
ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশের সমাজে বিবাহ ও তালাক—এই দুইটি বিষয় শুধু পারিবারিক নয়, বরং ধর্মীয় ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায়, দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েনের কারণে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেন। পরবর্তীতে পরিস্থিতি বদলে গেলে বা অনুশোচনায় ভুগে আবারও সেই একই নারীকেই বিয়ে করেন। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে—এই পুনরায় বিয়ের ক্ষেত্রে কি আবার কাবিনের টাকা নির্ধারণ করতে হবে? আগের কাবিননামা কি তখনো কার্যকর থাকে? ইসলামী শরিয়ত, সামাজিক রীতি এবং বাংলাদেশের পারিবারিক আইন—তিনটির অবস্থানই এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
ঘটনাবলি ও বাস্তবতা:
বাংলাদেশে কাবিন বা দেনমোহর হলো বিবাহ বন্ধনের একটি মৌলিক অংশ। এটি কেবল আর্থিক লেনদেন নয়, বরং নারীর অধিকার সুরক্ষার একটি প্রতীক। কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তালাক দেন এবং পরে পুনরায় তাকে বিয়ে করতে চান, সেক্ষেত্রে নতুন করে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। স্বাভাবিকভাবে, প্রতিটি নতুন বিয়ের সময় একটি নতুন কাবিন নির্ধারণ করা আবশ্যক। আগের কাবিন তখন বাতিল বলে গণ্য হয়, কারণ আগের বিবাহ-বন্ধনটি তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
আইন কী বলে?
বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসারে, প্রতিটি বিয়ের জন্য আলাদা করে কাবিননামা তৈরি এবং নথিভুক্ত করতে হয়। পুনরায় বিয়ের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। তাই পুরনো স্ত্রীর সঙ্গেও যদি নতুন করে বিবাহ সম্পাদিত হয়, তাহলে নতুন কাবিন নির্ধারণ না করে বিয়ে করা বৈধ হলেও আইনগতভাবে দুর্বল হতে পারে। আদালতে কোনো বিরোধ সৃষ্টি হলে নতুন কাবিন না থাকার কারণে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন স্বামী-স্ত্রী উভয়েই।
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি:
ইসলামী শরিয়তে বিয়ের ক্ষেত্রে দেনমোহর নির্ধারণ করাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তালাকপ্রাপ্ত দম্পতি পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে সেখানে নতুন মোহর ধার্য করাই শরিয়তসম্মত। তবে যদি আগের দেনমোহর পুরোপুরি পরিশোধ না করা হয়ে থাকে এবং নতুন বিয়েতে তা বহাল রাখা হয়, তাহলে উভয়ের সম্মতিতে পূর্বের কাবিন কার্যকর রাখার সুযোগও রয়েছে।
ডিভোর্সের পর আবার একই নারীকে বিয়ে করলে নতুন কাবিন নির্ধারণ করাই সর্বোত্তম এবং নিরাপদ পথ। এটি শুধু আইনি দায়মুক্তি দেয় না, বরং নারীর সম্মান এবং অধিকার সুরক্ষার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অতএব, পুরনো প্রেম ফিরে এলে কাবিন নিয়ে হালকাভাবে না নিয়ে, সেটিকে সম্মানজনকভাবে বিবেচনা করাই উচিত।
নুসরাত