.
ইংরেজি ভাষায় ১৩ থেকে ১৯ পর্যন্ত সংখ্যার শেষে ঞববহ থাকে। তাই এই বয়সী ছেলে-মেয়েদের সহজে বোঝার জন্য এদের টিনএজার বলা হয়। এই ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী টিনএজার ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনও ঘটতে শুরু করে। তাদের মনে উঁকি দিতে থাকে নতুন নতুন প্রশ্ন। জীবন সম্পর্কে তারা অনেক বেশি আগ্রহী, কৌতূহলী হয়ে পড়ে। আর সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা, ধারণা তো আছেই। সেই ধারণা কখনো সুখের আবার কখনো বা বেদনাদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। আর এই যে বিশেষ সময়, সেই সময়টাতে তাদের কার্যাবলির দিকে তীক্ষ নজর রাখা যেমন খুব জরুরি, তেমনি তাদের ভবিষ্যতে সঠিকভাবে গড়ে ওঠবার দিক নির্দেশনাও দেওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়ে।
যেহেতু বয়োসন্ধিকাল ছেলে-মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের দ্রুততম একটি পর্যায়। তাই এই সময় যথাযথ পুষ্টি প্রয়োজন। আর যদি এই যথাযথ পুষ্টির ঘাটতি থেকে যায় তবে তাদের মধ্যে বিষণ্ণতা, বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব, মানসিক ট্টমা ইত্যাদির শিকার হয়।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটা দেখা যায় যে, পুষ্টিকর খাদ্য যে কেবল শারীরিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন তা কিন্তু নয়, বরং মানসিক বিকাশেও এটি খুবই প্রয়োজন। পরিমিত ঘুম এই বয়সে খুব প্রয়োজন। আজকাল অনেক ছেলে-মেয়েরাই রাত জেগে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সময় কাটাতে খুবই পছন্দ করে। কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে তাদেরকে যদি ওয়াকিবহাল করা, হয় তবে মনে হয় এটা অনেকাংশেই কমে যেতে পারে। এছাড়াও উচ্চমাত্রায় লবণযুক্ত খাবার বর্জন করে ফাইবার জাতীয় খাবার, ব্যায়াম, রোদে হাঁটা ইত্যাদি কাজ করলে শরীর অনেক ভালো থাকবে। পাশাপাশি মাছ, মাংস, মুরগি, সবুজ শাক, শুকনো ফল ইত্যাদিও খাওয়া যেতে পারে। বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা অনেক বেশি ফিগার সচেতন হওয়ায় চর্বি জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে দেয়। কিন্তু কিছু ফ্যাটি এসিড যেহেতু শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন এই বয়সে তাই তাদের প্রয়োজনীয় কিছু ফ্যাটি এসিডযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে- যেমন চিয়াসিড, আখরোট ও অন্যান্য বাদাম।
টিনএজারদের আমরা অনেক সময় নিজেদের মতো করে ছেড়ে দিই। ভাবি ওরা তো অনেক বড় হয়েছে, বুঝতে শিখেছে। কিন্তু তেমনটা ভাবা মোটেও সুখকর নয়। কেননা এই সময়টাতে চিন্তা-ভাবনার পরিপক্বতা আসে না। আর সঠিক নির্দেশনা দিতে হলে ওদের সময় দেওয়ার বিকল্প নেই। তাই ওদের বেশি বেশি সময় দিতে হবে। টিনএজাররা অনেক সময় প্রেমে জড়িয়ে পড়তে পারে। আর তাই এই সময়টাতে মা-বাবাকে খুব যত্নশীল হয়ে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে এবং নজর রাখতে হবে তারা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কাদের সঙ্গে মিশছে এই ব্যাপারগুলোতে। আর যদি তারা প্রেমঘটিত ব্যাপারে জড়িয়ে যায়, তবে তাদের বকাঝকা না করে বরং সবকিছু বুঝিয়ে আনলেই এর সুফল পাওয়া যেতে পারে। যেহেতু এই টিনএজ সময়টা ভবিষ্যতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় তাই তাদের ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য যেমন গঠনমূলক সব বই পড়া যেতে পারে, পাশাপাশি ডিবেটিং, প্রোগ্রামিং, আবৃত্তি, ছবি আঁকা, গণিত উৎসব, বিজ্ঞান উৎসব ইত্যাদিতে অংশ নিতে পারে তাদের শখ অনুযায়ী। এতে যেমন তাদের বিনোদনের একটা ব্যবস্থা হবে তেমনি ভবিষ্যৎ বুনিয়াদও মজবুত হবে। এছাড়াও এই বয়সে ছেলে-মেয়েদের আমরা রান্না শেখানো, সংসারের ছোটখাটো কাজও করতে উৎসাহিত করতে পারি। এতে যেমন পরিবারের সবার প্রতি একটা শ্রদ্ধার ভাব আসবে, তেমনি তাদের ভবিষ্যতের জন্যও অনেক উপকার বয়ে আনবে।
এ সময় তারা নিজেকে বড়দের মতো ভাবতে পছন্দ করে, বড়দের মতো সাজে। অভিভাবক হিসেবে আমরা যা করতে পারি তা হলো, ছেলে-মেয়েদের সামনে নিজেদের আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা, যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা, পরিবারের সবাই একসঙ্গে সময় কাটানো, ভবিষ্যৎ সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উৎসাহ দান, অন্য ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তুলনা না করা ও তাদের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতিকে মূল্য দেওয়া। পরিবারের সকল সদস্যদের মধ্যে যদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে ও সঠিক স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় থাকে, তবে এই টিনএজাররা তাদের সঠিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালীভাবে গড়ে উঠতে পারবে।