দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত ঋতু। আর মাত্র দশ দিন পরেই প্রকৃতি বরণ করবে বসন্তকে। পলাশ গাছের রক্তিম ফুল আপন মনে সাজিয়ে রাখবে রাস্তাগুলো। যেন শুধু বসন্ত নয় সমগ্র মানবকুলকে রঙিন করে দেওয়ার পাঁয়তারা। শুভ্রতার আলো ছড়িয়ে আগমন ঘটবে ঋতুরাজ বসন্তের। নতুন পত্র-পল্লবে গাছে গাছে শুরু হবে নব উন্মাদনা। ইতোমধ্যে আমের মুকুলে ভরে গেছে আমগাছ। এছাড়াও বসন্ত বরণকে নতুন মাত্রা দেয় মাসব্যাপী আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা। নান্দনিক ফুলের গোল ব্যন্ড দেওয়া তরুণীরা মেলায় যোগ করে ভিন্ন মাত্রা। বসন্তের আগমন উপলক্ষে তরুণীরা ফুলের গহনায় নিজেদের সাজায় এমন করে যেন নিজেরাই এক একটি ফুল। মুগ্ধ এ সাজের প্রধান অনুষঙ্গই থাকে ফুল। পরিপাটি পোশাকের সঙ্গে মাথায় ফুলের গোল ব্যান্ড। হাতে ফুলের মালা দিয়ে যখন একুশের বইমেলা প্রাঙ্গণে ঘুরেফিরে তখন অনেক পাঠক ও লেখকরাও এই মোহনীয়তা পরখ করে মুগ্ধ হয়ে। বর্তমানে তাজা ফুলের সাজ নিত্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। আর বিশেষ দিবস ও সময়ে ফুলের ব্যবহার বেড়ে যায় বহুগুণ। শাহবাগ ফুলের দোকানে কেউ ফুল বিক্রি করছে আবার কেউ ফুল দিয়ে বানাচ্ছে বাহারি ডিজাইনের গহনা। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই অনেকে খণ্ডকালীন কাজ হিসেবেও বেছে নেয় ফুল বেচাকেনা। বিশেষ করে শাহবাগ থেকে বইমেলা পর্যন্ত এ দৃশ্য অহরহ। কেননা প্রকৃতিপ্রেমী বাঙালি রমণীদের মাথায়, গলায়, কানে ও হাতে ফুলের গহনা শোভা পায় বিভিন্ন রূপে। তা ছাড়া যে কোনো মেলা ও উৎসবে ফুলের বিকিকিনি থাকে নজরকাড়া।
আর কিছু দিন পরেই প্রকৃতির নিয়মে বিদায় নেবে শীত ঋতু। চারদিকে আসন্ন ফাল্গুনের এই নির্মল আবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেলিনা চাইছে তার বিয়ের আয়োজন করতে। সেলিনা পাঁচ বছর ধরে ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে বুনছে নানা স্বপ্ন। কিছু দিনের মধ্যে তার সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে। সেলিনার পছন্দ তাজা ফুলের গহনা। তাই আগেই অর্ডার দিয়েছে শাহবাগের এক ফুলের দোকানে। বর্তমানে শহর ও গ্রামের অধিকাংশ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানেই কনেদের সাজানো হয় তাজা ফুলের গহনায়। অনেকে আবার পরেন প্লাস্টিক ফুলের গহনা। স্মৃতি হিসেবে রেখে দেওয়ার জন্য। তবে যে কোনো কৃত্রিমতার থেকে প্রাকৃতিক জিনিসে মানুষের আকর্ষণ থাকে বেশি। আর তাজা ফুল সৌন্দর্য বর্ধন করে। এজন্যই বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে ফুলের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ফুল বেচাকেনায় প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। সদ্য স্নাতক শেষ করা সেলিনা তাজা ফুল অনেক পছন্দ করেন, তাই ফুলের গহনার পাশাপাশি সে ফুল দিয়ে তৈরি দোপাট্টা পরতে চান। তার এই দোপাট্টা বা ওড়নার দাম পড়বে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। বিশেষ মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে মানুষ অনেক কিছুই করে। তাই তো ভিন্ন সৌন্দর্য আনতে সেলিনা পরবে গোলাপ ও জারবেরা ফুলের গহনা।
বিশুদ্ধতার প্রতীক ফুল। ফুলের প্রতি মানবপ্রেম চিরন্তন। গ্রামের বাড়িতে দেখা যায় ঘরের কোণে ছোট ছোট ফুলের বাগান। অনেকেই শখেরবশে এসব বাগান করছেন শুধু দেখতে ভালো লাগে তাই। আবার শহরের ছোট ছোট বারান্দায় সুসজ্জিত করে রাখা হয় ফুলের টব। ফুলকে কে না ভালোবাসে! এ জন্য ফুল শুধু গাছেই শোভা পাচ্ছে না, তরুণীদের সৌন্দর্য বর্ধনে সাজসজ্জার অন্যতম অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। বিয়ের কনের চুলের সাজ ফুল ছাড়া কখনো সম্পূর্ণ হয় না। তেমনি অনুষ্ঠানের অতিথি তরুণীরাও খোঁপায় ও বেণিতে ফুল দিয়ে নিজেকে করে অনন্যা। প্রতিনিয়ত ফুল দিয়ে সাজার প্রবণতা বাড়ছে। ফুলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃত্রিম ফুলের বাজারও তৈরি হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক ফুলের সুবাস ও মুগ্ধতা মানুষকে আকর্ষণ করে বেশি। তাই তো প্রেমিক যুবকরা ঘুরতে গেলেও প্রেমিকার মাথায় ফুল গুঁজে দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কেননা ভালোবাসার মানুষটির বাড়তি সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করে। তরুণীরা বরাবরই খোঁপায় ফুল পরতে পছন্দ করেন। আবার কেউ হয়তোবা তাজা ফুলের ব্রেসলেট বা কানের দুল পরছেন। এগুলো তৎক্ষণাৎ সংগ্রহ করা সম্ভব হলেও যারা এখনো বিয়ের স্বপ্ন বুনছেন এবং ফুলের গহনা পড়ার ইচ্ছা পোষণ করছেন, তাদের অবশ্যই ন্যূনতম দুই-তিন দিন আগেই অর্ডার দিতে হবে। স্বপ্নময় মুহূর্তকে সুন্দর করতে সঙ্গী হোক তাজা ফুলের গহনা।
মডেল : রিয়া
ছবি : রাজ আহমেদ