
.
এফসিপিএস এক কঠিন পরীক্ষার নাম। তবু বিসিএস ও এফসিপিএস, দুটো পরীক্ষার প্রস্তুতি একসঙ্গে নিয়েছিলেন উর্মিতা দত্ত। তখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রশিক্ষণার্থী হিসেবেও কাজ করতেন। সব মিলিয়ে দম ফেলার সময় ছিল না। এর মধ্যেও যতটুকু সময় পেয়েছেন, ততটুকুই কাজে লাগিয়েছেন। উর্মিতা বলেন, ‘আমার মনে হতো, ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায় থাকলে তো মানুষ কত অসম্ভবকেই সম্ভব করতে পারে। আমি কেন পারব না? শেষ পর্যন্ত পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। এফসিপিএস (পার্ট ওয়ান) পরীক্ষায় পাস করেছি প্রথমবারেই। ৩৭তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারেও প্রথম হয়েছি।’
যশোরের মেয়ে উর্মিতা দত্ত বড় হয়েছেন ঢাকায়। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হতে এমবিবিএস পাশ করেন কৃতিত্বের সাথে।
গণিতের জন্য ভালোবাসা
ছোটবেলা থেকেই গণিত তার সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। তার মনে হতো জগতের সব সৌন্দর্য, সব রহস্য লুকিয়ে আছে অঙ্কের ভেতর। উর্মিতা দত্ত জানান, ‘স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ব, প্রকৌশলী হব। বুয়েট আর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজÑ দুটোতেই যখন পড়ার সুযোগ পেলাম, মা-বাবা বললেন ‘আমাদের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যেহেতু কোনো চিকিৎসক নেই, তুমি বরং মেডিক্যালেই পড়ো।’ অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলাম। ক্লাসে অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রির মতো কঠিন বিষয়গুলো মন খারাপ করে পড়তাম। একদিন ফিজিওলজি ক্লাসে ম্যাডাম বোঝালেন, প্রতিটা অঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্তসঞ্চালনের জন্য মিনিটে কত বার হৃৎপিণ্ডকে ‘পাম্প’ করতে হবে, কিডনি কতটুকু তরল ছেঁকে বের করে দেবে, একটি মাত্র কোষ থেকে কীভাবে ভ্রƒণ তৈরি হবে, লাখ লাখ কোষের মানবদেহ কীভাবে ক্রমবিভাজনের মাধ্যমে পরিণত হবে- এই সবই পরিচালিত হচ্ছে অঙ্কের সূত্র মেনে। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, চিকিৎসাবিজ্ঞান তো আসলে অঙ্কের কারখানা! ম্যাডামের কথাগুলো আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিল। অঙ্কের মতো বুঝে বুঝে ফিজিওলজি পড়া শুরু করলাম।’
বুঝে পড়ার আনন্দ
উর্মিতা নিউরোসার্জারিতে এমএস করেছেন। তিনি জানান, ‘নিউরোসার্জারি বেছে নেওয়ার পেছনে কয়েকটা কারণ আছে। আমি সব সময় গতানুগতিকের বাইরে কিছু করতে চাইতাম। ইন্টার্নির সময় লক্ষ্য করেছি, এই বিভাগে রোগীর তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা কম। মনে হতো, এক্ষেত্রে নতুন অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। মানবদেহের সবচেয়ে জটিল আর রহস্যময় অঙ্গ হলো মস্তিষ্ক। তাই মস্তিষ্ক নিয়ে কাজ করার একটা অন্য রকম রোমাঞ্চ আছে। এই রোমাঞ্চ আমি সারা জীবন পেতে চেয়েছি। প্রথম দিকে ভাবতাম, বিসিএস দেব না। কিন্তু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে কাজ করার সময় বুঝলাম, সরকারি ডাক্তার হলে হাতে-কলমে কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি থাকে। আরও বেশি শেখার এই সুযোগ আমি হাতছাড়া করব কেন? এফসিপিএস আর বিসিএসÑ দুটো পরীক্ষার প্রস্তুতি একেবারে আলাদা। অনেক কষ্ট হয়েছে, তবু হাল ছাড়িনি।’
উর্মিতার মতে, যে কোনো পরীক্ষায় ভালো করার পূর্বশর্ত হলো বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা। পরীক্ষক কী জানতে চাচ্ছেন, আর আমি কী বলছি বা লিখছি, দুটো বিষয়ের সামঞ্জস্য করতে পারলে কোনো পরীক্ষাই আর কঠিন থাকে না।
বিশেষ বিসিএসের পরীক্ষার্থীদের জন্য ৫ পরামর্শ
১. সময় খুব কম- এটা ভেবে উদ্বিগ্ন বা অস্থির হওয়ার কিছু নেই। যে সময়টা হাতে আছে, সেটারই সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে।
২. বিশেষ বিসিএসে ১০০ নম্বর থাকবে চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক প্রশ্নে। মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে আছে অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি ও ফার্মাকোলজি।
৩. ‘ক্লিনিক্যাল’ বিষয়গুলো থেকে কিছু কিছু প্রশ্ন আসার কথা। এ ক্ষেত্রে বলব, নতুন করে খুব বেশি কিছু পড়ার দরকার নেই। নিজের অভিজ্ঞতার ওপর ভরসা করুন।
৪. চিকিৎসা বিজ্ঞান ছাড়া অন্য বিষয়গুলো থেকে ১০০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। গণিত আর বুদ্ধিমত্তার প্রশ্নগুলোর জন্য আগের বছরের সমস্যাগুলো সমাধান করাই যথেষ্ট। বাংলা আর ইংরেজি- দুটোতেই জোর দিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবারই কিছু বিষয় থেকে প্রশ্ন থাকে, এগুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। যেমন- সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, সাম্প্রতিক কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়। আর আন্তর্জাতিক বিষয়ের পরিধিটা এত বড় যে এই অল্প সময়ে সব পড়ে শেষ করা সম্ভব না। বেছে বেছে পড়তে হবে।
সরকারি চাকরি দিয়ে পেশাজীবন শুরু করে দেশের মানুষের পাশে থাকার ইচ্ছা উর্মিতার। শল্যচিকিৎসায় গবেষণার ব্যাপারেও রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।
ভবিষ্যতে নিউরোসার্জারিতে দেশের বাইরে থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছে আছে উর্মিতার।
উর্মিতা বলেন, সর্বোপরি নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন, স্রষ্টার ওপর ভরসা রাখুন। চাপমুক্ত থাকুন। দিন শেষে এটা শুধুই একটা পরীক্ষা। আপনার সাফল্য কামনা করি।
চাকরি বাজার ডেস্ক