স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু শুধুমাত্র ভারত উপমহাদেশেই নয় তার বৈজ্ঞানিক গবেষণার কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন তিনি পৃথিবীজুড়ে। জগদীশ চন্দ্রের বিজ্ঞান চর্চা পথপরিক্রমায় যাঁর অবদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাঁর স্ত্রী লেডি অবলা বসু। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুরের ছোট্ট একটি গ্রাম তেলিরবাগের দাশ বংশের কন্যা অবলা দাশ বরিশালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি ভর্তি হন কলকাতার বেথুন স্কুলে। শৈশব থেকেই তিনি মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মাইনর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৮১ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ভাল ফল করে মাসিক ২০ টাকা করে বৃত্তি অর্জন করেন। পিতা দুর্গামোহনের একান্ত ইচ্ছা মেয়েকে ডাক্তারি পড়াবেন। তখন কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে নারীদের শিক্ষা গ্রহণের অনুমতি ছিল না। কিন্তু অবলার অদম্য ইচ্ছেশক্তি এবং অনমনীয় দৃঢ়তায় তিনি মাদ্রাজের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডাক্তারি চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা তিনি দিতে পারেননি। যদি পারতেন তাহলে তিনিই হতেন উপমহাদেশের প্রথম বাঙালী চিকিৎসক। ইতোমধ্যে প্রথিতযশা বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর সঙ্গে অবলার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর সহযোগী হিসেবে সারা জীবন জগদীশের পাশে ছায়ার মতো থাকেন।
স্বামীর বিজ্ঞান সাধনার নেপথ্যে প্রেরণাদাত্রী অবলা বসু মেধাবী ছাত্রী ও কিছুটা ডাক্তারি বিদ্যা অর্জনের কারণে জগদীশ চন্দ্রকে বিষয়গতভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে গেছেন আজীবন।
শুধু তাই নয় বিজ্ঞানের একনিষ্ঠ সাধক, জদীশ চন্দ্র যখন গবেষণায় নিমগ্ন থাকতেন স্ত্রী অবলা বসু তখন স্বামীর পাশে নিভৃতচারিণীর মতো সর্বক্ষণিক ছায়াসঙ্গিনী হয়ে থাকতেন। প্রথম বৈজ্ঞানিক সফরে জগদীশ চন্দ্র যখন লন্ডনে যান সে সময় অবলা বসুও তাঁর সঙ্গে ছিল। লিভারপুল ব্রিটিশ এ্যাসোসিয়েশনের বৈজ্ঞানিক সভায় জগদীশ চন্দ্রের বক্তৃতার শ্রোতা ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক লর্ড ক্যালভিন। বক্তৃতা শ্রবণে মুগ্ধ ক্যালভিন প্রথম ধন্যবাদটি দিয়েছিলেন অবলা বসুকেই। ইউরোপে প্রথম বৈজ্ঞানিক অভিযানে জগদীশ চন্দ্র অবলাকে নিয়ে ফ্রান্স, জার্মানি প্রভৃতি জায়গায় বেতার তরঙ্গ নিয়ে তাঁর গবেষণা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গেও অবলা বসুর অত্যন্ত নিকট সম্পর্ক ছিল। নিবেদিতার জীবনের অন্তিম সময়গুলো কাটে অবলা বসুর সঙ্গে। বিদেশিনী নিবেদিতার ভারতপ্রীতিতে যেমন বিমুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ একইভাবে জগদীশ চন্দ্র বসু এবং অবল বসুও। নারী শিক্ষার বিস্তার এবং বিধবা নারী কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে অবলা বসুর বিশেষ অবদান গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করা যায়। নারী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে অবলা বসু বাংলাদেশে প্রায় দু’শ’ বিদ্যালয় গড়ে তুলেছিলেন। পিছিয়ে পড়া, বঞ্চিত নারী জাতির প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে শিক্ষা, বিধবা নারীদের জন্য নানা কর্মযোগসহ আরও অনেক কল্যাণমুখী উদ্যোগ নিয়ে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর সুযোগ্য সহধর্মিণী অবলা বসু স্বমহিমায় তাই আজও ভাস্বর।
শীর্ষ সংবাদ: