সানজিদা ছোঁয়া
উন্নয়নশীল বাংলাদেশ বিভিন্ন সূচকে যে মাত্রায় এগিয়ে চলেছে তা শুধু দৃষ্টি নন্দনই নয়, বরং বিশ্ব পরিসরেও নজরকাড়া। সেখানে সমসংখ্যক নারীরাও কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকছে না। সমৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে নারীর জোরালো অংশীদারিত্ব আন্তর্জাতিক সীমানায় ও নন্দিত, বহুল আলোচিত। সম্প্রতি বিবিসির ২০২২ সালে প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের এক উদীয়মান তরুণী শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া।
বর্তমানে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে স্বাস্থ্যসেবায় যুগান্তকারী অবদান রাখার জন্য সেখানকার নারীও এমন প্রভাবশালীর তালিকায় নিজের অবস্থান স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়েও নিয়েছেন। আর বাংলাদেশের ছোঁয়াও তাবৎ বিশ্বকে চমক আর মুগ্ধতার ছোঁয়ায় মাতিয়ে দিলেন। সত্যিই দেশের জন্য এক গৌরবময় অর্জন তো বটেই। চার ক্যাটাগরিতে এমন দুর্লভ পুরস্কারকে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের বিশ্ব সম্মানে অভিষিক্ত করা হয়।
রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সঙ্গে অধিপরামর্শ ও সক্রিয়তায় অবদান রাখার অনন্য দৃষ্টান্তে। আর ছোঁয়া পেয়েছেন অধিপরামর্শ ও সক্রিয়তায় বিশেষ ভূমিকা রাখার নিমিত্তে। বাংলাদেশের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এক পুরনো অভিশাপ বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে ছোঁয়ার অভাবনীয় কর্মযোগ বিশ্বদরবারে গিয়ে পৌঁছানো সত্যিই এক অহঙ্কার এবং পরম বিজয় নিশানা।
বাল্যবিয়ে শুধু গতানুগতিক অপসংস্কার কিংবা জঞ্জালই নয় তার চেয়েও বেশি অগণিত বালিকার জীবন ও ভবিষ্যৎ জলে ভাসিয়ে দেওয়ার মতো এক প্রথাসিদ্ধ বিধি। বাংলাদেশের ময়মনসিংহের তরুণী এই সানজিদা ইসলাম। নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের ঝাউপাড়া গ্রামের মেয়ে এই বিশ্বজয়ী ছোঁয়া। বর্তমানে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছোঁয়া যখন কিশোরীর অনুভবে নিজেকে সবকিছু থেকে সুরক্ষিত রাখতে নজর দিলেন সেখানে বাল্যবিয়ে নামক চিরায়ত অপসংস্কার থেকে অবোধ বালিকাদের বের করে আনাও তার কঠিন ব্রতে উজ্জীবিত হতে লাগল।
নিজের মায়ের বাল্য বিয়ে তাকে সব সময় ভাবিয়ে তুলতো। মনে হতো অতি অল্প বয়সে মাকে যদি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে না হতো তাহলে জীবনটা বোধ হয় সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতে মোড় নিতে পারতো। সেখান থেকেই বাল্য বিয়ের প্রতি ছোঁয়ার প্রচ- ক্ষোভ। তখন থেকেই তিনি যেখানেই বাল্যবিয়ের আভাস পেতেন সদল বলে শিক্ষক ও সহপাঠীদের নিয়ে ছুটে যেতেন তা ঠেকানোর লক্ষ্যে।আর সেভাবেই সুনজরে পড়ে যান ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের।
শুধু কি নজরে আসা? কালক্রমে প্রভাবশালীর স্থানে জায়গা করে নেওয়াও এক চমৎকার ও অভিনব অর্জন। ঘাসফড়িং নামে সংগঠন তৈরি করে সাতজনের এক সম্মিলিত কর্মযোগে সানজিদার বাল্যবিয়ে ঠেকানো এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এই পর্যন্ত ৭০টি বাল্যবিয়ে বানচাল করার কৃতিত্ব দেখায় সাতজনের এই অকুতভয় বাহিনী। শুধু বাল্যবিয়ে রোধ করা নয় আরও এক কঠিন দুঃসহ প্রথা যৌতুকের বিরুদ্ধেও লড়াইয়ে নেমেছেন সানজিদাসহ তার নিকটতম সতীর্থরা।
এমন উৎসাহব্যঞ্জক এবং আশান্বিত হওয়ার প্রেরণা হৃদয়ে ধারণ করে সানজিদা বিশ্বকেও চমক লাগিয়ে দিলেন। দেশের অর্ধাংশ নারীর সবক্ষেত্রে নজরকাড়া অভিযাত্রা দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধি সোপানে নিয়ে যাওয়াও এক অনন্য অর্জন। বিজয়ের মাসে এই বিশ্ব খ্যাতি সত্যিই আরও অনেককে উৎসাহ উদ্দীপনায় এগিয়ে যেতে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করবে।
অপরাজিতা প্রতিবেদক