
‘প্রথম হওয়ার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম। আশা ছিল ভালো কিছু হবে, প্রথম হয়ে যাব এমনটা ভাবিনি। তাই প্রথম হওয়ায় আশ্চর্য হয়েছিলাম। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া সবকিছুর জন্য’- বলছিলেন ৪০তম বিসিএস- এ আবগারি ও শুল্ক ক্যাডারে প্রথম হওয়া মো. সাকিব হোসেন। গোপালগঞ্জের সাকিব বাবার চাকরির সুবাদে পড়াশোনা করেছেন যশোরে। ২০০৯ সালে যশোরের পুলিশ লাইনস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ২০১১ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল (ইইই) বিভাগ থেকে ২০১৭ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বাবা জনতা ব্যাংকে চাকরি করতেন। যে কারণে সরকারি চাকরির প্রতি ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু বিসিএস ক্যাডার হওয়ার চিন্তা আসে বুয়েট থেকে বের হওয়ার পর। এখান থেকে পাস করে অনেকেই দেশের বাইরে চলে যান। সাকিব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশেই থাকবেন। সে ভাবনা থেকেই নেন বিসিএস প্রস্তুতি। সাকিব সবচেয়ে বেশি প্রেরণা পেয়েছিলেন মা-বাবার কাছ থেকে। বুয়েট ক্যাম্পাসের বড় ভাই যাঁরা বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মরত, তাঁরাও অনুপ্রাণিত করেছেন। সাকিব বলেন, ‘আগে একটা ট্রেন্ড ছিল, অনেকে বিদেশ গিয়ে স্থায়ী হতে চাইতেন। কিন্তু বিসিএসের মাধ্যমে ভালো চাকরি ও সম্মান পাওয়া যায় বলে এখন ট্রেন্ড বদলেছে।’
বিসিএস একটি লম্বা জার্নি
সাকিব ৪০তম বিসিএসের জন্য আবেদন করেন ২০১৮ সালে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি হয়ে যায়। পোস্টিং ছিল ভোলা পাওয়ার প্ল্যান্টে। শিফটিং ইনচার্জ হিসেবে অনেক দায়িত্ব থাকায় পড়াশোনা করার তেমন সুযোগ ছিল না। তাই চেষ্টা করতেন নাইট ডিউটি করার। কারণ রাতে কাজের তেমন চাপ থাকে না। তাই কন্ট্রোল রুমে বই নিয়ে যেতেন। ডিউটির সময় সারা রাত যতটুকু সম্ভব পড়ার চেষ্টা করতেন। এ ক্ষেত্রে তার সহকর্মীরা তাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। লিখিত পরীক্ষার আগে তেমন কিছু পড়া ছিল না। মাত্র ২৩ দিন সময় পেয়েছিলেন। ইংরেজি ও গণিত তেমন পড়তে পারেননি। তখন বিশ^বিদ্যালয়ের ৩৮তম বিসিএসের কয়েকজন বিসিএস ক্যাডার ও তার মেন্টরদের সহযোগিতায় যতটুকু সম্ভব প্রস্তুতি নেন। মৌখিক পরীক্ষার সময় পোস্টিং ঢাকায় ছিল। তখন নিয়মিত পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তা ছাড়া সিনিয়রদের কাছ থেকে পরামর্শও নিয়েছেন। সাকিব জানান, ‘বিসিএস একটি লম্বা জার্নি। পুরো জার্নিতে আমি যথাসম্ভব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসার চেষ্টা করেছি।’
প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি
পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে সাকিব বলেন, ‘সময় বেশি থাকলে প্রিলিমিনারির পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার সঙ্গে যেসব বিষয়ের মিল রয়েছে, সেগুলো পড়তে হবে। যেমন বাংলা সাহিত্য, আইসিটি, বিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। আর সময় কম থাকলে বাজার থেকে ভালো মানের ডাইজেস্ট নিয়ে পড়লে হবে। পাশাপাশি বিগত বছরের পিএসসির প্রশ্নগুলোর সমাধান করা। এতে প্রশ্ন সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। বাংলা ২য় পত্রের জন্য নবম-দশম শ্রেণির বই। ইংরেজি ও গণিতের জন্য ডাইজেস্ট ফলো করা। তা ছাড়া বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়লে বেশ কিছু জানা যায়। নিয়মিত লেখাপড়া করলে কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হবেন।’
লিখিত পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু
সাকিব জানান, ‘লিখিত পরীক্ষা ক্যাডার পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লিখিত ও ভাইভার নম্বরের ওপর ভিত্তি করে ক্যাডার আসে। মোট ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে নম্বর বেশি তোলার সুযোগ রয়েছে, সেগুলোতে ফোকাস করতে হবে। ইংরেজিতে ভালো করার জন্য ইংরেজি পত্রিকা পড়তে হবে। বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। বাংলার জন্য সাহিত্য ও ব্যাকরণ জানতে হবে। মানসিক দক্ষতা নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। আন্তর্জাতিক এ সমসাময়িক বিষয় থেকেও সংজ্ঞা টাইপের কিছু প্রশ্ন আসে। এগুলোর জন্য বাজারে প্রচলিত বই ফলো করলেই হবে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে টপিক অনুযায়ী সিলেবাস শেষ করে যেতে হবে।
ভাইভাতে যা জরুরি
সাকিবের মতে, ভাইভার ক্ষেত্রে সমসাময়িক বিষয়াবলি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। নিজ জেলা, নিজ পঠিত বিষয়, নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান সম্পর্কে জানতে হবে। ক্যাডার চয়েজের ক্ষেত্রে প্রথম দুটি ক্যাডার চাকরির বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। ভাইভার সময় কথা বলা, বাক্য উচ্চারণ ও পরিপাটি থাকায় সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া ভাইভা বোর্ডে ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা থাকলে ভালো হয়। পাশাপাশি সব সময় আত্মবিশ্বাসী ও বিনয়ী থাকতে হবে।
চাকরি বাজার ডেস্ক