
ছবি : সংগৃহীত
বর্তমানে বিবাহবিচ্ছেদের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। দাম্পত্য জীবন যখন একসঙ্গে থাকা একেবারে অসম্ভব হয়ে ওঠে, তখন বিচ্ছেদই হয় শেষ আশ্রয়। বিয়ে যেমন নারী-পুরুষের জীবনে স্থিতি ও শৃঙ্খলা আনে, তেমনই অসুখী দাম্পত্য থেকে মুক্তি দিতে বিচ্ছেদেরও আইনগত ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বিচ্ছেদের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয়ে থাকে সন্তান। বাবা-মায়ের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর, সন্তানের হেফাজত নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, যা অনেক সময় ভয়াবহ রূপ নেয় এবং আদালত পর্যন্ত গড়ায়। অনেকে জানেন না, সন্তানের হেফাজত ও ভরণপোষণ নিয়ে আইন কী বলে !
মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের আইনগত অভিভাবক হিসেবে ধরা হয় বাবাকে, তবে সন্তানের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব থাকে মায়ের হাতে। যদি মা-বাবা আলাদা থাকেন কিংবা তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে, তাহলে মা তত্ত্বাবধানের ক্ষমতা হারান না। ছেলের ক্ষেত্রে সাত বছর বয়স পর্যন্ত এবং মেয়ের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত সন্তানদের মা নিজের কাছে রাখতে পারেন। এই নির্দিষ্ট সময়ের পরও সন্তানের কল্যাণে মা চাইলে আদালতের অনুমতি নিয়ে সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে পারেন। তবে আদালত এই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সন্তানের সুস্থ মানসিক ও সামাজিক বিকাশ, নিরাপদ পরিবেশ, অভিভাবকের সামর্থ্য ইত্যাদি বিবেচনা করে। অনেক সময় সন্তানের বয়স যদি উপযুক্ত হয়, তাহলে তার মতামতও গুরুত্ব পায়।
তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সন্তানের মা যদি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন, তাহলে আদালত তার হেফাজতের অধিকার বাতিল করতে পারে, যদি দেখা যায় নতুন পরিবেশ সন্তানের জন্য অনিরাপদ বা ক্ষতিকর। আর যদি বাবা-মায়ের মধ্যে সন্তানের হেফাজত নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়, তাহলে পারিবারিক আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যায়। এই আদালত সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে রায় প্রদান করে।
বিচ্ছেদের পর সন্তানের ভরণপোষণ একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক বাবা মনে করেন, সন্তান যদি মায়ের কাছে থাকে, তাহলে তাদের ভরণপোষণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই, এই ধারণা একেবারেই ভুল। সন্তান যেই অভিভাবকের কাছেই থাকুক না কেন, তার খরচ চালানোর দায়িত্ব বাবারই। বিচ্ছেদ হোক বা না হোক, মা চাইলে পারিবারিক আদালতে গিয়ে সন্তানের ভরণপোষণের দাবিতে মামলা করতে পারেন। আদালত সন্তানের প্রয়োজন, বয়স, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে বাবাকে নির্ধারিত ভরণপোষণ দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে।
আঁখি