.
সাফানুর সিফাত, ছোট বেলায় ইঞ্জেকশন প্রচণ্ড ভয় পেলেও সাদা এপ্রোন আর স্টেথেস্কোপের ওপর ভীষণ আকর্ষণ ছিল। ছোট থেকেই মাথায় ঘুরত বড় হয়ে ডাক্তার হবে। লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো থাকলেও দুরন্তপনার জন্য সেভাবে পড়া হতো না। ফলে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটা তার স্বপ্নই রয়ে গেল। ভর্তি পরীক্ষার আগে মেডিক্যালের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে ভার্সিটির প্রস্তুতিটা সেভাবে নিতে পারেননি। পরবর্তীতে ব্যাংকার হিসেবে নিজের একটা পরিচিতি করতে
পেরেছে সিফাত। কিভাবে পেরেছেন সে বিষয়েই কথা বলে জানাচ্ছেন
চাকরি বাজার প্রতিবেদক- শিউলী আহমেদ
সিফাত বলেন, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। আমার ইচ্ছা পূরণের জন্য আব্বু-আম্মু হয়তো কষ্ট হলেও প্রাইভেটে পড়াতেন, কিন্তু ইচ্ছে হয়নি। তাই ভর্তি হলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয় পেলাম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং। ফাইন্যান্স পড়তে খারাপ লাগত না। কিন্তু কখনো ব্যাংকিংয়ে ইন্টারেস্ট পাইনি। পড়তে পড়তে ভাবলাম একটা ভালো কোম্পানির ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টে জব করব। কিন্তু আল্লাহ আমার জন্য অন্য কোনো পরিকল্পনা রেখেছিলেন। একটা এমএনসিতে ইন্টার্নশিপ করার সময় পড়াশোনার পাশাপাশি জব খুঁজছিলাম। তখন একদিন আইএফআইসি ব্যাংকের জব সার্কুলার দেখে দরখাস্ত করি। আবেদন করার পর ৫টা ধাপ পেরিয়ে চাকরিটা পেয়েও যাই। তখন নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে আর ফ্যামিলিকে একটু সাপোর্ট দিতে এই চাকরিটা আমাকে ভীষণ সাহায্য করেছে। এভাবেই ইচ্ছা না থাকলেও শেষ পর্যন্ত একজন ব্যাংকারই হলাম।
প্রশ্ন: আবেদন করার পরের ৫টি ধাপ- কী কী, আর কিভাবে সেগুলোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
উত্তর: প্রথমে ছিল প্রিলিমিনারি। সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তাই এটা পার করতে খুব বেশি কষ্ট হয়নি। এরপর ছিল প্রাথমিক ভাইভা, সেখানে আমার সাবজেক্ট রিলেটেড প্রশ্ন করেছিল। ফাইন্যান্স আর ব্যাংকিং নিয়েই পড়াশোনা করায় এই ধাপটাও পার হয়ে যাই। মজার ব্যাপার হলো ভাইভায় আমাকে IFIC- এর পূর্ণরূপ জিজ্ঞেস করেছিল। কিন্তু আমি বলতে পারিনি, তাও আমাকে নেওয়ায় সেটা একটা বিস্ময় আমার কাছে। এরপর ছিল লিখিত পরীক্ষা। গণিত আর ইংরেজিতে মোটামুটি ভালো ছিলাম। তাই এটা পার করতেও কষ্ট হয়নি খুব একটা। লিখিত পরীক্ষার পর ছিল কম্পিউটার টেস্ট। এই টেস্টটা খুব ভালো দেইনি, টাইম লিমিট দেওয়া থাকায় আর বুঝতে না পারার জন্য পুরোটা উত্তর করতে পারিনি। এর পর ভয়ে ছিলাম যে চাকরিটা বুঝি আর হলো না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এই ধাপও উৎরে গেলাম। তারপর এলো ফাইনাল ভাইভা।
প্রশ্ন: ফাইনাল ভাইভায় কী কী প্রশ্ন করেছিল, আর কিভাবে উত্তর দিয়েছেন?
উত্তর: মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা। চেহারায়, কথায়, ভাবে পুরাই গুরুগম্ভীর। জিজ্ঞেস করলেন, বাসা কোথায়, বাসায় কে কে থাকে, বাবা কি করেন, বাবার মাসিক আয় কত, মা কি করেন, ঢাকার বাইরে যাব কিনা? আইএফআইসিতে জব কেন করতে চাই? পড়াশোনার বিষয় সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন করেননি। বলেছি, ঢাকার বাইরে যেতে আপত্তি নেই, ওটা তো আমার চাকরিরই অংশ। আর আইএফআইসিতে কেন জব করতে চাই- প্রথম কারণ আমি এই মুহূর্তে একটা চাকরি খুঁজছি এবং আইএফআইসি জব অফার করেছে। দ্বিতীয় কারণ হলো আইএফআইসি একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক, এখানে জব করাটা আমার ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক হবে। এসব জিজ্ঞেস করার পর জিজ্ঞেস করলেন, ‘what is your father?’ আমি ভয়ে তালগোল পাকিয়ে বাবা কি করেন না বলে বাবার নাম বলেছি। স্যার মুচকি হেসে আবার প্রশ্নটা করলেন। তখন আমার হুঁশ হলো। বাসায় এসে ভাবলাম শেষ, এই চাকরি আর আমার কপালে নেই। কিন্তু কয়দিন পর ম্যাসেজ পাই আমি আইএফআইসি ব্যাংকের ‘টিএসও’ পদের জন্য সিলেক্টেড। যারা ব্যাংকে চাকরি করতে চান তাদের জন্য সিফাত বলেন, ‘বাণিজ্যের বিষয়গুলো ব্যাংকের চাকরির জন্য বেশি সহায়ক। তবে অন্য বিষয় হলেও সমস্যা নেই। শুধু সেই বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। আর অবশ্যই গণিত, ইংরেজি আর আইসিটিতে ভালো হতে হবে। ব্যাংকের প্রশ্নগুলো ইংরেজিতে হয়। প্রয়োজন কঠোর অধ্যবসায়, দৃঢ় মনোবল আর আত্মবিশ্বাস। তাহলে দিন শেষে আপনিও নিজেকে একজন ব্যাংকার হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন।’