ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

ব্যাংকার হওয়ারই স্বপ্ন ছিল তাশরিফুলের

প্রকাশিত: ১৮:০৪, ২৮ মার্চ ২০২৫

ব্যাংকার হওয়ারই স্বপ্ন ছিল তাশরিফুলের

মো. তাশরিফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার সাভিয়ানগর গ্রামের সন্তান। পরিবারের অনেকেই শিক্ষক হওয়ায় শিক্ষকতার বাইরে অন্য কোনো চাকরি করার ইচ্ছা ছিল তার। বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরিরত এক বড় ভাইয়ের ইংরেজির পারদর্শিতায় মুগ্ধ হয়ে তারও ইচ্ছা হয় ইংরেজিতে এমন দক্ষতা অর্জনের এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করার। অনার্সের শেষের দিকে বিসিএস নিয়ে প্রচুর ফ্যাসিনেশন কাজ করত। অনেক পড়াশোনা করে ৪০তম বিসিএসে প্রথমবার অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। এরপর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য পরীক্ষা দিয়ে ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতায় যোগদান করেন। কিছুদিন পরই করোনার প্রকোপে স্কুলের একাডেমিক কার্যকর স্থগিত হয়ে যায়। এ সময়ই ব্যাংক নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবতে থাকেন।
তাশরিফুলের বাবা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি না পাওয়ায় বাবার তত্ত্বাবধানে আবারও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে বৃত্তি পান। এরপর ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাবার প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা-ই-মিরাণীয়া কচুয়া দরবার শরীফ দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন এবং দাখিল (এসএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ঢাকার ডেমরার দারুন নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি) পাস করেন। এরপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন।
মো. তাশরিফুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার (জেনারেল) পদে চাকরি পেয়েছেন। এর আগেও ৪টা সরকারি চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি, কিন্তু একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকার হওয়ার আমন্ত্রণের সংবাদটা ছিল অন্যরকম। এটা কেবলই অনুভব করা যাবে, ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’
করোনার শুরু থেকেই তাশরিফুল ভাবলেন প্ল্যান বি ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে। এজন্য যা কিছু করা লাগে এই করোনার ভেতরেই করতে হবে। স্কুল খুলে ফেললে আর পড়াশোনার সুযোগ পাবেন না। এরপর নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করলেন ব্যাংক নিয়ে। ১২-১৪ ঘণ্টা করে ব্যাংকের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার জন্য একসঙ্গে সময় দিতেন। পুরো সময়টা সর্বোচ্চ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। তাশরিফুল বলেন, ‘আমি শুধু একটা কথাই মাথায় রাখতাম, জীবনের কোনো পর্যায়ে গিয়ে যেন আমার মনে না হয়, আরেকটু পরিশ্রম বেশি করলে হয়তো একটা চাকরি পেয়ে যেতাম। কোথাও চাকরি না পেলেও নিজের কাছে যেন নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’ সবকিছুর পেছনে তার বাবার অবদানকে তিনি নিঃসন্দেহে সর্বোচ্চ ভাবেন। তিনি বলেন, ‘বাবার একমাত্র কথা ছিল, পড়াশোনা ঠিক রেখে যা কিছু করার করবা। মা খেয়াল রাখতেন কোথাও যেন কোনো সময় অপচয় না হয়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পেতে নতুনদের প্রস্তুতি সম্পর্কে তাশরিফুলের পরামর্শÑ বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ জায়গা। আমাদের সময়ে প্রায় দুই লাখ আবেদনকারী থেকে ২০০ জন বাছাই করা হয়। এখানে ‘বাদ দেওয়া সম্ভব নয়’ এমন প্রার্থী থাকে অন্তত এক হাজারের ওপরে। তাদের কোনো ক্রাইটেরিয়াতেই বাদ দেওয়া যাবে না। তারপরও ২০০ কিংবা ১০০ জন বাছাই করা হয়। তাই নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে এবং নিজের জন্য নিজের সর্বোচ্চ ত্যাগ, নিজের পড়াশোনার প্রতি অগ্রাধিকার আর পড়াশোনাটা সঠিক পথে আগাচ্ছে কি না সেই দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। নিজের দুর্বলতা বুঝে সেখানে বেশি সময় দেওয়া জরুরি। বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষায় বেশি জোর দেওয়া উচিত।
মো. তাশরিফুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকে থেকে নিজের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ সম্পাদন করতে চান। পাশাপাশি একটা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করারও ইচ্ছা আছে। তাশরিফুল এগিয়ে যাক তার স্বপ্নের পথে।

চাকরি বাজার ডেস্ক

×