শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়া, শুষ্ক বাতাস এবং আর্দ্রতার অভাবে চুল রুক্ষ, ভঙ্গুর ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। চুল ভাঙা এবং খুশকি এই মৌসুমে সাধারণ সমস্যা। তবে সঠিক যত্ন ও নিয়ম মেনে চললে শীতেও আপনার চুল বা কেশ মসৃণ ও স্বাস্থ্যকর রাখা সম্ভব। এ বিষয়ে শোভনস মেকওভারের কসমেটোলজিস্ট শোভন সাহা জানান, একজন হেয়ার এক্সপার্টের সঙ্গে কথা বলে আগে জানতে হবে চুল কেন ভাঙছে। কারণ চুল অনেক কারণে ভাঙে। কেমিক্যাল ড্যামেজের কারণে ভাঙে, আবার অনেক সময় চুল অনেক দিন ধরে না কাটা হলে স্পিলিটেন্স থেকেও চুল ভাঙতে পারে। তাই এক্সপার্টকে দেখানো জরুরি।
হেয়ার প্যাক
চুলের যত্নে শীতেও হেয়ার প্যাক লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন শোভন সাহা। তিনি বলেছেন, যে কোনো প্যাক লাগালে ঠান্ডা লাগবে, এটি খুবই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে মাথায় প্যাক লাগিয়ে রোদে বসতে পারেন। প্যাক লাগাতে হবে চুলের ধরন অনুযায়ী। যেমন– আপনার চুলে খুশকি আছে কি না, চুল রাফ কি না সেটি বুঝে আপনাকে প্যাক নির্বাচন করতে হবে।
তেল মালিশ
চুলের রুক্ষতা দূর করতে তেল মালিশ খুব উপকারী। শীতে হট অয়েল ম্যাসাজ করতে পারবেন। এতে আপনি খুব রিল্যাক্স হবেন, ব্লাড সার্কুলেশনও খুব ভালো হবে। চুলে নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল বা বাদাম তেল ব্যবহার করতে পারেন। চুলের গোড়ায় তেল ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার হাল্কা গরম তেল ব্যবহার করুন। অয়েল ম্যাসাজের পর ভালোভাবে শ্যাম্পু করবেন। শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার, সিরাম অবশ্যই দিতে হবে। পার্লারে গিয়ে আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী হেয়ারে স্পা করতে পারেন। তা ছাড়া বাসার থেকে পার্লারে যাওয়াটা আরামদায়কও। কারণ সেখানে গরম পানি দিয়ে চুল ভালোভাবে ওয়াশ কওে, তাই ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি কমবে।
শীতে চুলের রুক্ষতা ও ভাঙন প্রতিরোধ করতে যা করবেন-
সঠিক শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার
শীতে অতিরিক্ত শ্যাম্পু করার ফলে চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়। তাই সপ্তাহে ২-৩ বার শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। শ্যাম্পুর পর সঠিক কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। সালফেট ও প্যারাবেনমুক্ত পণ্য চুলের জন্য নিরাপদ।
গরম পানি এড়িয়ে চলুন
গরম পানি চুলের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়; ফলে চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে। চুল ধোয়ার জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। ধোয়ার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল শেষবার ধুয়ে নিন। এটি চুলের কিউটিকল সিল করে।
হেয়ার মাস্ক ব্যবহার
ঘরোয়া উপাদান দিয়ে হেয়ার মাস্ক তৈরি করুন। যা চুলে পুষ্টি জোগাতে পারে। মাস্ক হিসেবে দই ও মধু মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটি চুল নরম ও উজ্জ্বল করবে। ডিমের সাদা অংশ ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে লাগালেও চুলের রুক্ষতা কমে। দই মাথার ত্বক ঠান্ডা রাখে এবং মধু ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। এক কাপ দইয়ের সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান। ২০-৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
চুলে খুশকি হলে
খুশকি মাথার ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা, যা শীতকালে আরও বেড়ে যায়। এটি চুলের গোড়ায় চুলকানি, শুষ্কতা এবং অতিরিক্ত সাদা আবরণের মতো সমস্যার সৃষ্টি করে। সঠিক যত্ন ও নিয়মিত পদ্ধতি অনুসরণ করলে খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
মেথি পেস্ট
মেথি বীজ খুশকির সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকর। ২-৩ চামচ মেথি বীজ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন এটি পেস্ট করে মাথার ত্বকে লাগান। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
লেবু ও নারিকেল তেল
লেবুর অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান খুশকি দূর করতে সহায়তা করে। ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেলে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন। ২০-৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে ফাঙ্গাল সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
টি ট্রি অয়েল
টি ট্রি অয়েল অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণে সমৃদ্ধ। ২-৩ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল শ্যাম্পুতে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। নিয়মিত ব্যবহারে খুশকি কমবে।
ভিনেগার
ভিনেগার খুশকির সেবোরিয়িক ডার্মাটাইটিস প্রতিরোধ করে। এক কাপ পানিতে দুই টেবিল চামচ ভিনেগার মিশিয়ে মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগ এড়িয়ে চলুন
শীতকালে হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেটনার বা কার্লারের মতো গরম যন্ত্র ব্যবহারে চুল আরও শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। প্রাকৃতিকভাবে চুল শুকানোর অভ্যাস করুন। যদি হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতেই হয়, তবে তাপমাত্রা কমিয়ে নিন এবং হিট প্রোটেক্ট্যান্ট ব্যবহার করুন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় সুষম খাবারের বিকল্প নেই। ভিটামিন-ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ খাবার যেমন– বাদাম, মাছ, ডিম ও অলিভ অয়েল খান। প্রচুর পানি পান করুন এবং শীতের ফল ও সবজি খাদ্য তালিকায় রাখুন।
মাঘে সুন্দর কেশ
শীর্ষ সংবাদ: