
ছবি: সংগৃহীত
আমাদের ক্যারিয়ার যেন একটি নৌকা—আপনি সেই নৌকা চালিয়ে চলেছেন স্থির লক্ষ্যের দিকে। চারপাশে সব অনুকূল, চলার পথে বাধা নেই। কিন্তু জানেন না, নৌকার নিচে একটি ছোট ছিদ্র হয়েছে। কোনো আওয়াজ নেই, ঝাঁকুনি নেই, কিন্তু ধীরে ধীরে সেই ছিদ্র দিয়েই পানি ঢুকছে। এক সময় নৌকাটি ডুবে যেতে শুরু করে। এই নিঃশব্দ বিপদই হলো কিছু অভ্যাস, যেগুলো আমাদের অজান্তেই ক্যারিয়ারে বড় ক্ষতি করে দেয়।
চলুন জেনে নিই এমন ৭টি অভ্যাস, যেগুলো আপনার ক্যারিয়ারকে ধীরে ধীরে নিচে নামিয়ে আনছে—আর আপনি হয়তো তা টেরই পাচ্ছেন না।
১. শুধু প্রয়োজন পড়লেই শেখা
অনেকে মনে করেন, একবার চাকরিতে ঢুকে পড়লে শেখার আর প্রয়োজন নেই। আবার কেউ কেউ শুধুমাত্র বস বললে বা প্রশিক্ষণ থাকলে তবেই শেখেন। এটা বড় ভুল। আধুনিক কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিনই প্রযুক্তি ও দক্ষতার চাহিদা বদলাচ্ছে। আপনি যদি পেছনে পড়ে যান, তাহলে আপনার গুরুত্বও কমে যায়। নিজ উদ্যোগে শিখুন। অনলাইন কোর্স করুন, সেমিনারে অংশ নিন, নতুন স্কিল আয়ত্ত করুন।
২. নিজেকে আড়ালে রাখা
“আমার কাজই আমার হয়ে কথা বলবে”—এই চিন্তাটা এখন আর যথেষ্ট নয়। আপনি যদি নিজের কাজ ও দক্ষতা প্রদর্শন না করেন, তবে অন্যরা আপনার মূল্য বুঝতে পারবে না। ফলে প্রমোশন বা ভালো প্রজেক্ট থেকে বঞ্চিত হবেন। সভায় কথা বলুন, নিজের অর্জন সহকর্মীদের জানান, পেশাদারিত্ব বজায় রেখে আত্মপ্রকাশ করুন।
৩. সব কিছুতে “হ্যাঁ” বলা
সব কাজ মাথায় নিয়ে নিলে আপনি “ভালো” কর্মী নন, বরং অকার্যকর কর্মী হয়ে ওঠেন। অতিরিক্ত চাপ মানসিক ক্লান্তি আনে, কাজের মান কমে যায়, আপনি হয়ে পড়েন অস্পষ্ট ও অপ্রয়োজনীয়।গুরুত্ব বিবেচনায় কাজ গ্রহণ করুন, প্রয়োজনে “না” বলুন। বিকল্প প্রস্তাব দিন, সময় বাঁচান।
৪. কঠিন আলোচনায় এড়িয়ে চলা
বেতন বাড়ানো, প্রমোশন চাওয়া, বা অসন্তুষ্টির কথা বলা—এসব আলোচনা এড়িয়ে গেলে ক্ষতিই বেশি হয়। আপনি দুর্বল বা আগ্রহহীন কর্মী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। সাহস নিয়ে, সৌজন্যমূলক ভঙ্গিতে কথা বলুন। স্পষ্ট ও আত্মবিশ্বাসী হোন।
৫. পেশাদার পরিচয় (পারসোনাল ব্র্যান্ড) তৈরি না করা
নিজেকে কেবল কর্মী হিসেবে ভাবলে চলবে না, বরং একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি তৈরি করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।আপনি কীসে দক্ষ, সেটি অন্যরা বুঝবে না। সুযোগ হাতছাড়া হবে।আপনার লিংকডইন প্রোফাইল হালনাগাদ করুন, নিজের খাতে নিয়মিত পোস্ট করুন, একটি নির্ভরযোগ্য পরিচিতি তৈরি করুন।
৬. আরামদায়ক জায়গায় আটকে থাকা
যখন আপনি একই ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন, কিন্তু নিজেকে নতুন চ্যালেঞ্জে ফেলছেন না, তখন আপনার উন্নয়ন থেমে যায়।
আরামদায়ক জায়গা ধীরে ধীরে আপনার ক্যারিয়ারের কবর রচনা করে। নতুন দায়িত্ব নিন, ক্রস-ফাংশনাল প্রজেক্টে কাজ করুন, মেন্টরিং করুন।
৭. প্রতিক্রিয়া (Feedback) উপেক্ষা করা
সমালোচনার ভয়ে কেউ কেউ প্রতিক্রিয়া শুনতেই চান না। এটা ভয়াবহ এক ভুল।এতে আপনার শেখার মানসিকতা (growth mindset) নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, আর বসেরা উন্নয়নে আগ্রহ হারান। প্রতিক্রিয়া মন দিয়ে শুনুন, রেগে না গিয়ে বুঝে নিন, প্রয়োজন মতো নিজেকে ঠিক করুন।