ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

কাবিননামা ছাড়া বিয়ে হবে কী না?

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২২ এপ্রিল ২০২৫

কাবিননামা ছাড়া বিয়ে হবে কী না?

ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশের সমাজে বিয়ে শুধু দুই ব্যক্তির নয়, বরং দুটি পরিবারের মধ্যে বন্ধন। এই পবিত্র বন্ধনকে সামাজিক, ধর্মীয় এবং আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য 'কাবিননামা' বা বিবাহ রেজিস্ট্রেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে অনেক এলাকায় এখনো দেখা যায় কাবিননামা ছাড়া বিয়ে হচ্ছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। এমন বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠছে — কাবিননামা ছাড়া কি বিয়ে বৈধ? কিংবা এর সামাজিক ও আইনি পরিণতি কী?

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ:
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, বিয়ের জন্য মৌলিক তিনটি শর্ত রয়েছে: প্রস্তাব (ইজাব), গ্রহণ (কবুল), এবং সাক্ষীর উপস্থিতি। কাবিন বা দেনমোহর নির্ধারণ করাও ইসলামী বিয়ের একটি আবশ্যিক অংশ। তবে লিখিত কাবিননামা নবীজীর (সা.) যুগে প্রচলিত ছিল না — বরং এটি পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্বার্থে প্রবর্তিত হয়। অতএব, ধর্মীয়ভাবে মৌখিকভাবে সাক্ষীর উপস্থিতিতে হওয়া বিয়ে বৈধ হলেও লিখিত কাবিননামা না থাকায় ভবিষ্যতে অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

আইনি দৃষ্টিকোণ:
বাংলাদেশে Muslim Marriage and Divorce (Registration) Act, 1974 অনুযায়ী, প্রত্যেক মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। আইন অনুসারে, নিকাহ রেজিস্ট্রার কর্তৃক অনুমোদিত কাবিননামা ছাড়া বিয়ে রেজিস্ট্রার করতে ব্যর্থ হলে তা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ হতে পারে। যদিও বিয়েটি সম্পন্ন হয় ধর্মীয়ভাবে, তবুও রেজিস্ট্রেশন না থাকলে নারীর অধিকার (যেমন: দেনমোহর, ভরণপোষণ, তালাকের নোটিশ) সুরক্ষিত হয় না।

সামাজিক ও বাস্তব চিত্র:
গ্রামাঞ্চলে অনেক সময় দেখা যায় ইমাম সাহেব বা একজন মাওলানা কাবিননামা ছাড়াই বিয়ে পড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে কাবিন করা হবে এই আশায় অনেক বিয়ে লিখিত রূপ পায় না। এর ফলে বিশেষ করে নারীরা পরে আইনি সুরক্ষা পান না — স্বামীর অস্বীকৃতি, তালাক, কিংবা সম্পত্তি সংক্রান্ত জটিলতায় পড়ে যান। শহরে এই প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম হলেও প্রবাসী বিয়ে কিংবা দ্বিতীয় বিয়েতে অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে কাবিননামা এড়ানো হয়।

বিশেষজ্ঞ মতামত:
আইনজীবী ও সমাজ গবেষকদের মতে, কাবিননামা একটি সামাজিক চুক্তি হিসেবে কাজ করে যা স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে। এটি না থাকলে বিচার ব্যবস্থায় একজন নারীর পক্ষে প্রমাণ দেওয়া কঠিন হয়ে যায় যে তিনি প্রকৃতপক্ষে বৈধভাবে বিবাহিত ছিলেন।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কাবিননামা ছাড়াও বিয়ে হতে পারে, তবে বাংলাদেশের আইনি ও সামাজিক বাস্তবতায় এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কাবিননামা শুধু আইনি কাগজ নয়, এটি এক ধরনের নিরাপত্তা — বিশেষ করে নারীদের জন্য। এ কারণে সচেতনতা বাড়ানো এবং রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াকে সহজতর করা সময়ের দাবি।

নুসরাত

×