ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

নারী কোটা বাদ নারী সমাজের প্রতিক্রিয়া

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:৫৯, ২৬ জুলাই ২০২৪

নারী কোটা বাদ নারী সমাজের প্রতিক্রিয়া

নারী কোটা বাদ নারী সমাজের প্রতিক্রিয়া

সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ উন্নয়নযাত্রার মূল্যবান সূচক। সেখানে যে কোনো একটা অংশের পশ্চাদগাদিমতা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হয় না। বাংলাদেশের সমসংখ্যক নারী উন্নয়ন অভিগামিতায় সামনের দিকে এগিয়ে চললেও হরেক বিপন্নতার শিকার হতে হয়। নারী শিক্ষা প্রসারিত হচ্ছে বর্তমান শতকের সূচনালগ্ন থেকেই। যদিও সংখ্যায় এখনো তারা অপ্রতুল। অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা নারীদের নিত্যজীবন সংগ্রামে সামাজিক দুরবস্থাও এক আপদকালীন সময়।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে প্রতীয়মান হয় সিংহভাগ নারী এখনো পশ্চাৎবর্তিতার কোপানলে আবর্তিত। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে সাধারণ নারীদের অবস্থা এখন পর্যন্ত খুব স্বস্তিদায়ক নয়। মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের ধারায় নারী-পুরুষের সমতায়ন দেশের জন্য মঙ্গলজনক হলেও বাস্তবে তার চিত্র উল্টা। সেখানে নারী নেত্রীরা সংশ্লিষ্টদের জন্য সুষম পেশাভিত্তিক একটি সমাজ গঠনের ওপর জোর দাবি তোলেন। বর্তমানে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওজর আপত্তিকে বিবেচনায় এনে নতুন করে সঠিক সিদ্ধান্তে আসাও খুব দরকার ছিল।

সম্মিলিত শিক্ষার্থী আন্দোলনে নতুন কোটায় যে সংস্কার আসে সেখানে ৯৩% মেধা ও মনন যাচাইয়ে। ৫% মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, ১% ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, বাকি ১% বিকলাঙ্গ, শারীরিকভাবে অসুস্থ তৃতীয় লিঙ্গ তাদের জন্য। সেখানে অনাবশ্যকভাবে বাদ পড়ে যায় সমাজের সমসংখ্যক নারীর ১০% কোটা। এটা কোনোভাবেই সঙ্গত এবং বাস্তবসম্মত হয়নি বলে অভিযোগ আসছে নারী নেত্রীদের কাছ থেকে। 
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জোরকণ্ঠে বলে যাচ্ছে সমাজে সমতা আনতে হলে নারী কোটার বিকল্প হয় না। ডা. ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় কোনো একটি অংশ উন্নয়নের ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হলে সার্বিক প্রবৃদ্ধি দৃশ্যমান হতে আরও সময় পার করতে হবে। এটা কখনোই সমৃদ্ধির মূল সোপানে গ্রহণযোগ্যতা পায়ই না। তাই নারী-পুরুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণ উন্নয়ন অভিগামিতার সহযোগী শক্তি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নতুন সম্ভাবনাময় দিকনির্দেশনা আসলেও আগের বরাদ্দ করা ১০% নারী কোটা বাতিল করা হয়। যা সময়ের বিবেচনায় ন্যায্যতা পায় না। তাই নারীদের জন্য আলাদা কোটা বাঞ্ছনীয় ও সময়োপযোগী। সেটা পুনর্বহাল করাও সমসংখ্যক নারীর জীবনমান নিশ্চিত ও মর্যাদায় অভিষিক্ত করা। মহিলা পরিষদ ছাড়াও দেশের অন্যান্য নারী সংগঠনও কোটার জন্য আবেদন জানিয়েছে। নারীরা পিতার সম্পত্তিতেও সমান অধিকার পায় না। 
প্রচলিত আইন ও ধর্মীয় বিধি অনুসারে যা নির্ধারণ করা আছে সেটা সংশ্লিষ্টদের প্রতি এক প্রকার অবিচার। তবে মেধা ও মননে নারী সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে এমন দৃশ্যও স্বস্তিদায়ক। তার পরেও গ্রামনির্ভর বাংলাদেশে বহু নারী এখনো শিক্ষা, কর্মজীবী ও ক্ষমতায়নে ক্রমাগত পিছিয়ে থাকার দৃশ্যও হতাশাব্যঞ্জক। তাই নারীদের জন্য অন্তত ১০% কোটা বরাদ্দ জরুরি এবং ন্যায্য দাবি বলাই যায়। যোগ্যতাসম্পন্ন নারী মেধা ও মননে পুরুষদের থেকে খুব পেছনেও থাকে না। সেখানে সমাজের অবহেলিত, পশ্চাৎগামী নারীর জন্য কোটা বরাদ্দ ও সমসংখ্যকের জীবনমান এগিয়ে নেওয়া।

দেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সম্মুখ সমরের নারী যোদ্ধারা কখনো কোনো কিছুর আকাক্সক্ষায় স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশই নেয়নি। সেখানে বীরাঙ্গনারাও কোটা পেয়েও না নেওয়ার চিত্র উঠে আসাও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি পরম শ্রদ্ধা ও নিবেদন। কিন্তু সময়ের বিবেচনায় অনেক নারীর দুর্ভাগ্য সমাজ সংস্কারের অনভিপ্রেত অভিঘাত। নারী নেত্রীদের কণ্ঠে সমস্বরে উচ্চারিত হয় আন্দোলন যদি বৈষম্যবিরোধী হয় তা হলে নারীদের যথার্থ অধিকার প্রাপ্যতা না দেওয়াও সমতার সীমারেখা লঙ্ঘিত হওয়া। এমনকি রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগও নারীর প্রতি সমতার দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শনে বারবার পিছিয়ে থাকাও তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ। 

অপরাজিতা প্রতিবেদক

×