা সদরে ৮টি স্বাভাবিক প্রসব কক্ষ নির্মাণ করে দেওয়া হয়। আমাদের জরিপে এ পর্যন্ত এই কক্ষগুলোতে ৪৬ জন মা স্বাভাবিক প্রসবে সন্তান জন্ম দেন।

×