ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

সন্তান বাবা-মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব না নিলে আইনি প্রতিকার কী?

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

সন্তান বাবা-মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব না নিলে আইনি প্রতিকার কী?

কোনো সন্তান যদি তার বাবা-মা বয়স হয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের ভরণপোষণের টাকা না দেয়, তাহলে আইনগতভাবে সেই বাবা-মা আসলে ভরণপোষণের টাকাটা পাবে কিনা বা আইন তাঁদের সেই সহায়তাটা দেবে কি না? এ বিষয়ে আমাদের করণীয় কী?

একটা বয়সের পরে বাবা-মা যখন বয়স্ক হয়ে যাবে, তখন তাঁর বাবা-মা এত কষ্ট করে সারা জীবন ত্যাগ স্বীকার করে যে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছে, তারা একটু বয়স হয়ে যাওয়ার পরে বাবা-মাকে দেখবে, ভরণপোষণ চালাবে, বাবা-মাকে ভালো রাখার চেষ্টা করবে—এটাই কিন্তু খুব স্বাভাবিক। কিন্তু কেন ২০১৩ সালে এই আইনটা আমাদের করতে হলো পার্লামেন্ট থেকে?

ভরণপোষণের জন্য ২০১৩ সালে বাবা-মাকে ভরণপোষণ তাঁদের ছেলের কাছ থেকে দাবি করার অধিকার দেওয়া হয়, একটি রাইটস হিসেবে। সেই আইনটা ২০১৩ সালে পার্লামেন্ট থেকে পাস করা হয়েছে।

এই বিষয়টা খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আসলে অনেক সময় কিছুই করার থাকে না। যখন বাবা-মা বয়স হয়ে যায়, তারা রিটায়ার্ড লাইফ লিড করে বা অনেক বেশি অচল হয়ে পড়ে শারীরিক দিক দিয়ে, তখন যদি ছেলে-মেয়ে তাঁদের না দেখে, তাঁদের ভরণপোষণ না দেয়, তাহলে তাঁদের করণীয় কী?

এই বিষয়ে পরামর্শ হচ্ছে—তাঁরা অবশ্যই মামলা করবেন। ভরণপোষণের এই টাকাটা পাওয়ার জন্য বাবা-মা যেকোনো জেলা আদালতের ফ্যামিলি কোর্টে মামলা করতে পারবেন এবং ফ্যামিলি কোর্ট অনেক গুরুত্বসহকারে এবং মানবিকভাবে এই মামলাগুলো গ্রহণ করবে। যত দ্রুত সম্ভব স্পষ্ট ও আন্তরিকতার সঙ্গে এই মামলাগুলো নিষ্পত্তির চেষ্টা করবে।

আপনি যদি বাবা-মা হন, আপনার সন্তান যদি আপনাকে ভরণপোষণের টাকা না দেয়, আপনার যদি কোনো ইনকামের উৎস না থাকে, আপনি যদি শারীরিকভাবে অক্ষম হন, আপনার বয়স যদি সিনিয়র সিটিজেনের কাতারে পড়ে, তাহলে অবশ্যই আপনি পারিবারিক আদালতে ভরণপোষণের জন্য মামলা করতে পারেন। এবং এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আপনার সন্তান প্রতি মাসে আপনাকে কত টাকা দেবে, সেই টাকাটা কোর্ট নির্ধারণ করে দেবে এবং কোর্ট সেই টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করবে।

২০১৩ সালে কিন্তু এই আইনটি করা হয়েছিল বহু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। আমরা যদি দেখি, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এই ভোগান্তিগুলো বাবা-মা সহ্য করছিলেন। এক সময় মনে হলো, না, এই বিষয়ে একটি আইন থাকা উচিত। কারণ বাবা-মা যখন আর্থিকভাবে অক্ষম হয়ে যান, তখন তাঁরা জানেন না কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন, কীভাবে তাঁদের অধিকার আদায় করবেন।

২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা ছিল না। ২০১৩ সালের পরে আপনি মামলা করে আপনার ছেলে-মেয়ের কাছ থেকে এই টাকাটা রাইটস হিসেবে আদায় করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একটা আইন থাকলেও, একটা ফর্ম থাকলেও—আমাদের দেশে কয়জন বাবা-মা তাঁদের নিজের সন্তানকে বিবাদী করে কোর্টে যান?

এটাই আমাদের সমাজ ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের বাস্তবতা। যত আইনই করা হোক, অনেক বাবা-মা এখনো কষ্ট পাচ্ছেন, কিন্তু তাঁরা দিন শেষে আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন না। তবে যখন এই কষ্টগুলো নিজেদের মধ্যে না রেখে আমরা সচেতনতার কারণে কোর্টে যাব এবং কিছু রায় আসতে থাকবে, তখন সন্তানেরাও ভাবতে বাধ্য হবে—আমি লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছি মানেই আমার বাবা-মার দায়িত্ব শেষ নয়। আমি তাঁদের না দেখে থাকতে পারি না। এই চিন্তাটা তাদের মাথা থেকে হারিয়ে যাবে।

 

 

সূত্র: https://tinyurl.com/t5mvuszr

আফরোজা

×