বর কনে : অমি ও তাহমিনা
বিয়ে নিয়ে কোনো না কোনো স্বপ্ন থাকে প্রতিটি অবিবাহিত তরুণ-তরুণীর মধ্যেই। যে স্বপ্নের শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত থাকে বহুদূর। কেমন হবে কাক্সিক্ষত মানুষটি? কেমন হবে সাজ পোশাক? এমন নানা স্বপ্ন ঘুরপাক খায়। তবে বিয়ে নিয়ে বরাবরই আলোচনায় গুরুত্ব পায় মেয়েদের সাজ পোশাক, অনেকটাই অন্তরালে থেকে যায় বরের বিষয়। আজ লিখব বরের বিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে।
বরের সাজ : আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ের সময়ে কনে নিজেকে নিয়ে ভাবার অনেক সময় পেলেও বরের তা সম্ভব হয় না। কেননা বিয়ে সম্পন্ন করতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে সামাজিক অনেক দায়বদ্ধতা মেনে চলতে গিয়ে নিজেকে সময় দেওয়ার সুযোগ বরের তেমন হয় না বললেই চলে। তবে এখন পাল্টে গেছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। বর্তমানে বিয়ের জন্য বরও নিজেকে সাজায় নান্দনিক রূপে।
বর কী রঙের এবং কোন্ পোশাকটি পরবেন তা ঠিক করতে হয় আগে থেকেই। বাঙালি বিয়েতে বরের পোশাকের মধ্যে শেরওয়ানি সব থেকে বেশি প্রচলিত। বিয়ের প্রধান পোশাক হিসেবে শেরওয়ানিই বেছে নেন বর। তবে শেরওয়ানি কেনার সময় রং ও ডিজাইনের প্রতি বেশি খেয়াল রাখতে হয়। কনের বিয়ের শাড়ি, লেহেঙ্গা বা গাউন যাই হোক, তার সঙ্গে মিলিয়ে পরলে বিয়ের অনুষ্ঠানে দুজনকেই লাগে আকর্ষণীয়। এক্ষেত্রে পোশাকের কম্বিনেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কনের পোশাক থেকে যে কোনো রং বেছে নিয়ে শেরওয়ানি ও এর বিপরীত রঙের পাগড়ি পরলে ভালো লাগে। আবার শাড়ি লাল বা মেজেন্টা হলে বরকে অফহোয়াইট কিংবা হাল্কা গোল্ডেন শেরওয়ানিতে ভালো লাগবে। পাগড়ি হতে পারে লাল, মেজেন্টা বা কাছাকাছি কোনো রঙের। শেরওয়ানি কেনার সময় অবশ্যই ফ্যাব্রিকের মান দেখে নিতে হবে। ফ্যাব্রিক উন্নত হলে শেরওয়ানি দেখতেও যেমন ভালো লাগবে, তেমনি হবে আরামদায়ক।
অনেকে আবার শেরওয়ানি না পরে বিয়েতে পাঞ্জাবি পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ ক্ষেত্রে দেখে-শুনে বাছাই করে নিতে হবে বিয়ের পাঞ্জাবি। আর বিয়ের পাঞ্জাবি অবশ্যই সাদামাটা কাজের হলে চলবে না। সেটি হতে হবে বেশ গর্জিয়াস, ভারি ও উজ্জ্বল ফ্যাব্রিকের। কারুকাজও জমকালো। রং নির্বাচনের জন্য পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে আপনি যে কোনোটিই বেছে নিতে পারেন। বিয়েতে অবশ্যই লম্বা পাঞ্জাবি পরতে হবে। কটন না নিয়ে সিল্ক, হাফসিল্ক, ভেলভেট অথবা সাটিনজাতীয় ফ্যাব্রিকের পাঞ্জাবি বেছে নিন। কারণ কটনের ক্ষেত্রে খুব বেশি গর্জিয়াস পাঞ্জাবি বেছে নেওয়াটা একটু কঠিনই হয়। পাগড়ি ছাড়া বরের সাজ কি ভাবা যায়! তা হলে তো সাজটাই হয়ে গেল অসম্পূর্ণ। বহুকাল ধরেই বিয়ের অনুষ্ঠানে বরের পাগড়ি অন্যতম অনুষঙ্গ। বিয়ের পাগড়িতে বরের রাজকীয় ভাব ফুটে ওঠে। পাগড়ি দুই ধরনের হয়। একটা শুধু কাপড় দেওয়া হয়, যা বরকে মাথায় বেঁধে নিতে হয়। আরেকটি হলো একদম তৈরি করা পাগড়ি, যেটিকে বলে রেডিমেড। এটি বাঁধাই থাকে, বর শুধু মাথায় পরে নিলেই হলো। এই ধরনের পাগড়িতে অনেক ধরনের কারুকাজ হয়। চুমকি, পাথর, পুঁথির মালা, জরি ইত্যাদি দিয়ে পাগড়ি সাজানো হয়। পোশাক যেটিই পরবেন, তা যেন রুচিসম্মত ও মানানসই হয়।
বরকে বিয়েতে কেমন লাগবে, সেটি নির্ভর করে তার রুচিশীলতার ওপর। বরের পোশাক ভাড়া করে নিয়ে আসার চলও রয়েছে অনেক জায়গায়। কারণ বিয়ের পোশাক বিয়ের পর আর তেমন কোথাও পরা হয় না। তোলা থাকে আলমারিতেই। তবে স্মৃতি ধরে রাখতে ভাড়া করা পোশাক নয়, বিয়ের দিন বরের জন্যও থাকুক নতুন ও আকর্ষণীয় পোশাক। শেরওয়ানি, পাজামা, ওড়না, পাগড়ি, নাগরাÑ সব মিলিয়েই পূর্ণ হয় বরের সাজ।
দরদাম ও কেনাকাটা :
বরের পোশাক কিনতে হলে যেতে পারেন যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি, মৌচাক, এলিফ্যান্ট রোড ও হাতিরপুলের মার্কেটগুলোয়। এসব জায়গায় পেয়ে যাবেন শেরওয়ানি, পাগড়ি, ওড়না, নাগরা ও বিভিন্ন অনুষঙ্গ। এ ছাড়াও দেশীয় ফ্যাশন হাউজ আড়ং, ইনফিনিটি, রং, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফটেও পেয়ে যাবেন বিয়ের পোশাক। বিভিন্ন মানের শেরওয়ানির দাম পড়বে ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বরের শেরওয়ানির সঙ্গে পাজামার দাম পড়বে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। ওড়নার দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর পাগড়ি ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিয়ের মানানসই জুতা পেয়ে যাবেন নিউ মার্কেট, কাঁটাবন, গাউছিয়া, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, ইস্টার্ন প্লাজা, মিরপুর ১০সহ বিভিন্ন শপিং মলে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান থেকেও কিনতে পারবেন। দাম হবে ১৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে।