ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

 পৌষ সংক্রান্তি ও সাকরাইন

প্রকাশিত: ২০:২৯, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪

 পৌষ সংক্রান্তি ও সাকরাইন

.

মাত্রই শেষ হয়ে গেল শীতের প্রথম মাস পৌষ। যার সঙ্গে সম্পৃক্ত পৌষ সংক্রান্তি শব্দটি। বাঙালির উৎসবের শেষ নেই। সারা বছরই কোনো না কোনো উৎসব লেগে থাকে। বিভিন্ন রকম ধর্মীয়, দেশীয়, সাংস্কৃতিক, ঋতুগত ইত্যাদি কত উৎসব যে থাকে! এজন্যই বলা হয়, বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। সেই ১৩ পার্বণের একটি পৌষ সংক্রান্তি। পুরান ঢাকায় যা কিনাসাকরাইনবাঘুড়ি উৎসবনামে পরিচিত। কথিত আছে, ১৭৪০ সালে নবাব নাজিম মুহম্মদ খাঁ এই ঘুড়ি উৎসবের সূচনা করেন।

সেই থেকে উৎসব পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় এই দিবস বা ক্ষণকে ঘিরে উদযাপিত হয় উৎসব। নেপালে এই দিবসটি মাঘি নামে, থাইল্যান্ডে সংক্রান, লাওসে পি মা লাও, মিয়ানমারে থিং ইয়ান এবং কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান নামে উদযাপিত হয়। দেশভেদে এর নামের মতোই উৎসবের ধরনেও পার্থক্য থাকে। পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, দয়াগঞ্জ, গে-ারিয়া, বাংলাবাজার, ধূপখোলা মাঠ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সদরঘাট, কোর্ট-কাছারিসহ পুরো এলাকার মানুষই পালন করে এই উৎসব। দিনভর ঘুড়ি উড়ানো, প্রতিবেশী বা বন্ধুরা মিলে পিকনিক, ঘুরে বেড়ানো আর নাচ-গানে মেতে ওঠে। সন্ধ্যা পর্যন্ত আকাশ ভরে থাকে রং-বেরঙের ঘুড়িতে। পুরান ঢাকার সব বাড়ির ছাদে ঘুড়ি হাতে ভিড় জমায় ছেলে-বুড়ো থেকে সবাই। ঘুড়ি উৎসবের অন্যতম একটি মজার বিষয় হচ্ছে- কাটাকাটি। কে কত বেশি ঘুড়ি কাটতে পারে, চলে সেই প্রতিযোগিতা। একটা ঘুড়ি কাটলেই সবাইভোকাট্টা লোটবলে চিৎকার করে ওঠে।

উৎসবের কয়েকদিন আগে থেকে শুরু হয় সুতায় মাঞ্জা দেওয়ার কাজ। এই মাঞ্জা দেওয়ার বিষয়টাও খুব মজার। ছোটবেলায় আমার ভাইদের দেখেছি নষ্ট বাল্ব নিয়ে পাটায় পিষে গুঁড়ো করে চুর বানাত। শিরিষ, চুর আর রং দিয়ে জ্বাল করে এক ধরনের আঠা তৈরি করত। সুতা আঠায় ডুবিয়ে রেখে কত কায়দা করে যে এই মাঞ্জা দেওয়া হতো! সারাদিন যেত মাঞ্জার পেছনে।

সন্ধ্যার পর শুরু হয় সাকরাইনের আরেক বর্ণিল উৎসব। আকাশ ভরে যায় ফানুস আর আতশবাজিতে। সঙ্গে থাকে পটকা, বিভিন্ন রকম লাইটিং আর উচ্চ শব্দের গান-বাজনা। প্রতিটি ছাদে বইতে থাকে আনন্দের বন্যা। চলে বারবি কিউ পার্টি। আরও একটি খেলায় মেতে ওঠে পুরান ঢাকার ছেলেমেয়েরা- মুখে কেরোসিন নিয়ে ফুঁ দিয়ে আগুনের ফুলকি উড়িয়ে দেয়। ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুয়ায়ীসংক্রান্তএকটি সংস্কৃত শব্দ। দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। শহুরে এই যান্ত্রিক জীবনে ছোট ছোট এই উৎসবগুলো বাঙালির হৃদয়ে প্রাণ সঞ্চার করে। তবে এই সামান্য উৎসব যেন অন্যের জীবনে বিপদ ডেকে না আনে সেদিকেও সজাগ থাকতে হবে। আতশবাজি, ফানুস, উচ্চ শব্দে গান- এসবের কারণে আমাদের আশপাশের শিশু, বয়স্ক, অসুস্থ ব্যক্তি বা অন্য কারও জীবনে যেন বিপদ ডেকে না আনে।

যাপিত জীবন প্রতিবেদক

×