
কয়েকদিন যাবত বাসায় এবং অফিসে পরার জন্য পুরানো কাপড় চোপর ঘেঁটে বেশ কিছু পাতলা সুতি কাপড়ের ড্রেস বের করেছি। লিনেন ও ভেক্সিভয়েল দিয়ে নতুন দুটি পোশাক বানিয়েও নিয়েছি। ঘরে-বাইরে অসহ্য গরম। অফিসের এসিও ঠিকঠাকভাবে কাজ করছে না। তাই শরীর সহজেই ঘামে ভিজে যায়। আর সুতির কাপড়ের ছাড়া অন্য কোনো পোশাক পরার কথা ভাবলেও গরম লাগে। বেসরকারি অফিসে কর্মরত মিসেস জান্নাতুল এভাবেই জানালেন তার গ্রীষ্মকালের দিন যাপনের গল্প।
গ্রীষ্মকালের গরমে আম, কাঁঠাল ও লিচুসহ নানা রকম রসালো ফল পেকে খাওয়ার উপযোগী হয়। এ সময়ে থাকে ঝলসানো রোদ ও তীব্র গরম। আবার কখনো বৈশাখী ঝড়ো হাওয়া। যা আমাদের শরীরের পাশাপাশি প্রভাব ফেলে প্রতিদিনের পোশাক বেছে নেওয়ার ওপরও। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের জন্য এই সময়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ তারা চায় নিজেকে ট্রেন্ডি ও স্টাইলিশ রাখতে। খুঁজে বেড়ায় এমন পোশাক যা হবে আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল।
কাপড় বেছে নেওয়ায় সচেতনতা
গরমকালে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কাপড়ের ধরন। হালকা ও সহজেই বাতাস প্রবাহিত হয় এমন ফ্যাব্রিক যেমনÑ সুতি, মসলিন, লিনেন, কিংবা ভিসকস উপাদানে তৈরি পোশাক এই সময়ের জন্য উপযুক্ত। এই কাপড়গুলো সহজেই ঘাম শোষণ করে এবং ত্বকে জ্বালা বা গরম লাগার অনুভূতি কমিয়ে দেয়।
রঙে থাকুক ঠান্ডা অনুভূতি
গরমকালে গাঢ় রং যেমন কালো, নীল বা গাঢ় সবুজ সূর্যের তাপ শোষণ করে শরীরকে আরও গরম করে তোলে। তাই এই সময় প্যাস্টেল ও হালকা রঙের পোশাক নির্বাচন করতে হবে। সাদা, পিচ, বেবি ব্লু, লাইট ইয়েলো, ল্যাভেন্ডার বা মিন্ট গ্রিন এই সময়ের জন্য পারফেক্ট চয়েস। তরুণ-তরুণীদের জন্য হালকা ছাপার পোশাকও হতে পারে ফ্যাশনের এক উজ্জ্বল দিক। এই সময়ে খুব বেশি আঁটসাঁট বা ‘বডি-হাগিং’ পোশাক এড়িয়ে চলাই ভালো। বেছে নিতে পারেন ঢিলেঢালা পোশাক। যদিও আজকাল ঢিলেঢালা পোশাক পরা অনেকটা ট্রেন্ডিও বলাও যায়। হালকা কটন বা লিনেন কাপড়ে বানানো লুজ ফিট কুর্তি গরমে বেশ আরাম দেয় এবং দেখতেও স্টাইলিশ লাগে। প্যালাজো ও কুর্তি সেট বাতাস চলাচলের সুবিধা দেয় বলে দারুণ আরামদায়ক। লাইটওয়েট ম্যাক্সি ড্রেসগুলোও গরমে একদম পারফেক্ট, আর সঙ্গে একটা হ্যাট হলে তো কথাই নেই! ট্র্যাডিশনাল লুক চাইলে সালোয়ার কামিজ হবে সঠিক নির্বাচন। শুধু খেয়াল রাখতে হবে ফ্যাব্রিকটা যেন হালকা হয়। এ ছাড়াও হালকা টপসের সঙ্গে ওভারসাইজ প্যান্টস এখন খুব ট্রেন্ডি এবং এক্সট্রা আরামদায়ক।
আজকাল ফ্যাশনেবল মেয়েরা আরাম পেতে বেছে নিচ্ছে শার্ট। এক্ষেত্রে লিনেনের শার্ট গরমে ঘামে না এবং স্কার্ট বা ঢিলেঢালা ট্রাউজারের সঙ্গে খুব স্মার্টও লাগে। আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তরুণ-তরুণীরা বেছে নিতে পারেন স্লিভলেস বা হাফস্লিভ ড্রেসও। কেননা কাঁধ ও বাহু উন্মুক্ত রাখলে শরীর ঠান্ডা থাকে। গরমে শিশুদেরও সুস্থ রাখতে চাইলে অবশ্যই পাতলা সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা পোশাক পরাতে হবে।
হালকা এক্সেসরিজ
গরমকালে ভারি গহনা বা অ্যাকসেসরিজ এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এ সময় ছোট হুপ কানের দুল, হালকা ব্রেসলেট বা স্মার্ট ওয়াচ তরুণ-তরুণীদের ফ্যাশনের ক্ষেত্রে ট্রেন্ডি লুকের পাশাপাশি গরমের অস্বস্তিও আসবে না। গ্রীষ্মের গরম যেমনই হোক সময়, স্থান ও পরিস্থিতি অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করাটাও ফ্যাশনের অংশ। যেমন- ক্যাম্পাস লুকের জন্য হালকা প্রিন্টেড কুর্তি বা টি-শার্ট ও প্যালাজো, বন্ধুদের আড্ডায় ফ্লোরাল ড্রেস বা চেক শার্ট ও চিনো প্যান্ট, অফিসে সলিড কালারের কুর্তা-প্যান্ট বা শার্ট ও ট্রাউজার পরাই উত্তম। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চললেই পোশাকে থাকবে ভারসাম্য আর পরিপূর্ণতা। ফ্যাশন মানেই শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং সেটি স্বাচ্ছন্দ্য ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলনও বটে। সময়োপযোগী পোশাক মানেই ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সচেতন থাকা।
প্যানেল