ছবি : সংগৃহীত
সময়ের পালাক্রমে পোশাকে এসেছে নানা বৈচিত্র্য। তবে বাঙালি নারীরা এখনও কোন্ পোশাক সুন্দর এমন প্রশ্নে প্রথমেই এককথায় বলবে শাড়িতে। যতই পোশাকে আধুনিকতা আসুক শাড়িপ্রীতি বাঙালিদের মধ্যে বরং বেড়েই চলছে। যে কোনো উৎসব ও অনুষ্ঠানে টিনএজ থেকে বৃদ্ধা পোশাকের তালিকায় প্রথম পছন্দই থাকে শাড়ি। তবে এ পোশাকটির রয়েছে আবার নানা রকমফের। জামদানি, টাঙ্গাইল ও তাঁতসহ বিভিন্ন নামের শাড়ি পাওয়া যায় মার্কেটে। সম্প্রতি হঠাৎ করেই কদর বাড়ছে মণিপুরী তাঁতের শাড়ির।
কিছুদিন আগে অফিসে দেখলাম এক সহকর্মী একসঙ্গে তিনটি তাঁতের শাড়ি কিনেছে। একটি নিজে রাখবে আর অন্যগুলো উপহার দেবে। অনলাইন থেকে কেনা এই শাড়িগুলো ডেলিভারি ম্যান পৌঁছে দিয়েছে অফিসে। সুতি কাপড়ের এই শাড়িগুলো ছিল চমৎকার। আবার নিজের সন্তানের জন্য নিয়মিত একটি স্কুলে যেতে হয়। সেখানেও কিছুটা একই চিত্র। কয়েক ভাবিরা মিলে অনলাইন থেকে একই রঙের তাঁতের শাড়ি কিনেছে। পহেলা ফাল্গুনে সবাই ম্যাচিং করে পরে ঘুরতে যাবে। এতে একটি জিনিস খুব সহজেই অনুমেয়, যে মানুষের কাছে পুরনো ঐতিহ্য কোনো না কোনো ভাবে ফিরে আসে। যেমন পোশাকে এত আধুনিকতার পরেও তাঁতের শাড়ির প্রতি নারীদের ভালোলাগা চোখে পড়ার মতো। তবে প্রযুক্তির এই যুগে বড় সুবিধা হচ্ছে কেনাকাটার জন্য মার্কেটে না গেলেও চলে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক অনলাইন পেজেই পাওয়া যায় নানা রকমের নান্দনিক পোশাক।
সিলেটি মণিপুরী তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন। এটি ৩০০ বছরের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। মণিপুরী শাড়ির জন্যই তাদের সুনাম এখন বিশ্বব্যাপী। মণিপুরী নারীরা বুনন শিল্পে খুবই দক্ষ। নিজেদের কাপড় বোনেন নিজেরাই। প্রায় প্রতিটি মণিপুরী ঘরেই রয়েছে তাঁত। প্রবা আছে মণিপুরী নারীরা জন্মসূত্রেই তাঁতি। প্রায় ৯০ শতাংশ মণিপুরী নারী তাঁতের সঙ্গে যুক্ত। তাদের উৎপাদিত তাঁত পণ্যের মধ্যে আছে ফানেক (বিশেষ পোশাক), শাড়ি, বিছানার চাদর, শাল, ওড়না, গামছা, থ্রি পিস ইত্যাদি। অবশ্য তাদের শাড়ি বুননের প্রচলন অন্য বুননের কিছুটা পরে শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে এ শাড়ি জনপ্রিয়তাও পেয়েছে বেশ।
মণিপুরী শাড়ি চেনার উপায়
জামদানি, বেনারসি, টাঙ্গাইল, পাবনা ও রাজশাহীসহ যেকোনো তাঁতের শাড়ির রয়েছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য, যা দেখলেই বোঝা যায় এটি তাঁতের শাড়ি। ঠিক তেমনি মণিপুরী শাড়ির রং ও নকশা দেখলেও বোঝা যাবে এটি মণিপুরী শাড়ি। কারণ মণিপুরী শাড়ির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর নকশায় মাইরাংগ (টেম্পল) বা মন্দিরের প্রতিকৃতি থাকবে। তাই প্রায় প্রতিটি শাড়ির আঁচল, জমিন ও পাড়ের নকশায় দেখা যাবে এ প্রতিকৃতি। আরেকটি বিশেষ দিক হলো মণিপুরী শাড়ি তৈরি হয় বরাবরই উজ্জ্বল রঙের সুতায়। আর এ সুতাগুলো দেশী সুতি ও একটু মোটা মানের। তাই শাড়িগুলো হয় একটু ভারি ও অমসৃণ। অন্য শাড়ির পাড় বিভিন্ন ধরনের হলেও মণিপুরী প্রায় সব শাড়ির পাড়ই চওড়ায় এক থেকে দুই ইঞ্চি হয়ে থাকে এবং এক রঙের। এ ছাড়া পাড়ের রং প্রায় সব সময় জমিনের রঙের বিপরীত হতে দেখা যায়। আঁচল, জমিন ও পাড়ে মন্দিরের প্রতিকৃতির পাশাপাশি থাকে বিভিন্ন নকশা। যেমন- গোলাপ ফুল, জবা ফুল, বৃত্ত, রেখাসহ বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি। অনেক আগে থেকেই এসব নকশার প্রচলন। যা চলছে এখনো।
দরদাম
মণিপুরী তাঁতের শাড়ির দাম ১২শ’ থেকে ১৫শ’ এর মধ্যে। পাবেন নিউ মার্কেট, গাউছিয়াসহ যে কোনো শাড়ির মার্কেটে। তা ছাড়া আজকাল অনলাইনে মণিপুরী তাঁতশাড়ির অনেক অনলাইন পেজ আছে, চাকরিজীবী ও ব্যস্ত মানুষেরা অনলাইন থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের শাড়িটি।
ছবি : সংগৃহীত