
হাঁটু ব্যথা
মানুষের অনেক সম্পদ থাকার পরেও অনেক সময় আমরা দারুন অসুখী হতেই পারে। এ বাক্যটির সম্পূর্ণ সত্যতা আমরা উপলব্ধি করি যখন আমরা অসুস্থ্য হই। আর সেই অসুস্থতা যদি হয় হাঁটু জনিত অসুস্থতা বা হাঁটু ব্যথা।
হাঁটু ব্যথা নাই এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না। হাঁটু ব্যথা বললেই মনে হয় এইটা বয়স্ক লোকের অসুখ। কিন্ত আমি বলব না। হাঁটু ব্যথা অল্প বয়স্ক লোকেরও হতে পারে। অল্প বয়সের লোকদের যে ধরনের হাঁটু ব্যথা হয় সেইরকম হাঁটু ব্যথা বয়স্ক লোকদের সাধারণত হয় না। বিভিন্ন বয়সে, বিভিন্ন কারণে হাঁটু ব্যথা হয়ে থাকে। যেমন- ৭ বছর বয়স্কদের হাঁটু ব্যথা হয় সাধারণত রিকারেন্ট ডিসলকেশন অব পেটেলার জন্য, ১৫ বছর বয়স্কদের হাঁটু ব্যথা হয় সাধারণত অস্টিওকনড্রাইটিস ডিসিকেন রোগের জন্য। ২৫ বছর বয়স্কদের হাঁটু ব্যথা হয় মিনিস্কাস ইনজুরির জন্য, ৬৫ বছর বয়স্ক লোকদের অস্টিওআর্থ্রাইটিস-এর কারণে বেশি হাঁটু ব্যথা হয়।
কিন্তু অল্প বয়সের রোগীদের অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয় না বললেই চলে। সেজন্য আমি হাঁটু ব্যথার রোগীদের জন্য প্রথমেই সঠিক ইতিহাস জেনে নেই। হাঁটুতে অনেক ধরনের স্ট্রাকচার আছে। চিকিৎসার আগে আমাকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে অথবা পরিক্ষা করে বের করতে হবে হাঁটুর কোন স্ট্রাকচারে অসুবিধা।
হাঁটু ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ইতিপূর্বেই আমি বলেছি পরীক্ষা করে বের করতে হবে তার কোন স্ট্রাকচারে অসুবিধা। আমরা মিসেস ফৌজিয়া রব বয়স ৬৩ বছর। গত আড়াই বৎসর যাবৎ ডান হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন। এখন একটি লাঠি ব্যবহার করে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটেন। তাঁর হাঁটু পরিক্ষা করতে গিয়ে প্রথমেই দেখলাম ডান হাঁটু উঁচু হয়ে আছে। অর্থাৎ বাম হাঁটু যেমন বিছানায় লেগে আছে ডান হাঁটু বিছানায় লেগে নেই। উপুর হয়ে শুইয়ে দুই হাঁটু বাঁকা করে ঘুরালি বাটক (পাছা)-এর সঙ্গে লাগাতে বলায় বাম পা লাগাতে পারে কিন্তু ডান পায়ের হাঁটু নব্বই ডিগ্রীর বেশি বাঁকা করতে পারে না। এই অবস্থাকে আমরা বলে থাকি হাঁটুর ক্যাপসুল-এ অসুবিধা বা ক্যাপসুলার প্যাটার্ন। তাঁর মিডিয়াল হেমেস্ট্রিং, মিডিয়াল ও লেটারাল কোয়ার্ড্রিসেফ এ্যাক্সপানসান, পপলিটিয়াস ও গ্যাস্টোক নিমিয়াসের লং হেডে টেন্ডার।
মিসেস ফৌজিয়ার জন্য সঠিক চিকিৎসা হবে সঠিক পদ্ধতিতে ওয়াক্সপ্যাক দিয়ে দিনে ২বার স্ট্রোকিং করা। তারপর নিয়ম অনুযায়ী উপরোক্ত যে টিস্যুগুলো অসুস্থ ঐ টিসুর মোবালাইজেশন করা। তারপর লেজার ও আল্ট্রাসাউন্ড দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। আস্তে আস্তে অসুস্থ্য টিসু বা মাসেলের স্ট্রেসিং ও স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজ করতে হবে। এই চিকিৎসায় আশা করি মিসেস ফৌজিয়া রব অবশ্যই ভাল বোধ করবেন। কিন্তু এই চিকিৎসার জন্য তাঁকে সময় দিতে হবে বেশ কয়েক সপ্তাহ। সঠিক চিকিৎসা না নিলে হাঁটুর আরও অনেক কষ্টই হতে পারে। যেমন- দৈনন্দিন যে সমস্ত কাজ আমরা করি ঐ কাজগুলো ব্যহত হবে।
লেখক
প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার
মাস্কুলোস্কেলিটাল বিশেষজ্ঞ
এস