
আপনি কি জানেন, আমাদের পরিচিত সাত মহাদেশের বাইরেও পৃথিবীর বুকে আরেকটি মহাদেশ লুকিয়ে আছে? একে বলা হয় "জিল্যান্ডিয়া" (Zealandia),একটি বিস্ময়কর, ডুবে যাওয়া ভূখণ্ড, যা দীর্ঘদিন বিজ্ঞানীদের চোখের আড়ালে ছিল!এই হারিয়ে যাওয়া মহাদেশ একসময় ভূমির ওপরে থাকলেও, সময়ের সাথে সাথে এটি সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে গেছে। তবে, আধুনিক বিজ্ঞান ও গবেষণার ফলে জিল্যান্ডিয়া এখন নতুনভাবে আবিষ্কৃত হচ্ছে।
এটি একসময় গর্বের সঙ্গে স্থলভাগে অবস্থান করলেও, আজ ৯৪% পানির নিচে নিমজ্জিত। তবুও, পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন সংযোজন হিসেবে জিল্যান্ডিয়া এক রহস্যময় অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।চলুন, এই অষ্টম মহাদেশ সম্পর্কে বিস্তারে জানি এবং আবিষ্কার করি এর রোমাঞ্চকর ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য এবং গুরুত্ব!
জিল্যান্ডিয়ার আবিষ্কারের গল্প
অনেক বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা আন্দাজ করছিলেন যে নিউজিল্যান্ড এবং নিউ ক্যালেডোনিয়া একসময় বৃহৎ কোনো ভূখণ্ডের অংশ ছিল। কিন্তু সেটি আদৌ কি একটি স্বতন্ত্র মহাদেশ ছিল?
১৯৯৫ সালে ভূতত্ত্ববিদ ব্রুস লুয়েনডাইক (Bruce Luyendyk) প্রথমবারের মতো "জিল্যান্ডিয়া" শব্দটি ব্যবহার করেন। তার গবেষণায় উঠে আসে, এটি একসময় গন্ডওয়ানাল্যান্ড (Gondwanaland) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
এরপর, ২০১৭ সালে, ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল নিশ্চিত করেন যে জিল্যান্ডিয়া সত্যিকার অর্থেই একটি স্বতন্ত্র মহাদেশ। তাদের গবেষণা প্রকাশিত হয় Geological Society of America-তে, যেখানে তারা চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে এটি মহাদেশের মর্যাদা দেয়:উঁচু ভূখণ্ড ও ভূতাত্ত্বিক স্বতন্ত্রতা,একটি স্বতন্ত্র ভূত্বকের উপস্থিতি,বড় ভূখণ্ড হিসেবে পর্যাপ্ত অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত থাকা,টেকটোনিক স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীন গতিশীলতা।
এভাবে, কয়েক দশকের গবেষণা এবং নতুন প্রযুক্তির সহায়তায় বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন।
জিল্যান্ডিয়ার অবস্থান ও আকার
জিল্যান্ডিয়া প্রায় ৪.৯ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, যা ভারতীয় উপমহাদেশের চেয়েও বড়! এটি প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে নিউজিল্যান্ড ও নিউ ক্যালেডোনিয়ার চারপাশে বিস্তৃত। তবে, আশ্চর্যের বিষয় হলো—এই ভূখণ্ডের মাত্র ৬% স্থলভাগের ওপরে দৃশ্যমান। মূলত নিউজিল্যান্ড, নিউ ক্যালেডোনিয়া, এবং অ্যান্টিপোডস দ্বীপপুঞ্জ হল জিল্যান্ডিয়ার দৃশ্যমান অংশ।
কীভাবে জিল্যান্ডিয়া পানির নিচে তলিয়ে গেল?
জিল্যান্ডিয়া প্রায় ৮০ থেকে ১০০ মিলিয়ন বছর আগে গন্ডওয়ানাল্যান্ড থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি টেকটোনিক প্লেটের ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হয়। ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় ভূমির স্তর পাতলা হতে শুরু করে এবং কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে এটি সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যায়। তবে, আজও নিউজিল্যান্ড ও আশেপাশের দ্বীপগুলো এই মহাদেশের অবশিষ্ট অংশ হিসেবে টিকে আছে।
জিল্যান্ডিয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এটি শুধুমাত্র ভূতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য নয়, বরং ভূ-প্রাকৃতিক ইতিহাস বোঝার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিল্যান্ডিয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন—কীভাবে মহাদেশীয় টেকটোনিক প্লেট কাজ করে এবং কীভাবে সময়ের সাথে সাথে ভূখণ্ডের পরিবর্তন ঘটে।
এছাড়া, জিল্যান্ডিয়ার ভেতরে প্রচুর খনিজ সম্পদ, তেল ও গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে।
জিল্যান্ডিয়া নিছক কোনো কল্পকাহিনি নয়, এটি বাস্তবতার একটি লুকানো অধ্যায়! যদিও এটি বেশিরভাগই সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গেছে, তবুও এটি পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে।
ভবিষ্যতে আরও গবেষণা করলে হয়তো এই রহস্যময় মহাদেশ সম্পর্কে আরও আকর্ষণীয় তথ্য জানা যাবে। বিজ্ঞানীরা এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে এই মহাদেশের ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য ও ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যায়।
সূত্র:https://tinyurl.com/m7whcdhk
https://tinyurl.com/47ryykh7
আফরোজা