
মুহাম্মদ সাকিউর রহমান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘অফিসার (জেনারেল)’ পদে যোগ দেন। ২০০৯ সালে নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম থেকে এসএসসি এবং ২০১১ সালে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় অনুষদে ভর্তি হন। মাধ্যমিকে পড়ার সময় তিনি রেড ক্রিসেন্টে যোগ দিয়েছিলেন। যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন তখন শ্রুতিলেখক হিসেবে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর এসএসসি পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় গল্প-উপন্যাস পড়ার অভ্যাস ছিল সাকিউরের। পাশাপাশি কবিতাও লিখতেন। মুহাম্মদ সাকিউর রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে। বাবা মো. আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মা আক্তার জাহান গৃহিণী। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সেশন জটের কবলে পড়ায় বিবিএ-এমবিএ শষ করতে ফলাফল প্রকাশসহ সময় লেগেছে ৭ বছর ৮ মাস। ফলে বিসিএস একটু দীর্ঘ প্রক্রিয়া বিধায় সরকারি ব্যাংক এবং অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো পছন্দের শীর্ষে ছিল। তার মধ্যে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যতম।
সাকিউর ছাত্রজীবনে কিছু প্রবন্ধ ও দেশের বাইরের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির কাজ করায় লেখার মান কিছুটা হলেও উন্নত করতে সহায়তা করেছে। প্রস্তুতির শুরুর দিকে তিনি চট্টগ্রামে এক বড় ভাইয়ের কাছে ব্যাচে প্রতিদিন কিছু ফোকাস রাইটিং, অনুবাদ ও অন্য টপিকগুলো নিয়মিত করার চেষ্টা করতেন। সাকিউর যখন থেকে সিরিয়াসলি প্রস্তুতি শুরু করেছেন, তখন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ডিঅ্যাক্টিভ করে দিয়েছেন। কেননা এগুলোয় প্রচুর সময় নষ্ট হয়। সাকিউর বলেন, ‘এমবিএ’র শেষ ৬ মাস চার বন্ধু মিলে গ্রুপ স্টাডি করতাম এক বন্ধুর বাসায়। সপ্তাহে তিনদিন নিজেরা পড়া সিলেক্ট করে একজন আরেকজনের কাছে পড়া দিতাম। এটি আমার প্রিলিমিনারির প্রস্তুতিতে ভালো সাহায্য করেছে। প্রিলিমিনারির রেজাল্টের পর খুব বেশিদিন সময় পাওয়া যায়নি। সে সময় সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ টপিকের ফোকাস রাইটিংয়ের ওপর জোর দিয়েছিলাম। কী কী টপিক আসতে পারে, এমন একটি তালিকা ফোকাস রাইটিং ও শর্ট নোটের জন্য সাজিয়ে সেগুলোর তথ্যগুলো লিখে রাখার চেষ্টা করেছি। যে অধ্যায়গুলো থেকে গণিত বেশি আসে, সে অধ্যায়গুলোর নোট করা অংকগুলো রিভিশন দেওয়ার চেষ্টা করতাম।’ তিনি জানান, ‘এটাই আমার প্রথম ব্যাংক ভাইবা ছিল। আমার বিষয়ভিত্তিক টপিকগুলো পড়েছিলাম। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা এবং এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো দেখে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। মা-বাবা দুজনই অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমায়। কিছু কাছের বন্ধুও সব সময় সাহস জুগিয়েছে যাতে হতাশ না হই।’
নতুন যারা ব্যাংকে চাকরিতে আসতে চান, তাদের জন্য সাকিউর রহমানের পরামর্শ- ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতির জন্য অনার্সের শেষের দিক থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করলেই হবে। তবে কেউ অনার্সের শুরু থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে চাইলে আমি বলব, দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। কারও গণিতে দুর্বলতা থাকলে সে সপ্তম থেকে নবম-দশম শ্রেণির গণিত বইগুলোর ওপর দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে টিউশন করানো অনেক সাহায্য করে। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় গণিতে অনেক নাম্বার থাকে। তাই গণিত নিয়ে অবহেলা করা যাবে না। সেক্ষেত্রে বিগত ব্যাংক জবের গণিতগুলো অ্যানালাইসিস করলেই ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। প্রিলিমিনারির জন্য ইংরেজি গ্রামারের বেসিকের ওপর দখল থাকতে হবে। এ ছাড়া নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণের বইটি ভালোভাবে আয়ত্তে থাকা জরুরি। সাম্প্রতিক তথ্যের জন্য প্রতি মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়াই যথেষ্ট। অনেকে কম্পিউটারকে একটু কম গুরুত্ব দেন, কিন্তু এই বিষয়ে প্রায় ৮-১০ মার্ক থাকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায়। গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ধরে ধরে বারবার রিভিশন দিলে এই বিষয় সহজ মনে হবে।
যেহেতু প্রিলিমিনারির রেজাল্টের পর লিখিত পরীক্ষার জন্য বেশি সময় পাওয়া যায় না। তাই প্রিলি প্রস্তুতির পাশাপাশি ব্যাংক রিটেনের জন্যও একসঙ্গে পড়তে হবে। নিয়মিত পত্রিকার সম্পাদকীয় কলামগুলো পড়া। বিশেষ করে অর্থনীতি, পরিবেশ, বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ের কলামগুলো পড়া জরুরি।
ব্যাংকে মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে সাকিউর জানান, সাধারণত ভাইবা বোর্ডে নিজের বিষয় সম্পৃক্ত প্রশ্নই করে থাকে। তাই নিজের বিষয়ের মৌলিক কিছু টার্মসের সংজ্ঞা ও ধারণা থাকা জরুরি। এ ছাড়াও ব্যাংকিং রিলেটেড টার্মস এবং ব্যাংকের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানতে হবে। কেননা এ টপিক থেকেও প্রায় প্রশ্ন করা হয়। নিজের সম্পর্কে বলা, নিজ জেলা, নিজের বিষয়কে ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা, কেন ব্যাংকের চাকরিতে আসতে চান- এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরগুলো আগে থেকেই তৈরি করে নিতে হবে। সর্বোপরি, আত্মবিশ্বাসী মনোভাব নিয়ে ভাইবা বোর্ডে প্রবেশ করতে হবে। যাতে কোনো রকম জড়তা বা নার্ভাসনেস প্রকাশ না পায়। সাকিউর নিজের মেধা ও অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে দক্ষ ব্যাংকার হয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চান। এ ছাড়া তার বাবার নিজ হাতে গড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে অনেক অসহায় প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাবার মতো অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য সাকিউরও কাজ করতে চান।
চাকরি বাজার ডেস্ক