ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

এ সময়ের জ্বর

লে. কর্নেল ডাঃ নাসির উদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ১৮ জুলাই ২০২২

এ সময়ের জ্বর

জ্বর

এই গরমের মৌসুমে জ্বরের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে গেছেএ সময় জ্বর হলে ডেঙ্গু, করোনা এবং সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের কথা সর্বাগ্রে মাথায় রাখতে হবেএছাড়া শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, ইউরিন ইনফেকশন, টাইফয়েড ইত্যাদি কারণেও এ সময় জ্বর হতে পারেঅত্যধিক গরমের কারণে তাপপ্রবাহ থেকেও জ্বর হতে পারেজ্বরের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক আরও কিছু লক্ষণাদি দেখে অনেক সময় জ্বরের কারণ নির্ণয় করা সম্ভবতবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাসজনিত জ্বরের লক্ষণ প্রায় একই ধরনেরএ কারণে ডেঙ্গু, করোনা এবং সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের মাঝে প্রথম দু-একদিন পার্থক্য করা মুশকিলজ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, গা হাত-পা-মাথা ব্যথা, অরুচি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে শুরুতে লক্ষণাদির চিকিসা করতে হবেআনুষঙ্গিক লক্ষণ অনুযায়ী প্রথমেই ডেঙ্গু এবং করোনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া দরকার

জ্বর হলে করণীয়-

তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করুনতাপমাত্রা ১০১ক্ক ফারেনহাইট এর বেশি হয় তবে জ্বর কমানোর ব্যবস্থা নিনশিশুদের তাপমাত্রা বেশি হলে অনেক সময় খিঁচুনি পর্যন্ত দেখা দিতে পারেবয়স্কদের তাপমাত্রা অনেক বেশি হলে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারেতাপমাত্রা কমানোর জন্য জলপট্টি বিশেষ কার্যকরীসেজন্য কপালে জলপট্টি দিনগামছা অথবা তোয়ালে পানিতে ভিজিয়ে গা মুছে দিনরোগীকে ফ্যানের নিচে রাখুন কিংবা পাখা দিয়ে বাতাস করুনরোগীকে অপেক্ষাকৃত ঠা-া কক্ষে রাখুনজ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিন

জ্বরের সময় শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়এজন্য পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করুনসাধারণ পানি, শরবত, ফলের রস, ডাবের পানি, স্যালাইন পানি গ্রহণ করুনচা, কফি, এ্যালকোহল এগুলো পরিহার করুনকারণ এগুলো মৃদ মাত্রার পানি শূন্যতা সৃষ্টি করতে পারেএ সময় বেশি ঠা-া পানিতে গোসল করা যাবে নাএতে রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হয় ফলে শরীরে তাপ আটকে থাকেজ্বরের সময় ঘরে বিশ্রাম নিনকেননা শারীরিক পরিশ্রম তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে

রোগীকে পর্যাপ্ত পুষ্টি দায়ক খাবার সরবরাহ করা জরুরীএ সময় মুখে রুচি উবে যায়মৌসুমী ফল, সহজ পাচ্য খাবার, নরম খিচুড়ি, সুপ ইত্যাদি খেতে দিনআম, আনারস, পেয়ারা, কমলার মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-সিসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান রয়েছে যা প্রদাহ দমনে সাহায্য করে

রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছেখাদ্য তালিকায় আমিষ বা প্রোটিন যোগ করুনমাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত প্রাণিজ আমিষ রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে

কখন চিকিসকের পরামর্শ নেবেন-

তিন দিন বাসায় চিকিসা করার পরেও জ্বর না কমলে কিংবা জ্বরের মাত্রা যদি অত্যধিক হয় তবে অবশ্যই চিকিসকের পরামর্শ নিতে হবেজ্বরের সঙ্গে প্রচ- মাথাব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, বারবার বমি, চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ, হৃদস্পন্দন অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়া, শ্বাসকষ্ট, এলোমেলো আচরণ, অসংলগ্ন কথাবার্তা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে বিলম্ব না করে চিকিসকের পরামর্শ নিতে হবে

প্রতিরোধ-

অধিকাংশ জ্বরের কারণ হচ্ছে ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণএ সমস্ত জীবাণু প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত হাত ধৌতকরণের অভ্যাস রপ্ত করা খুবই জরুরীবেশিরভাগ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া আমাদের নাক এবং মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করেএগুলো প্রতিরোধের জন্য সর্বোত্তম টিকা হচ্ছে হাত ধৌতকরণের এই অভ্যাসটিসবার জন্য পৃথক বাসন-কোসন, গ্লাসের ব্যবস্থা রাখাহাঁচি-কাশির সময় অবশ্যই নাকে মুখে রুমাল ব্যবহার করাবাইরে বেরোলে মাস্ক পরিধান করাঅত্যধিক গরমে রোদের মাঝে ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকাগরমের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় গ্রহণ করাহোটেল-রেস্তোরাঁ, উন্মুক্ত জায়গা থেকে খাবার গ্রহণ না করামশা যাতে কামড়াতে না পারে সেজন্য মশারির ব্যবস্থা করাজ্বর হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ক্ষেত্র বিশেষে আলাদা রাখাসর্বোপরি রোগ প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিদায়ক খাবার গ্রহণ করাএগুলো সবই ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর মোক্ষম প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা

 

লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট,

সিএমএইচ

চেম্বার : আল রাজী হাসপাতাল (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা

মোবাইল : ০১৭৫৬১৭৩৭৬৫ ও ০১৭২৬০৫০৯১২

×