বায়িং হাউজের মার্চেন্ডাইজাররা বিদেশী ক্রেতা বা বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রোডাক্ট বিক্রি বা পোশাক তৈরির অর্ডার নেন। বিদেশী বায়ারকে কাক্সিক্ষত প্রোডাক্টের কয়েকটি নমুনা দেখানো হয়। পাশাপাশি প্রোডাক্ট তৈরির উপকরণ, মান, বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ বায়ারের কাছে তুলে ধরা হয়। বায়ার সেম্পল দেখে পছন্দ করলে দামের ব্যাপারটি চূড়ান্ত করেন। এরপর প্রোডাক্টের সংখ্যা, শিপমেন্টের সময় ও দরদাম উল্লেখ করে উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়। বায়ারের চাহিদা অনুযায়ী মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে কি না তা মার্চেন্ডাইজারকেই নিশ্চিত করতে হয় এবং প্রোডাক্ট তৈরি থেকে শুরু করে শিপমেন্ট পর্যন্ত পুরো কাজ মার্চেন্ডাইজারকেই দেখভাল করতে হয়।
যেসব দক্ষতার প্রয়োজন
একজন মার্চেন্ডাইজ ম্যানেজার জানান, বায়িং হাউসগুলোই মূলত দেশের গার্মেন্টস এবং বিদেশী বায়ারদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে ভূমিকা পালন করে। তাই মার্চেন্ডাইজারকে ইংরেজিতে কথোপকথন ও যোগাযোগে পারদর্শী হতে হয়। পাশাপাশি অন্য আরও যত ভাষা জানা থাকবে, প্রার্থীকে ততটাই যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আর কম্পিউটার সম্পর্কিত দক্ষতা থাকতে হবে।
নিয়োগ যেভাবে
অনলাইন জব পোর্টাল ও প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এরপর হয় সরাসরি ভাইভা, নয়তো প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার পর ভাইভার জন্য ডাকা হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান একাধিক ধাপে ভাইভা নেয়। একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, এন্ট্রি লেভেলে নিয়োগে প্রার্থীর স্মার্টনেস ও ইংরেজিতে যোগাযোগের দক্ষতাই প্রথমে দেখা হয়। নিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষ, টেক্সটাইল কিংবা অ্যাপারেলস পড়া প্রার্থীরাই অগ্রাধিকার পান।
৬ থেকে ১২ মাসের কোর্স
স্নাতক শেষে মার্চেন্ডাইজিংয়ের ওপর ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদি কোর্স করা যায়। ভর্তির সুযোগ সাধারণত বছরে দুইবার (ডিসেম্বর/জানুয়ারি ও জুন/জুলাই)। কোর্স শেষে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নি করারও সুযোগ আছে। ১ বছরের ডিপ্লোমা ইন অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং কোর্সের খরচ প্রতিষ্ঠানভেদে ৪৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা। আর ৬ মাসের সার্টিফিকেট কোর্স ইন অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ের খরচ পড়বে ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সবচেয়ে ভালো হয় ‘এমবিএ ইন প্রোডাক্ট অ্যান্ড ফ্যাশন মার্চেন্ডাইজিং’ (১-২ বছরের কোর্স, খরচ দেড় থেকে তিন লাখ টাকা) করতে পারলে। কোর্সে ওভেন, নিট ও সোয়েটারের ওপর থিওরিটিক্যাল ক্লাসের পাশাপাশি প্রাকটিক্যাল ক্লাসও নেওয়া হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের কোর্সের সঙ্গে স্পোকেন ইংলিশ ও কম্পিউটার কোর্সও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সুযোগ সুবিধা
একেবারে নতুন বা অনভিজ্ঞ প্রার্থীকে অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে পদোন্নতি দেওয়া হয়। শুরুতেই একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজারের বেতন সাধারণত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধরা হয়। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষতা-অভিজ্ঞতাভেদে সিনিয়রদের বেতন লাখেরও বেশি হতে পারে। সিনিয়র কর্মকর্তাদের গাড়ি-বাড়িসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। অনেক সময় দেখা যায়, একজন মার্চেন্ডাইজার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেই বায়িং হাউজ কিংবা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন।
বায়িং হাউসের কাজের ধরন
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে বায়িং হাউজগুলোতে সাধারণত দুই ধরনের কাজ হয়। ১. লিয়াজোঁ অফিস হিসেবে সরাসরি বায়ারের পক্ষে কাজের তদারকি করে। ২. ট্রেডিং হাউজ হিসেবে এক বা একাধিক বায়ারের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার নিয়ে উপযুক্ত কারখানা থেকে তা প্রোডাকশন করে। চাহিদা অনুসারে উভয়ই ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে প্রাইস নেগোসিয়েশন, অর্ডার ফলোআপ, শিপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট, পেমেন্ট ফলোআপ, কোয়ালিটি কন্ট্রোলের কাজ করে।
প্রার্থী বাছাইয়ে যা যা দেখা হয়
এন্ট্রি লেভেলে স্মার্টনেস ও ইংরেজিতে যোগাযোগের দক্ষতাই প্রথমে দেখা হয়। এ ছাড়া কম্পিউটারে কাজের পারদর্শিতার পাশাপাশি দায়িত্বশীলতা কেমন- সেটাও দেখা হয়।
মার্চেন্ডাইজার কেন হবেন
সহজভাবে কোনো পণ্য কিনে তা আবার বিক্রি করাকে মার্চেন্ডাইজিং বলে। কাজটি যিনি করেন তাকে মার্চেন্ডাইজার বলা হয়। বিভিন্ন দেশে একজন মার্চেন্ডাইজার নানা ধরনের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করলেও বাংলাদেশে মূলত রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প নিয়েই কাজ করেন। গার্মেন্টস সামগ্রীর অর্ডার থেকে শুরু করে বিদেশে চালান দেওয়া পর্যন্ত সব ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব মার্চেন্ডাইজারই করেন।
চাকরি বাজার ডেস্ক