
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে একটি সাধারণ সমস্যা হলো—কোনো ব্যক্তি অকালমৃত্যুবরণ করলে, তার রেখে যাওয়া জমি-জমা বা সম্পত্তি অনেক সময়ই তার ভাই বা আত্মীয়দের হাতে আটকে যায়। বিশেষ করে যদি সন্তানেরা তখন অপ্রাপ্তবয়স্ক কিংবা আইনি জ্ঞানে দুর্বল হয়, তবে তারা নানা রকম টালবাহানার শিকার হন। বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে ধারণা দিতে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাবার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির আইনি উত্তরাধিকার সন্তানদের, তবে তা সঠিকভাবে বুঝে পেতে হলে কিছু ধাপ অনুসরণ করা জরুরি।
প্রথমেই সন্তানদের স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে, তাদের বাবা বা দাদার নামে কতটুকু এবং কোথায় সম্পত্তি আছে। অফিসে গিয়ে 'খতিয়ান' বা 'দাগ নম্বর' সংগ্রহ করে তা যাচাই করতে হবে।
এরপর সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে দলিল, পর্চা ও রেকর্ডের নকল (সার্টিফায়েড কপি) সংগ্রহ করা উচিত, যাতে জমির মালিকানা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকে।
বাবার মৃত্যুর প্রমাণ হিসেবে মৃত্যু সনদ এবং সন্তানদের পরিচয়পত্রসহ আইনি উত্তরাধিকারীদের তালিকা (ওয়ারিশান সনদ) ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
পরবর্তী ধাপে, যদি দেখা যায়—চাচা বা অন্য কেউ সম্পত্তি দখলে রেখেছেন বা উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তির অংশ বুঝিয়ে দিতে টালবাহানা করছেন, তাহলে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। সেক্ষেত্রে একটি বণ্টন মামলা (partition suit) দায়ের করা যেতে পারে।
আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, একজন মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ছেলেমেয়েরাই প্রকৃত উত্তরাধিকারী। কোনো চাচা, ফুফু বা অন্য আত্মীয় জোর করে জমি দখলে রাখলে তা সম্পূর্ণ বেআইনি। ভূমি অফিসের তথ্য ও দলিলাদি একত্র করে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নিতে পারলে, সন্তানেরা সহজেই তাদের প্রাপ্য সম্পত্তি ফেরত পেতে পারেন।
বর্তমানে অনলাইনেও জমির খতিয়ান ও নামজারি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যা উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে সহায়ক। তবে সঠিক দলিল, ওয়ারিশ সনদ এবং আইনি জ্ঞানের ঘাটতির কারণেই অনেকে ন্যায্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন।
পরামর্শ:
প্রয়োজনে একজন আইনজীবীর সহায়তা নিন।
জমি সম্পর্কিত সকল কাগজপত্র ফটোকপি ও মূলসহ সংরক্ষণ করুন।
নামজারি (mutation) আবেদন দ্রুত করুন।
বাংলাদেশে এমন ঘটনা অনেক ঘটছে, তাই পরিবারে সম্পত্তি সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়ানো এবং সন্তানদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়াই এখন সময়ের দাবি।
ফারুক