
রনি হাওলাদার, ৪৩তম বিসিএস পুলিশ
বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র হওয়ায় স্বপ্ন ছিল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হবার। মাসে লাখ টাকা বেতন হবে, স্যুটেড-ব্যুটেড হয়ে অফিস করবেন। তাই বিসিএস বা অন্য কোনো চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। কিন্তু পরিবার থেকে সব সময় বিসিএস এর জন্য উৎসাহিত করায় আর বিসিএস ক্যাডারদের সম্মান, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা দেখে তাকে আকর্ষণ করল। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করে শুরু করেন বিসিএস যাত্রা।
এটি ৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত রনি হাওলাদার স্বপ্ন ও সাফল্যের গল্প। যার শৈশব কেটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নে। বাবা পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী। রনি মিঠাপুর এলএন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ থেকে বিবিএ এবং এমবিএ সম্পন্ন করেন। তখন তিনি ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে ৯ম গ্রেডের চাকরিতে কর্মরত ছিলেন। যেহেতু তার প্রথম পছন্দ ছিল পুলিশ ক্যাডার, তাই স্বপ্ন পূরণের আনন্দে তিনি ছিলেন উদ্বেলিত। এই ক্যাডার পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছিল তার।
রনি হাওলাদার জানান, ‘২১ জুলাই ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিসিএসের আঁতুরঘর সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে গেলাম। সবার বিসিএস পড়ার সিরিয়াসনেস দেখে মনে হলো স্বপ্ন পূরণ এত সহজ হবে না। পরদিন নীলক্ষেত থেকে এক সেট প্রিলিমিনারির বই কিনে প্রস্তুতি শুরু করে দিলাম। সে সময় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে থাকি। লাইব্রেরি খুলত সকাল ৮টায়। কিন্তু পড়ার জন্য একটা সিট নিতে সেই ভোর ৬টায় দৌড়ে গিয়ে লাইনে ব্যাগ রাখতাম। তা না হলে সিট পাওয়া মুশকিল ছিল। যখন লাইব্রেরির গেট খুলত, তখন ঢোকার জন্য যুদ্ধ লেগে যেত। মনে হতো বিসিএসকে ছাপিয়ে এ আরেক যুদ্ধ। যারা এখানে পড়ছেন বা পড়েছেন তারাই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারবেন। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পড়তাম। মাঝে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার আর নামাজের জন্য বের হতাম। এভাবেই চলত আমার স্বপ্নজয়ের দিনগুলো।’
আজকের এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রনির পরিবারের, বিশেষ করে তার বড় ভাই শামীম হোসেন। তারা সবাই পাশে থেকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। যখনই ব্যর্থ হয়েছেন সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়ে সর্বদা পাশে থেকেছেন।
বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হচ্ছে বিসিএস। এখানে প্রতিটি ধাপের জন্য চাই ক্ষুরধার প্রস্তুতি। বিসিএসে ভালো প্রস্তুতির জন্য নিরবচ্ছিন্ন পড়াশোনা দরকার। কোনো সপ্তাহে ১২-১৪ ঘণ্টা করে পড়লাম আবার কোনো সপ্তাহে বইয়ের কাছেই গেলাম না, এমন যেন না হয়। নতুনদের জন্য রনির পরামর্শ- ‘বিসিএসে শটকার্ট প্রস্তুতির কথা মাথায় আনা যাবে না। সিলেবাস ধরে টপিকগুলো ভালো করে পড়ে ফেলতে হবে। নিজের দুর্বলতা ও সবলতাগুলো চিহ্নিত করে পড়াশোনা করতে হবে। বই পড়ার পাশাপাশি দেশ-বিদেশ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে। এজন্য পত্র-পত্রিকাসহ সংবাদ মাধ্যমের বিকল্প নেই। পরীক্ষার আগে বারবার রিভিশন দিলে প্রিলিমিনারিতে ভালো করা সম্ভব। আর কাক্সিক্ষত ক্যাডার পেতে হলে লিখিত পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং খাতার উপস্থাপনা অবশ্যই ব্যতিক্রম হতে হবে। এজন্য প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকের উপস্থাপনা পরিহার করে নিজস্ব মেকানিজম ব্যবহার করতে পারলে বেশি নম্বর পেয়ে এগিয়ে থাকা যায়। ভাইভায় বিনয়ী এবং আত্মবিশ্বাসী থাকলে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। বিসিএসে সাফল্য আর ব্যর্থতা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাই কোনো ধাপে ব্যর্থ হলে হতাশ হওয়া যাবে না।’
রনি হাওলাদার ভবিষ্যতে নিজেকে র্যাব প্রধান হিসেবে দেখতে চান। র্যাব ফোর্সের প্রতি তার রয়েছে আলাদা প্যাশন। ব্রিটিশ পিরিয়ড থেকে এখন পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ ভীতি রয়েছে। সেই ভীতি দূর করে পুলিশ যে জনগণের সত্যিকারের বন্ধু, সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে রনি তা প্রমাণ করতে চান।
চাকরি বাজার ডেস্ক
প্যানেল