ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

এই বরষায়

জলি রহমান   

প্রকাশিত: ২১:৩০, ৭ জুলাই ২০২৪

এই বরষায়

.

আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে/জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।/এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদভ্রান্ত মেঘে মন চায়/মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সত্যিই মুখর বর্ষা দিনে কেন যেন কিছুতেই মন লাগে না। উদভ্রান্ত কাকভেজা হয়ে ছুটে চলে মন। বাদল দিনের স্বচ্ছ গ্লাসে চোখ আটকালে উঁচু উঁচু ভবনের ছাদে দেখা যায় মেঘবালিকারা দল বেঁধে ভিজছে। যেন নির্মল আনন্দের এক উচ্ছ্বাস বয়ে যায় তাদের ভিতরে। শিশু থেকে কিশোর সবার মাঝেই থাকে অভিন্ন ছন্দ। তখন খুব মনে পড়ে নিজের দেখা নব্বই দশকের কথা। বৃষ্টির দিনে সবার হাতে হাতে ছাতা। একঝাক তরুণী ছুটে চলতাম স্কুলের পথে। আর বৃষ্টি ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। বর্ষা সবসময়ই ছাতার অবাধ্য হয়ে গতরখানি ভিজিয়ে দিয়ে যেত। ভেজা শরীরে ক্লাস করতে করতে পোশাক শুকিয়ে যেত। ছুটি শেষে আবার দল বেঁধে ছুটতাম মাটির পথ ধরে। যাওয়ার সময় ছাতাটা হয়ে যেত গুরুত্বহীন। বইয়ের ব্যাগ পলিথিনে পেঁচিয়ে শুরু হতো কাক ভেজার প্রতিযোগিতা। তখন গ্রামে শহরের আঁচ লাগেনি। কখনো কখনো হাঁটু অবধি মাটির নিচে গেরে যেত। বর্ষা কাদায় মাখামাখি হয়ে ফিরতাম ঘরে। বইয়ের ব্যাগ রেখে আবার নেমে পড়তাম পুকুরের পানিতে। সে কি নির্মল ছন্দ! পানির মধ্যে নেমে অনুভব করতাম রিমঝিম বৃষ্টি ধারা। এখনো বর্ষাভেজা দিনগুলোতে মন ছুটে যায় নব্বইয়ের স্মৃতিপটে। তবে এখন শহর গ্রামের মাঝে খুব একটা পার্থক্য নেই বললেই চলে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আঁকা-বাঁকা সরুর মতো যতদূর চোখ যায় শুধু পাকা রাস্তা। তবে এখন স্যাঁতসেঁতে সেই কাদা রাস্তা না থাকলেও বৃষ্টিতে ভিজে তরুণীদের ছুটে চলা মুগ্ধ করে সেই আগের মতোই।

পোশাকে বর্ষার রং : যেসব তরুণ-তরুণী বৃষ্টির দিনেও ফুরফুরে থাকতে চায় তাদের পোশাক থেকে জুতা সবকিছুতেই ফ্যাশনাবল এবং সচেতনতার বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। আজকাল ফ্যাশন ডিজাইনাররাও টিনএজদের কথা ভেবে তৈরি করছেন নিত্যনতুন নান্দনিক ড্রেস। যুগে যুগে বর্ষার জন্য নীল রঙকেই বেঁছে নিয়েছে মানুষ। নীলের রয়েছে বহুরূপ। বর্ষার আকাশ থাকে ঝকঝকে নীল। আর এই নীল যেন রং বদলায় ক্ষণে ক্ষণে। মেঘ-বৃষ্টির দিনে ফেলে আসা স্মৃতির ভাবনায় কষ্টের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হতে পারে মন। আর কষ্টের রং হিসেবে বোঝানো হয় নীলকেই। আবার নীলের মাঝেই আছে স্বপ্নের হাতছানি।

অন্যদিকে ভালোলাগার অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রেও জড়িয়ে আছে আকাশের বিশালতার নীল রং। সম্মিলিতভাবে নীল রং গেথে গেছে বর্ষার সঙ্গে। নীল অপরাজিতা ছোট কলি থেকে ফুল হয়ে ওঠার কত রূপ! আবার সমুদ্রের নীলের বিশলতাও ছড়ায় মুগ্ধতা। এক নীল রঙের কত রূপ। তাইতো বর্ষার পোশাকে ফ্যাশনাবল তরুণ-তরুণীরা প্রধান্য দেয় নীল রংকেই। বর্ষা উপযোগী মিশ্র তন্তুর যেকোনো পোশাকেই নীল রংকে বেছে নিলেই হয় মানানসই। তবে একদম উজ্জ্বল রঙের পোশাক না পরাই ভালো। সবুজ, বেগুনি, কালো বা যেকোনো গাড়ো রঙের পোশাকে কোনোভাবে কাদাপানি লাগলেও দাগের ভয় থাকবে না। আবার ভিজে গেলেও দ্রুত শুকিয়ে যায় বলে অনেকেরই সিল্ক, হাফসিল্ক, এন্ডি সিল্ক বা জর্জেট কাপড় পছন্দ।বর্ষা উপযোগী পোশাক : বর্ষায় আজকাল টিনএজ মেয়েরা সাধারণত টপ, কুর্তায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ক্যাজুয়াল লুক পেতে প্রিন্টেড টি-শার্ট দিয়ে সিগারেট প্যান্ট বা ডেনিম প্যান্ট পরতে পারেন। ছাড়া কটন কুর্তি লেগিংসও বেছে নিতে পারেন। বর্ষাকালে রাস্তার কাদা-পানি থেকে রেহাই পেতে একটু কম দৈর্ঘ্যরে পোশাক পরাই ভালো। ফ্যাশনাবল ক্যাজুয়াল লুকের জন্য টি-শার্ট, প্রিন্টেড ঢিলেঢালা শার্ট লুজ প্যান্টও বেশ মানানসই। ছাড়া গ্লামারস্ লুক পেতে কাফতান, টিউনিক জমকালো অথচ হালকা ফেব্রিকের ড্রেসও ঋতুতে বেশ আকর্ষণীয় লাগবে।

কোথায় পাবেন এবং দরদাম : আজকাল বড় বড় শপিং মল থেকে শুরু করে যেকোনো সাধারণ মার্কেটেও পেয়ে যাবেন বৃষ্টি উপযোগী পোশাক। বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, গাউছিয়া, নিউমার্কেট অন্যান্য মার্কেটে টপ বা কুর্তা পাবেন ৬০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যেই। আর বটম কালেকশন পেয়ে যাবেন পাঁচশ থেকে এক হাজারের মধ্যে। রং বাংলাদেশ, লা-রিভ, আড়ং, কে ক্র্যাফটসহ বিভিন্ন দেশীয় ফ্যাশন হাউস থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দ অনুযায়ী বর্ষাকালীন নান্দনিক পোশাক। কাপড়ের মানভেদে দামে থাকতে পারে কিছু তারতম্য।    

×